নিজস্ব প্রতিনিধি: লক্ষ্য ছিল নবান্ন(Nabanna) দখল। কিন্তু একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বাংলার মানুষই বাংলাকে(Bengal) ফের তুলে দিয়েছেন বাংলার মেয়ের হাতেই। আর সেই রাগেই বাংলাকে কার্যত ভাতে মারার ছক কষেছিল গেরুয়া শিবির। প্রথমেই সেই জন্য আটকে দেওয়া হয়েছিল ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের(100 Days Work Project) টাকা। সেই খাতেই কেন্দ্রের কাছ থেকে বাংলার এখন বকেয়া ৬ হাজার কোটি টাকা। শুধু তাই নয়, চলতি অর্থবর্ষের ১০ মাস কেটে গেলেও ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে এখনও কোনও বরাদ্দ পায়নি বাংলা। তার জেরে ধাক্কা লেগেছে গ্রামীণ অর্থনীতিতে(Rural Economy) । বিশেষ করে যারা ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে কাজ করে দিন গুজরান করতেন তাঁরাই সব থেকে বেশি ধাক্কা খেয়েছেন। আর তার জেরেই এখন দেখা যাচ্ছে গ্রাম বাংলায় কার্যত ব্রাত্য হয়ে গিয়েছে পদ্মশিবির। তৃণমূলকে(TMC) টাইট দিতে গিয়ে এখন গ্রাম বাংলায় নিজেরাই একঘরে হয়ে পড়েছে বিজেপি(BJP)। এর প্রভাব যে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে বেশ ভাল ভাবেই পড়তে চলেছে সেটা বুখেই এখন দলের নেতা থেকে কর্মীদের থেকে থেকেই খালি লোকসভা ভোটের কথা বলে ভোকাল টনিক দিচ্ছেন বঙ্গ বিজেপির নেতারা। নিজেরা মুখে একবারের জন্যও তাঁরা পঞ্চায়েত ভোটের কথা আনছেন না।
আরও পড়ুন সর্বনাশ! বাংলাতেও থাবা চিনে তাণ্ডব চালানো করোনার বিএফ.৭ উপরূপের
১০০দিনের কাজের প্রকল্পের টাকা কেন্দ্র সরকার আটকে দেওয়ায় বেশ কিছু প্রকল্পের কাজও আটকে গিয়েছে। কেননা ১০০ দিনের কাজের টাকা থেকেই আবাস যোজনা, অমৃত সরোবর, ক্লাস্টার ফেসিলিটেশন প্রজেক্টের মজুরি মেটানো হয়। টাকা আটকে রাখায় কেন্দ্রেরই এই প্রকল্পগুলির কাজ থমকে রয়েছে। তার জেরে কেন্দ্রের গ্রামকেন্দ্রিক উন্নয়ন কর্মসূচিগুলির বাইরেই থেকে যাচ্ছে বাংলার পঞ্চায়েতগুলি। শুধু আবাস প্রকল্পের দিকেই চোখ দিলে বোঝা যাবে বাংলার মানুষ কীভাবে বঞ্চিত হচ্ছেন। আবাস সহ মোট চারটি প্রকল্পে মজুরি দেওয়া হয় ১০০ দিনের কাজের তহবিল থেকে। ফলে লাগাতার বঞ্চিত হচ্ছেন রাজ্যের ১ কোটি ৮ লক্ষ জব কার্ড হোল্ডার। উদ্বেগের বিষয় হল, নতুন জব কার্ড নেওয়ার চাহিদাও রাজ্যে দ্রুত কমছে। এসব বিষয় বিস্তারিত জানিয়ে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের সচিবকে সম্প্রতি চিঠি পাঠিয়েছে নবান্ন। রাজ্যের বক্তব্য, ১০০ দিনের কাজ প্রকল্প নিয়ে কেন্দ্র ১০টি বিষয়ে জানতে চেয়েছিল। প্রতিটির তথ্য সহ জবাব নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দেওয়া হয়েছে। এমনকী ১৫ জেলায় কেন্দ্রীয় টিমের পর্যবেক্ষণের পর ‘অ্যাকশন টেকেন রিপোর্ট’ (এটিআর) পাঠানো হয়েছে নিয়ম মেনে। তাই বকেয়া ৬ হাজার ৭৮৪ কোটি ৮৭ লক্ষ টাকা অবিলম্বে ছেড়ে দেওয়া হোক।
আরও পড়ুন কেন্দ্রের অবহেলা, মুড়িগঙ্গা ব্রিজ বানাবে রাজ্য: মমতা
আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে ১১ লক্ষ বাড়ি তৈরির টার্গেট বেঁধে দিয়েছে কেন্দ্র। আবাস প্রকল্পের উপভোক্তারা প্রত্যেকে বাড়ি তৈরির জন্য ১০০ দিনের কাজের তহবিল থেকে ৯০ থেকে ৯৫ দিনের মজুরি পান। কাজেই কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা না এলে ওই মজুরি বাবদ অর্থ দেওয়া অসম্ভব। বিগত বছরগুলিতে এই একই কারণে কয়েক হাজার আবাস উপভোক্তার মজুরি মেটানো যায়নি। চিঠিতে সেকথাও উল্লেখ করেছে নবান্ন। সব মিলিয়ে গোটা বিষয়টি পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে বিজেপিকে বড়সড় বিপাকে ফেলে দিয়েছে বলেই এখন মনে করছেন রাজ্যের আদি বিজেপি নেতারা। তাঁদের দাবি, এভাবে টাকা আটকে রেখে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কার্যত বাংলার আমজনতাকে বিজেপির বিরুদ্ধেই ক্ষেপিয়ে তুলছেন। এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্বও। কেননা তাঁরা নানান সময়ে দেলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে মিথ্যা রিপোর্ট দিয়ে পরিস্থতি আরও ঘোরালো করে তুলেছেন। আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপিকে তার মাশুল গুণতে হবে।