নিজস্ব প্রতিনিধি: এক আধবার নয়, টানা ১০ বার শুনানি পিছিয়ে গেল। সুপ্রিম কোর্টে পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মচারীদের(West Bengal State Government Employees) মহার্ঘ্য ভাতা বা DA মামলার শুনানি হওয়ার কথা ছিল এদিন অর্থাৎ শুক্রবার। এদিন কিন্তু শুনানি শুরুও হয় নির্দিষ্ট সময়ে। সওয়াল-জবাব পর্বে রাজ্যের আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি আদালতে জানান, এর আগে আদালত জানিয়েছিল, বিস্তারিত শুনানির জন্য অন্য কোনও দিন নির্ধারিত করা হবে। তাই অন্য কোনও দিন এই মামলার শুনানি হোক। একই সঙ্গে রাজ্যের কর্মচারী সংগঠন Confederation of State Government Employees’র আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য এবং ফিরদৌস শামিম জানান, বার বার শুনানি পিছিয়ে যাচ্ছে। যে কোনও একটি দিন শুনানির জন্য নির্দিষ্ট করে দেওয়া হোক। আবার বিজেপির কর্মচারী সংগঠন সরকারি কর্মচারী পরিষদের আইনজীবী পিএস পাটোয়ালির বক্তব্য, সরকারি কর্মচারীদের মামলা। তাঁরা DA পাচ্ছেন না। হাইকোর্ট চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে। শুনানি বার বার পিছিয়ে গেলে সমস্যা বাড়বে। সব পক্ষের বক্তব্য শোনার পর বিচারপতি হৃষিকেশ রায় এবং সঞ্জয় করোলের বেঞ্চ জানায়, আগামী বছর ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে মামলাটির শুনানি হবে।
এর আগে কলকাতা হাইকোর্ট মামলাকারী রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের পক্ষে রায় দেওয়ার পরে সুপ্রিম কোর্টে যায় রাজ্য সরকার। ২০২২ সালের ৩ নভেম্বর সেই মামলা দায়ের হয় শীর্ষ আদালতে। প্রথম শুনানি হয় ২৮ নভেম্বর। রাজ্যের পক্ষে সওয়াল করেন আইনজীবী মুকুল রোহতগি। সেই দিনেই সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দেয় পরবর্তী শুনানি ৫ ডিসেম্বরেই মামলা শেষ হবে। পরে রাজ্য আইনজীবী বদল করে অভিষেক মনু সিঙঘভিকে দায়িত্ব দেয়। এর পর থেকে একের পর এক তারিখ দেওয়া হলেও নানা কারণে শুনানি পিছিয়ে গিয়েছে। গত ১৪ জুলাইয়ে নবম বার পিছিয়ে পরবর্তী শুনানির তারিখ দেওয়া হয় ৩ নভেম্বর। ২০২২ সালের ২০ মে রাজ্যের সরকারি কর্মচারীদের ৩১ শতাংশ হারে DA দেওয়ার নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল রাজ্য। রাজ্যের যুক্তি ছিল, হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত মেনে DA দিতে হলে প্রায় ৪১ হাজার ৭৭০ কোটি টাকা ব্যয় হবে। যা রাজ্য সরকারের পক্ষে এই মুহূর্তে বহন করা কঠিন।
প্রসঙ্গত, হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বকেয়া DA না-দেওয়ার জন্য নবান্নের বিরুদ্ধে একটি আদালত অবমাননার মামলাও হয়। তবে সেটির শুনানি আপাতত হাইকোর্টে স্থগিত রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের অনুরোধে। সম্প্রতি আরও ৪ শতাংশ হারে DA দেওয়ার ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। অক্টোবরে ঘোষণা হলেও নতুন হারে DA কার্যকর হবে জুলাই মাস থেকেই। এর আগে ২৪ মার্চের ঘোষণায় ১ জানুয়ারি থেকে মিলেছিল বর্ধিত DA। তাতে DA বেড়ে হয়েছিল ৪২ শতাংশ। এখন তা চার শতাংশ বেড়ে হল ৪৬ শতাংশ। আর তাতে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের ফারাক বেড়ে দাঁড়ায় ৪০ শতাংশ। বাংলায় ২০২০ সালে রাজ্য ষষ্ঠ বেতন কমিশন চালু হওয়ার পরে ৩ শতাংশ DA বেড়েছিল। এর পরে চলতি বছর বাজেটের সময়ে আরও ৩ শতাংশ DA ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে এই সময়ের মধ্যে দফায় দফায় DA বাড়িয়েছে কেন্দ্রও। তবে ঘটনা হচ্ছে, ২৪’র ভোটের মুখে আদৌ এই মামলার শুনানি ফেব্রুয়ারি মাসে হয় কিনা কার্যত তা নিয়েও এদিন প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।