নিজস্ব প্রতিনিধি: সোম সন্ধ্যাতেই বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। দেশের তৈরি হওয়া বিজেপি বিরোধী INDIA জোট নিয়ে নিজের ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। কার্যত সাফ বুঝিয়ে দিয়েছেন, প্রয়োজনে জোট ছেড়ে দিতেও প্রস্তুত হয়ে আছেন তিনি। একাই লড়বেন বিজেপির বিরুদ্ধে। সেই প্রেক্ষাপটে মমতার ক্ষোভ প্রশমণে কংগ্রেস কী করে তা নিয়ে সকলেই তাকিয়ে ছিল সোনিয়া গান্ধি ও রাহুল গান্ধির(Rahul Gandhi) দিকে। কেননা মমতা এটা বুঝিয়ে দিয়েছেন, তাঁর ক্ষোভটা কংগ্রেস(INC) হাইকম্যান্ডকে নিয়ে নয়, ক্ষোভটা জোটে বামেদের ছড়ি ঘোরানোর মানসিকতা নিয়ে। আর সেই প্রেক্ষাপটে মমতার ক্ষোভ প্রশমণে কংগ্রেস অবতীর্ণ হবে কিনা সেটার দিকেই সবাই তাকিয়ে ছিল। দেখা গেল বাংলায় পা রাখার আগেই অসম থেকেই এই নিয়ে বার্তা দিলেন রাহুল গান্ধি। বুঝিয়ে দিলেন যে যাই বলুক না কেন, মমতার সঙ্গে কংগ্রেসের যোগাযোগ ও সম্পর্ক মসৃণই আছে। আগামী দিনেও থাকবে।
গতকাল অর্থাৎ ২২ জানুয়ারি রামমন্দির প্রতিষ্ঠার দিনেই কলকাতায় সর্বধর্ম সমন্বয়ের ওপর জোর দিয়ে মমতা সংহতি মিছিলের আয়োজন করেছিলেন। সেই মিছিল শেষের সভা থেকেই তিনি বক্তব্য রাখার সময় INDIA জোট নিয়ে নিজের ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন। জানিয়েছিলেন, ‘জোটের নাম INDIA আমি দিয়েছি। কিন্তু দেখতে পাচ্ছি INDIA জোটের বৈঠক নিয়ন্ত্রণ করছে সিপিএম। যে সিপিএম আমাদের ওপর ৩৪ বছর অত্যাচার করেছে, যাদের বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করেছি, এখন তাদের উপদেশ আমি মানব কেন? ৩৪ বছর বাংলায় ক্ষমতায় থেকে সিপিএম কোনও উন্নয়ন করেনি। আমাকে খুব অসম্মান সহ্য করতে হয়। যে রাজ্যে যে দল শক্তিশালী, সেই রাজ্যে সেই দল সেই রাজ্যে লড়াই করবে। ৩০০টা আসনে কংগ্রেসের লড়াই করা উচিত। ৩৪ বছরে একটা মাদ্রাসা করেনি সিপিআইএম। কোনও কবরস্থান করেনি সিপিআইএম। কোনও শশ্মান করেনি। দুর্গাপুজোয় যেত না সিপিআইএম। তারা নাকি নাস্তিক। আঞ্চলিক দলগুলিকে শক্তিশালী করা, তাদের বিজেপি বিরোধী লড়াইয়ে দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার কথা বারবার বলেছি। এটাও বলেছি তোমরা ৩০০ আসনে লড়াই কর। বাকি আসনগুলি আঞ্চলিক দলগুলিকে ছেড়ে দেওয়া হোক। কিন্তু ওরা নিজের মর্জিমাফিক চলছে। আমি তোমাদের আসন নিতে যাব না। কিন্তু ওরা যা ইচ্ছে, তাই করবে বলছে।’
এই প্রেক্ষাপটেই এদিন অসমে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে রাহুল বলেন, ‘মমতাজির সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে যোগাযোগ আছে। দলের তরফেও ওনার সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। আসন বন্টন নিয়ে আলোচনাও চলছে। এই সময় অনেক কিছুই হয়। ওনাদেরও হয়তো কেউ কিছু বলছেন, আমাদের দিক থেকেও হয়তো কেউ বলে দিচ্ছেন। কিন্তু এগুলো জোট গঠনের পথে অন্তরায় হবে না। জোট থাকছে। আমরা ওনার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছি।’ কার্যত রাহুল এদিন বুঝিয়ে দিলেন, মমতা জোটের অন্দরে বামেদের ভূমিকা নিয়ে যে ক্ষোভ ব্যক্ত করেছেন তা নিয়ে কংগ্রেস সরাসরি মাথা ঘামাবে না। তবে মমতাকে জোটে ধরে রাখার জন্য বা ২৪’র ভোট যুদ্ধে বাংলায় তৃণমূলের(TMC) সঙ্গে আসনরফার বিষয়টি নিয়ে তাঁরা মমতার সঙ্গে কথাবার্তা চালিয়ে যাবেন আর সেটা উচ্চ পর্যায়েই। বাংলায়(Bengal) দুই দলের জোটে কে কটি আস্ন কাকে ছাড়বেন এই নিয়ে সোনিয়া ও রাহুলই মমতার সঙ্গে যা কথা বলার সেটা বলবেন। সামগ্রিক ভাবে, দুই দলের জোট না হওয়ার যে জল্পনা ছড়িয়ে পড়েছিল, এদিন রাহুল সেই জল্পনায় কিছুটা হলেও জল ঢেলে দিলেন। তবে মমতা শেষ পর্যন্ত কী অবস্থান নেন, সেটা লাখ টাকার প্রশ্ন।