নিজস্ব প্রতিনিধি: ‘মিশন মুম্বই’ শেষ হয়েছে সফল ভাবেই। তাই বৃহস্পতিবার দুপুরে সেখান থেকে বাংলায় ফিরে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর ফিরেই তিনি চলে এলেন নবান্নে। সেখানেই মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী, স্বরাষ্ট্রসচিব ডি পি গোপালিকা,রাজ্য পুলিশের ডি জি মনোজ মালব্য ও বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের মন্ত্রী জাভেদ খানকে সঙ্গে নিয়ে বসে গেলেন বৈঠকে। সেই বৈঠক সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’ মোকাবিলার স্বার্থে। থাইল্যাণ্ড সাগরে নিম্নচাপ হিসাবে জন্ম নিয়েছে ‘জাওয়াদ’। সেখান থেকেই তা আন্দামান সাগর হয়ে হাজির হয়েছে বঙ্গোপসাগরের বুকে। বৃহস্পতিবার রাতেই তা অতি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে। শুক্রবার বিকালের মধ্যেই তা ঘূর্ণিঝড়ের চেহারা নেবে। শনিবার ভোরে তা অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীকাকুলাম জেলার কলিঙ্গপত্তনম এবং ওড়িশার গঞ্জাম জেলার গোপালপুরের মধ্যবর্তী এলাকার মধ্যে আছড়ে পড়তে চলেছে। তারই প্রভাব পড়তে চলেছে বাংলায়। সেই প্রভাবের মোকাবিলার স্বার্থেই নবান্নে বিশেষ বৈঠক মুখ্যমন্ত্রীর।
দিল্লির মৌসম ভবনের দাবি, জাওয়াদের জেরে সব থেকে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হতে চলেছে দক্ষিণ ওড়িশার গঞ্জাম ও গজপতি জেলার পাশাপাশি অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীকাকুলাম জেলায়। শনিবার ভোরে এই সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় ১০০ থেকে ১২০ কিমি বেগে ল্যান্ডফল করতে চলেছে। তবে যে জায়গায় তার এই ল্যান্ডফল হতে চলেছে সেখান থেকে বাংলার দূরত্ব কমবেশি ৮০০কিমি। তাই এই ঝড়ের প্রত্যক্ষ প্রভাব বাংলায় পড়বে না। কিন্তু এই ঝড়ের হাত ধরেই প্রচুর জলীয়বাষ্প ঢুকতে চলেছে বাংলার পরিমণ্ডলে। কার্যত শুক্রবার থেকেই দক্ষিণবঙ্গের আবহাওয়া বদলে যেতে শুরু করবে। শুরু হবে ভ্যাপসা গরম, সঙ্গে থাকবে মেঘলা আকাশ। বিকাল গড়ালেই পূর্ব মেদিনীপুর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় শুরু হয়ে যাবে হালকা থেকে মাঝাঋ বৃষ্টি। শনিবার এই দুই জেলায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকছে। সঙ্গে হাল্কা বৃষ্টি হবে পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, হাওড়া ও কলকাতায়। রবিবার দুই মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, দুই ২৪ পরগনা, কলকাতা, হাওড়া ও হুগলি জেলায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকছে। দক্ষিণবঙ্গের বাকি জেলায় মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকছে।
এদিন থেকেই রাজ্যের উপকূলবর্তী দুই জেলার মানুষকে এই ঘূর্ণিঝড় নিয়ে সতর্ক করার কাজ শুরু করে দিয়েছে রাজ্য সরকার। করা হচ্ছে মাইকিং। আগামিকাল থেকেই শুরু হয়ে যাবে সুন্দরবনের দ্বীপ এলাকা থেকে সাধারন মানুষকে সরিয়ে নেওয়ার পালা। একইসঙ্গে পূর্ব মেদিনীপুর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সব সাইক্লোন সেন্টার খুলে দেওয়া হবে। এদিন এইসব নিয়েই পর্যালোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। একই সঙ্গে ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’ এর মোকাবিলায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় এনডিআরএফ এর ৮টি টিম মোতায়েন করা হয়েছে। কল্যাণী, দীঘা, কাকদ্বীপ, সন্দেশখালি, আরামবাগ ও খড়গপুরে ১টি করে এবং কলকাতায় ২টি টিম মোতায়েন করা হয়েছে। আগামী কালকের মধ্যে আরও ৮টি টিম মোতায়েন করা হবে এনডিআরএফ এর। রাজ্যের ১২টি জেলায় ইতিমধ্যেই মোতায়েন করা হয়েছে এসডিআরএফ দলও। তবে বাংলায় ভারী বৃষ্টি ছাড়া বড় কোনও প্রভাব না পড়ারই সম্ভাবনা বেশি।