নিজস্ব প্রতিনিধি, নড়াইল: সূর্য ডুবে তখন একটু একটু করে অন্ধকার হচ্ছে চারিদিক। আর সেই অন্ধকারের মধ্যেই জ্বলে উঠল লক্ষ মোমবাতি। মৃদু আলোতে ফুটে উঠল শহীদ মিনার, জাতীয় স্মৃতিসৌধ, বাংলা বর্ণমালা, আল্পনাসহ গ্রাম বাংলার নানা ঐতিহ্য। পিছনে চলছে গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নড়াইলে সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের কুড়িরডোবা মাঠে এমন মনোরম নৈসর্গিক দৃশ্যের সাক্ষী থাকলেন কয়েক হাজার মানুষ। ভাষা শহীদদের এভাবেই শ্রদ্ধা জানানো হলো। এ বছরই ছিল অমর একুশের ৭২তম বার্ষিকী। আর ৭২ বার্ষিকীতে ওড়ানো হলো ৭২টি ফানুস।
১৯৯৭ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা দিবসে ‘একুশের আলো’ নামে একটি সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে নড়াইলের সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের কুড়িরডোবা মাঠে প্রথম ভাষা শহিদদের স্মরণে একই সঙ্গে জ্বালানো হয়েছিল ১০ হাজার মোমবাতি। একই সঙ্গে ১০ হাজার মোমবাতি প্রজ্জ্বলিত করে শহিদ স্মরণ গোটা দেশেরই টক অব দ্য কান্ট্রি হয়ে উঠেছিল। তার পর থেকে প্রতি বছরই বেড়ে চলেছে মোমবাতির সংখ্যা। গত কয়েক বছর ধরে লাখো মোমবাতি জ্বালানোর মাধ্যমেই ভাষা শহিদদের স্মরণ করা হচ্ছে।
এদিন সন্ধ্যা ছয়টা ১০ মিনিটে প্রদীপ জ্বালিয়ে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করেন নড়াইলের জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান। তার পরেই এক সঙ্গে ধীরে-ধীরে জ্বালানো হয় লাখো মোমবাতি। পিছনে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের শিল্পীরা সমবেত কণ্ঠে গেথে উঠলেন, ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি….।’ অভিনব অনুষ্ঠানের আয়োজক তথা ‘একুশের আলো’ উদযাপন পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক কচি খন্দকার সাংবাদিকদের বলেন, ‘লাখো মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে আমরা কুসংস্কার, ধর্মীয় গোঁড়ামিসহ অন্ধকার থেকে মুক্ত হতে চাই, যা আমাদের ভাষা শহীদরা চেয়েছিলেন।’ গত দুদিন ধরে হাজার খানেক স্বেচ্ছাসেবক লাখো মোমবাতি দিয়ে পুরো মাঠকে সাজিয়ে তুলেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।