নিজস্ব প্রতিনিধি, ফরিদপুর: একবিংশ শতাব্দীতে পা রেখেও অন্ধবিশ্বাস আর কুসংস্কারের গ্রাস থেকে মুক্ত হতে পারছে না সমাজ। বরং আরও জাঁকিয়ে বসছে অন্ধবিশ্বাস। গ্রামবাসীদের উপরে যাতে অমঙ্গলের ছায়া ঘনিয়ে না আসে তার জন্য ধুমধাম করে বট গাছের সঙ্গে পাকুড় গাছের বিয়ে দেওয়া হলো। শুধু বিয়েই দেওয়া হয়নি, ওই অনুষ্ঠানে পাত পেড়ে ভুরিভোজ সেরেছেন পাঁচশো জন। বুধবার আজব ঘটনাটি ঘটেছে ফরিদপুর সদর উপজেলার মাচ্চর ইউনিয়নের দয়ারামপুরে।
বর্তমানে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিয়ের মরসুম চলছে। বুধবারও দেশজুড়ে একাধিক বিয়ের অনুষ্ঠান হয়েছে। কিন্তু সবচেয়ে নজর কেড়েছে দয়ারামপুরের বট-পাকুড়ের বিয়ে। অভিনব বিয়ে উপলক্ষে উৎসবে মেতে উঠেছিলেন গ্রামবাসী। বিয়েকে ঘিরে বর-কনের পাশে সাজানো হয় ছাদনাতলা। বিয়ের হলুদ কোটা, পুকুর থেকে জল ভরা থেকে শুরু করে বিদ্ধি অনুষ্ঠানও হয়েছিল। পুরো বাজার চত্বর রঙিন কাগজে সাজানো হয়েছিল। গোধূলি লগ্নে শুরু হয় বিয়ের মূল অনুষ্ঠান। পুরোহিত শ্যামল কুমার দাস মন্ত্র পড়ে বটগাছকে ‘বর’ ও পাকুড়গাছকে ‘কনে’ হিসেবে ধরে বিয়ের কাজ সম্পন্ন করেন। ‘পাত্র’ বটগাছের বাবার দায়িত্ব পালন করেন শোভারামপুরের বাসিন্দা ব্যবসায়ী অধীর বন্দ্যোপাধ্যায়। আর ‘পাত্রী’ পাকুড়গাছের অভিভাবকের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন অরুণ সাহা। দুজনেই বট ও পাকুড়ের বাবার দায়িত্ব পালন করতে পেরে আপ্লুত। সেই সঙ্গে জানিয়েও দিলেন, গাছের বিয়ে হলেও তাঁদের মধ্যে আত্মীয়তার যে সম্পর্ক গড়ে উঠল, তা অটুট থাকবে।
অভিনব বিয়ে দেখতে গ্রামবাসীদের ভিড় উপচে পড়েছিল। বিয়ের অনুষ্ঠানে ছিল ভুরিভোজেরও ব্যবস্থা। অবশ্য সবই নিরামিষ পদ। মেনু তালিকায় ছিল পোলাও, সবজি, ডাল, ফুলকপির তরকারি, চাটনি ও মিষ্টি। অভিনব বিয়ের আয়োজক তথা দয়ারামপুর বাজার কমিটির সদস্য শঙ্করকুমার মালো সাংবাদিকদের এ বিষয়ে বলেন, ‘হিন্দু ধর্মমতে বট-পাকুড়ের বিয়ে দেওয়া হলে গ্রামের মানুষের মঙ্গল হয়। প্রাচীনকাল থেকেই এই ধরনের বিয়ের রীতি চালু রয়েছে।’