নিজস্ব প্রতিনিধি: নিজের পছন্দমতন যাকে খুশি নির্বাচন কমিশনারের(Chief Election Commissioner) পদে বসিয়ে দিচ্ছে কেন্দ্র সরকার, থুড়ি নরেন্দ্র মোদি(Narendra Modi) – অমিত শাহ(Amit Shah)রা। একবার নয়, বার বার এই অভিযোগ উঠছিল গেরুয়া ব্রিগেডের বিরুদ্ধে। এবার সেই অভিযোগকেই মান্যতা দিয়ে দিল দেশের শীর্ষ আদালত(Supreme Court)। বৃহস্পতিবার এক ঐতিহাসিক রায়ে সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ(Constitution Bench) নির্দেশ দিয়েছে, ‘তিন সদস্যের এক উচ্চ পর্যায়ের কমিটি প্রধান নির্বাচন কমিসনার সহ বাকি নির্বাচন কমিশনারদের বেছে নেবে। ওই কমিটিতে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী, লোকসভায় বিরোধী দলের নেতা ও দেশের প্রধান বিচারপতি।’ কার্যত পছন্দের ব্যক্তিকে নির্বাচন কমিশনারের পদে বসিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার যে খালা শুরু করেছিলেন মোদি-শাহ সেই খেলাই এবার শেষ করে দিল সুপ্রিম কোর্ট। আর তাই দেশের শীর্ষ আদালতের এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন কংগ্রেস সহ বিভিন্ন বিরোধী দলের নেতারা এবং সমাজকর্মীরা। স্বাগত জানিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও(Mamata Banerjee)।
এদিন সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে মমতা একটি ট্যুইট করেছেন। তাতে তিনি লিখেছেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের এই যুগান্তকারী আদেশ গণতন্ত্রের বিজয়! নির্বাচন কমিশনার ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের বিষয়ে সাংবিধানিক বেঞ্চের সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। অত্যাচারী শক্তির অপচেষ্টার বিরুদ্ধে জনগণের ইচ্ছারই জয় হয়েছে।’ কার্যত পছন্দের লোক বসিয়ে নির্বাচনে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই উঠেছিল কেন্দ্রের শাসক দলের বিরুদ্ধে। বিশেষ করে বিজেপি কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পরে গত সাড়ে আট বছরের বেশি সময় ধরে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা বার বার প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। দেশের প্রাক্তন প্রধান নির্বাচন কমিশনার সুনীল যোশি কার্যত বিজেপি নেতাদের ‘ক্রীতদাস’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সহ বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে বার বার আদর্শ আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ উঠলেও কমিশন কার্যত নীরব থেকেছে। এমনকী বিজেপিকে রাজনৈতিক সুবিধা দিতে পাইয়ে দিতে ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা নিয়ে সব নিয়ম-নীতি লঙ্ঘন করার অভিযোগ উঠেছে। গত কয়েক বছরে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে বিতর্কের ঝড় উঠেছে। গত এক দশকে নির্বাচন কমিশন নিজের নিরপেক্ষতা খুঁইয়ে কার্যত বিজেপির শাখা সংগঠনে পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ। একুশের বিধানসভা নির্বাচনেও কমিশনের ভূমিকা বিদ্ধ হয়েছে বাংলার বুকে।
নির্বাচন কমিশনের সংস্কারের দাবিতে দায়ের করা একগুচ্ছ জনস্বার্থ মামলার রায় দিতে গিয়ে বিচারপতি কে এম যোশেফের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ এদিনের রায়ে জানিয়ে দিয়েছে, ‘সিবিআইয়ের প্রধান যে পদ্ধতিতে বেছে নেওয়া হয়, নির্বাচন কমিশনার বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রেও সেই পদ্ধতি বেছে নেওয়া উচিত। এখন থেকে তিন সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের কমিটিই নির্বাচন কমিশনারদের বেছে নেবেন।’ মজার কথা এই রায় এল এমন একটা দিনে যেদিন দেশের ৩টি রাজ্যের নির্বাচনী ফলাফল সামনে এল। আবার মমতাও এমন একতা দিনে এই নিয়ে ট্যুইট করলেন যেদিন বাংলার বুকে সাগরদিঘী বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে তৃণমূলের পরাজয় ঘটেছে। সব মিলিয়ে গণতন্ত্রের জয় হল এদিন।