নিজস্ব প্রতিনিধি: কার্যত বিরল। দেখা যায় না কোথাও। সেটাই করে দেখালেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। নতমস্তকে ক্ষমা চাইলেন তিনি। পূর্ব মেদিনীপুর(Purba Midnapur) জেলার এগরা(Egra) থানার সাহারা গ্রাম পঞ্চায়েতের খাদিকুল(Khadikul) গ্রামের বাসিন্দা ভানু বাগের বাড়িতে গত ১৬ মে অবৈধ বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের(Blast) ঘটনায় ভানু সহ মোট ১১জন মারা যান। সেই ঘটনার ১১ দিনের মাথায় গ্রামে শনিবার সকালে পা রাখেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। সেখানে তিনি বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহতদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি তাঁদের হাতে আড়াই লক্ষ টাকার চেক ও পরিবারের একজন করে সদস্যকে রাজ্য পুলিশের হোমগার্ড পদে(West Bengal Police Home Guard Post) যোগদানের জন্য চাকরির নিয়োগপত্রও তুলে দেন। তবে সবাইকে চমকে দিয়ে তিনি এদিন ক্ষমাও চেয়ে নেন এই বিস্ফোরণের ঘটনায়। দেশের মধ্যে নানান সময়ে আমরা বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের খবর পাই। তাতে অনেকে মারাও যান। কিন্তু কোনও রাজ্যের কোনও মুখ্যমন্ত্রী আজ পর্যন্ত এই ধরনের ঘটনায় ক্ষমা চাননি। মমতা সেটাই করে দেখালেন।
আরও পড়ুন এগরায় বিস্ফোরণের নিহতদের পরিবারের সদস্যকে হোমগার্ডের চাকরি, ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর
এদিন মুখ্যমন্ত্রী জানান, ‘এই বিস্ফোরণের ঘটনা আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে। আমি এখানে জনসভা করতে আসিনি। তবে একটু আগেই আসা উচিত ছিল। কিন্তু কয়েক দিন আকাশ মেঘলা ছিল। তাই পরিস্থিতি আমায় অ্যালাউ করেনি। তবে আজ সকালেও যখন বৃষ্টি হচ্ছে আমরা রিস্ক নিয়ে বেরিয়ে আসছি। কারণ আমাকে আসতেই হবে একবার। আমি আপনাদের সকলের কাছে মাথানত করে এই ঘটনার জন্য ক্ষমা চাইছি। শব্দবাজি কারখানা অবৈধ। লোভে পড়ে অনেকে এই বাজি তৈরি করতে যান। তাতে প্রাণহানি হয়। নিহত এবং আহতদের পরিবারকে দুঃখ কখনও শেষ হয় না। তবু লড়াই করতে হবে। এটা আমার হাতে ছিল না, আপনার হাতেও ছিল না। কিন্তু অবৈধ বাজি তৈরি করা ঠিক নয়। যিনি এসব তৈরি করতেন তিনিও মারা গিয়েছেন। তাঁর পরিবারের দু’জনকে ইতিমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে।’ এরপরেই কিন্তু এই বিস্ফোরণ নিয়ে কড়া বার্তাও দেন যা জেলার পুলিশ প্রশাসনের পক্ষে যথেষ্ট। আগামী দিনে এই ধরনের ঘটনা ঘটলে বা এলাকায় অবৈধ বাজি কারখানা চলতে দেখেও পুলিশ হাত গুটিয়ে বসে থাকলে তিনি যে চুপ করে তা মেনে নেবেন না সেটাও জানিয়ে দিয়েছেন।
আরও পড়ুন শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত করতে সরকারি প্রকল্পে নজরদারি কমিটি
মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ‘যিনি এসব তৈরি করতেন তিনিও মারা গিয়েছেন। কটকে একটি নার্সিংহোমে নাম বদল করে ছিলেন। কিন্তু আমাদের পুলিশ সেখানে পৌঁছে গিয়েছিল। তাঁকে পুলিশ গ্রেফতারও করা হয়েছিল। দুর্ভাগ্যের ব্যাপার তিনি কিছু বলার আগে মৃত্যু হয় তাঁর। তাঁর পরিবারের দু’জনকে ইতিমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমি স্থানীয়দেরও বলব, আপনারা নজর রাখুন অবৈধ বাজি তৈরি হলে, শব্দবাজি যদি কোথাও তৈরি হয় সঙ্গে সঙ্গে ওসিকে রিপোর্ট করবেন। যদি সেই ওসি অ্যাকশন না নেন তাহলে আমার ওপর ছেড়ে দেবেন। আমি দু’দিনে ওই ওসিকে চেঞ্চ করে দেব। এখানেও নতুন ওসি এসেছে। আগে যিনি ছিলেন, তাঁকে বলা সত্ত্বেও তিনি অ্যাকশন নেননি বলে শুনেছি। সঠিক সময়ে ইন্টেলিজেন্স যদি কাজ করত তাহলে এমন জিনিস ঘটত না। এখান থেকে ওড়িশার মতো পড়শি রাজ্যে শব্দবাজি যায়। তাই পুলিশকে বলবো বর্ডারগুলো সিল করুন। যে ছেলেমেয়েরা হোমগার্ডে চাকরি পেয়েছেন, এঁদের ওই বর্ডারে নিযুক্ত করুন। এঁরা এলাকাগুলো চিনতে পারবেন। তাতে তাঁদের বাইরেও যেতে হবে না। নিজের এলাকাও ভাল করে চিনতে পারবেন। সরাসরি পুলিশের সঙ্গে তাঁরা যোগাযোগ করতে পারবেন।’