নিজস্ব প্রতিনিধি: গা জোয়ারি করে নয়, বন্দুকের নলের সামনে দাঁড় করিয়েও নয়, সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের(Singur-Nandigram) পথে নয়, ঢেউচা-পাঁচামির(Deucha Pnachami) পথে, আলোচনায় সহমতের ভিত্তিতে হোক রাজ্যের শিল্পায়ন(Industrialization)। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার এক ফোঁটা রক্ত না ঝরিয়েও ঢেউচা-পাঁচামির বুকে গড়ে তুলছে কয়লা খনি শিল্প। সঙ্গে দিচ্ছে জমিদাতাদের দুর্দান্ত প্যাকেজও। আর তাই গোটা দেশেই আজ শিল্পায়নের নয়া নজীর, নয়া মডেল ঢেউচা-পাঁচামি। শিল্প গড়ে তোলার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) মস্তিষ্ক প্রসূত এই নীতি আজ সমাদৃত হচ্ছে গোটা দেশেই। এই শিল্পনীতিই বাংলার বুকে লোকসভার নির্বাচনে অনেকটাই এগিয়ে রাখছে তৃণমূলকে। জোড়াফুলের তরফেও ঢেউচা-পাঁচামিকে দলের প্রচারে তুলে ধরা হচ্ছে রাজ্যের সর্বত্র। ওয়াকিবহাল মহলের দাবি, এক ফোঁটা রক্ত না ঝরিয়ে বাংলার ক্ষমতাসীন সরকার ঢেউচা-পাঁচামিতে যা করে দেখাতে পেরেছে তা আগামী দিনে গোটা দেশের শিল্পায়নে প্রভাব ফেলবে। কার্যত লোকসভা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার আগেই তৃণমূলের(TMC) নৈতিক জয় হয়ে গিয়েছে এই নীতির জন্য।
বামেদের ৩৪ বছরের রাজত্বপাটে সব থেকে বেশি সমর্থন এসেছিল গ্রাম থেকে। এর নেপথ্যে ছিল বর্গাদারি নীতি। বাম জমানাতেই শ্লোগান উঠেছিল, ‘লাঙল যার জমি তাঁর’। অস্বীকার করার উপায় নেই বাংলার বুকে বর্গাদারি নীতি গ্রামাঞ্চলে কিছুটা হলেও কৃষকদের পায়ের নীচে মাটি এনে দিয়েছিল। যদিও জমির মালিকেরা নিদারুণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল এই নীতির জন্য। কিন্তু এই বাম সরকারই যখন সিঙ্গুর আর নন্দীগ্রামে গায়ের জোরে, বন্দুকের নলের জোরে জমি অধিগ্রহণ করতে নেমে পড়েছিল, তখন সবার আগে রুখ দাঁড়িয়েছিল সেই বর্গাদাররাই। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের বুকে বাম জমানার শিল্পায়ণ নীতি নিয়ে তাই গোটা দেশে প্রশ্ন উঠেছিল। নিরবচ্ছিন্ন ৩৪ বছরের শাসনের পতনও ডেকে আনে এই নীতি। পরিবর্তনের পরে মমতা আর তাঁর দল এবং সরকার, আজও একটি নীতিতে অটল। জোর করে কোথাও এক ইঞ্চিও জমি অধিগ্রহণ করা হবে না। মমতার এই নীতি বিরোধীরা সমর্থন না করলেও, বাংলার মানুষ বার বার তৃণমূলকে একের পর এক নির্বাচনে জয়ী করে এই নীতিকে সমর্থন করারই ইঙ্গিত দিয়েছে।
বাংলার বুকে শিল্পায়নের ক্ষেত্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে নীতি নিয়েছেন তা এখন গোটা দেশে সমাদৃত হচ্ছে। সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেই জমি অধিগ্রহণের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়াই হোক কী জমিদাতারা যাতে কোনওভাবেই চরম ক্ষতির সম্মুখীন না হন, তা সুনিশ্চিত করাই হোক, মমতার এই নীতি এখন গোটা দেশে সকলের নজর কাড়ছে। একই সঙ্গে নজর কাড়ছে ঢেউচা-পাঁচামির সফল রূপায়ণও। যেভাবে সেখানে প্রকল্প শুরুর দিকে শিল্প বিরোধী হাওয়া বইতে শুরু করেছিল, যে ভাবে আদিবাসী পল্লীর বাড়ির দেওয়ালে দেওয়ালে ‘কয়লা খনি চাই না’ লেখা হচ্ছিল, তাতে অনেকেরই মনে হচ্ছিল সেখানে কোনওদিনই কয়লা খনির শিল্প গড়ে উঠবে না। কিন্তু জোর করে কিংবা বন্দুকের নলের সামনে দাঁড় করিয়ে উচ্ছেদের পথে হাঁটেনি মমতার প্রশাসন। পরিবর্তে আলোচনায় বসার আহ্বান রেখেছে বারবার। আর তাতেই ধীরে ধীরে হলেও বাস্তবের মুখ দেখছে এশিয়ার সর্ববৃহৎ এই কয়লা খনির প্রকল্প। আলোচনায় অনুঘটকের কাজ করেছে মমতার মানবিক প্যাকেজ। চড়া মূল্যে জমির দাম ও জমিদাতাদের সরকারি চাকরির নিশ্চয়তা দিয়েছেন তিনি। বহু জমিদাতা ইতিমধ্যে চাকরিও পেয়ে গিয়েছেন। আরও অনেকেই পাবেন। আর এখানেই তৃণমূলের নৈতিক জয় দেখছে ওয়াকিবহাল মহল। জয় মমতারও।