নিজস্ব প্রতিনিধি: দেশজুড়ে যথোচিত মর্যাদার সঙ্গে পালিত হচ্ছে বিবেকানন্দ জন্মজয়ন্তী। দিনটি যুবদিবস হিসেবেও পালিত হয়।খুব কম বয়সে বিবেকানন্দ সন্ন্যাস গ্রহণ করেছিলেন। বিবেকানন্দ যে সময়ে সন্ন্যাস প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে অতিক্রান্ত হচ্ছিলেন, তখন এক দেহোপজীবিনী তাঁকে ব্যাখ্যা করেছিলেন সন্ন্যাসীর প্রকৃত অর্থ কী।
ওশোর গল্পে বিবেকানন্দের জীবনের বর্ণনা পাওয়া যায়। ঘটনা হল, জয়পুরের রাজা স্বামী বিবেকানন্দের অত্যন্ত গুণগ্রাহী ছিলেন। একবার তিনি স্বামীজীকে আমন্ত্রণ জানান। রাজকীয় ঐতিহ্য অনুসারে, বিবেকানন্দকে স্বাগত জানাতে নর্তকীদের আমন্ত্রণ করা হয়। বিবেকানন্দের সামনে তাঁরা নৃত্য পরিবেশন করবেন। সেই নর্তকীদের মধ্যে একজন পতিতাও ছিলেন।
রাজা পরে নিজের ভুল বুঝতে পারেন। উপলব্ধি করেন যে সন্ন্যাসীকে আমন্ত্রণ করার সময় একজন পতিতাকে আমন্ত্রণ করা উচিত নয়। কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গিয়েছে। কিন্তু রাজা যখন উপলব্ধি করতে পারলেন তিনি ভুলটা কোথায় করেছেন, ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। রাজা আগেই ওই পতিতাকে তার মহলে ডেকে পাঠিয়ে ব্যবস্থা আগে থেকে করে রেখেছিলেন।
বিবেকানন্দ যখন শোনেন যে তাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য নৃত্যশিল্পীদের মধ্যে একজন পতিতাও ছিল, তখন তিনি অস্থির হয়ে ওঠেন। বিবেকানন্দ তখন পুরোপুরি সন্ন্যাসী হয়ে ওঠেননি। তাই, নারীর প্রতি অমোঘ আকর্ষণ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছিলেন। কিন্তু বিবেকানন্দ পুরোপুরি সন্ন্যাসী হয়ে উঠলে এই ঘটনা তেমনভাবে মনে রেখাপাত করত না।
বিবেকানন্দ সন্ন্যাসী হওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় নিজের যৌন ইচ্ছা দমন করেছিলেন। তাই, পতিতার ছায়া থেকে দূরত্ব তৈরি করতে তিনি নিজেকে একটি ঘরের মধ্যে বন্দি করেছিলেন।
মহারাজা এসে বিবেকানন্দের কাছে ক্ষমা চাইলেন। জানালেন, এর আগে তিনি কোনও সন্ন্যাসীকে আমন্ত্রণ জানাননি। তাই, তার পক্ষে জানা সম্ভব ছিল না যে একজন সন্ন্যাসীকে কীভাবে আমন্ত্রণ করতে হয়। রাজা স্বামী বিবেকানন্দকে ঘরের বাইরে বেরিয়ে আসার অনুরোধ জানান। বলেন, এই পতিতা দেশখ্যাত। তাই, তাকে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়াটা ঠিক হবে না। এটা তাঁর ক্ষেত্রে অপমানের সামিল। কিন্তু বিবেকানন্দ অত্যন্ত অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন। জানিয়ে দেন, তিনি কোনও পতিতার সামনে আসবেন না।
বিবেকানন্দের মুখে ওই কথা শুনে পতিতা আশাহত হন। উনি বিবেকানন্দের জন্য গান ধরলেন। গানের মধ্য দিয়ে তিনি বোঝাতে চাইলেন, যে উনি স্বামী বিবেকানন্দের মতো যোগ্য নন। তাই, তিনি যদি একটু দয়া করেন। পতিতা মানেই রাস্তার জঞ্জাল। তার জন্য আপনাকে ঘৃণা করতে হবে না। সে অজ্ঞ। তাঁর কোনও অস্তিত্ব নেই। সে পাপী। কিন্ত আপনি একজন সন্ন্যাসী। তারপরেও আপনার আমাকে এত ভয় কেন।
এই কথা শুনে বিবেকানন্দ উপলব্ধি করলেন তিনি কোথায় ভুল করে ফেলেছেন। ভাবল, পতিতার মুখোমুখি হতে সে কেন ভয় পাচ্ছে। উপলবদ্ধি করলেন যে তাঁর ভিতরে পতিতাকে আকর্ষণের ভয় রয়েছে। এই ঘর ছেড়ে দিলে মন শান্ত হবে। সন্যাস গ্রহণের পথ প্রশস্ত হবে। তিনি ঘরের দরজা খুলে দিয়ে পতিতাকে প্রণাম করলেন। পতিতাকে বিবেকানন্দ বললেন, ঈশ্বর আজ একটা বড় রহস্য খুলে দিয়েছে। ভয় ছিল, আমার ভিতরে কোনও বাসনার উদয় হবে। কিন্তু আপনার কাছে আমি পরাজিত হলাম। আমি এমন পবিত্র আত্মা আগে কখনও দেখিনি। আজ আমি আপনার সঙ্গে থাকলেও মনের মধ্যে কোনও ভয় তৈরি হবে না।