নিজস্ব প্রতিনিধি, ঢাকা: আর্থিক অনটনের কারণেই ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময়ে স্কুলের পাঠ চুকিয়ে দিতে হয়েছিল ঝিনাসইদহের শৈলকূপার বাসিন্দা সোহরাব আলী। স্কুল ছাড়ার সময়ে চার মাসের ফি বকেয়া ছিল। জীবন সায়াহ্নে এসে বিবেক দংশণে জর্জরিত হয়ে ৬১ বছর বাদে শেষ পর্যন্ত স্কুলের বকেয়া ফি মিটিয়ে দিলেন তিনি। ১৬ টাকা বকেয়া ছিল, সেই বকেয়ার বর্তমান বাজারমূল্য হিসেব করে ৩০০ টাকা পরিশোধ করেছেন। আর ওই খবর জানাজানি হতেই বীরের মর্যাদা পাচ্ছেন সত্তরোর্ধ্ব সোহরাব। যদিও তিনি মনে করেন, বীরের মর্যাদা পাওয়ার মতো কোনও কাজই করেননি। শুধু নিজের দায়িত্বটুকু পালন করেছেন।
১৯৬২ সালে ঝিনাইদহের শৈলকূপার ফুলহারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন সোহরাব আলী। আর্থিক আনটনের কারণে টানা চার মাস চার টাকা করে ফি জমা করতে না পেরে একদিন পড়াশোনার পাট চুকিয়ে স্কুল ছাড়েন। দরিদ্র পরিবারের সন্তান সোহরাব তার পর শুরু করেন ভাগ্যের লরাই। সংসারের জোয়াল টানতে মাঠেই দিনমজুরের কাজ শুরু করেন। পরে পুলিশের চাকরিতেও যোগ দিয়েছিলেন। তবে সেই চাকরিতে মন না বসায় ফের গ্রামে ফিরে চাষাবাদ শুরু করেন। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় সীমান্ত পেরিয়ে পশ্চিমবঙ্গের রানাঘাটে চলে যান। সেখান থেকে বেতাইয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের শিবিরে প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতার পর ফের দেশে ফিরে বসত ভিটেতেই ছোটখাটো ব্যবসা শুরু করেন।
এখনও আর্থিকভাবে ততটা স্বচ্ছল নন সোহরাব আলী। নাতির পাঠানো সামান্য টাকায় স্ত্রীকে নিয়ে কোনও ক্রমে দিন গুজরান করছেন। গত কয়েক মাস ধরেই জীবন সায়াহ্নে পৌঁছনো সোহরাবের মনে হচ্ছিল, কারও কাছে ঋণী হয়ে থাকবেন না। তাই ৬১ বছর আগের স্কুলের বকেয়া ফি মেটানোর সিদ্ধান্ত নেন। গত মঙ্গলবার যখন স্কুলে পৌঁছে ৬১ বছর আগের বকেয়া ফি জমা দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন তখন কার্যত বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন ফুলহারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে শুরু করে শিক্ষা কর্মীরা। নিজের হাতে বকেয়া ফি মেটানোর পরে সোহরাব আলী শিক্ষকদের বলেন, ‘স্যার, এবার মরে গেলেও শান্তি পাবো।’