এই মুহূর্তে




তিন শতাব্দী ধরে ধর্মের সঙ্গে ভক্তি ও মনুষ্যত্বের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে চলেছেন লোবা মা

নিজস্ব প্রতিনিধি:  দীপান্বিতা কালীপুজো আসন্ন প্রায়। শ্যামা মায়ের আরাধনা মানেই চারদিকে আলোর রোশনাই। অন্ধকারের উৎস হতে উৎসারিত আলো আসার তিথি হল দীপাবলি। চতুর্দিককে মোমের আলোয় উদ্ভাসিত করে, ভক্তের সঙ্গে ভগবানের আত্মিক মিলন ঘটিয়ে মায়ের কাছে প্রার্থনা করার তিথি হল দীপান্বিতা অমাবস্যা। পশ্চিমবঙ্গে প্রচুর কালীপুজো হয়। সেই সব কালীপুজোর অনেকের সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে নানা লোককথা, জনশ্রুতি। তেমনই এক কালীপুজো হল বীরভূমের লোবা মায়ের পুজো।

প্রায় তিন শতাব্দী ধরে এখানে পূজিত হয়ে আসছেন শ্যামা মা। মানুষের বিশ্বাস ও ঐতিহ্যের মেলবন্ধন ঘটেছে দুবরাজপুর ব্লকের লোবা গ্রামের কালীপুজোয়। স্থানীয়দের কাছে এই কালীপুজো তাই পরিচিত লোবা মায়ের পুজো নামে। প্রতিবছর দীপান্বিতা অমাবস্যার রাতে অনুষ্ঠিত হয় লোবা মায়ের পুজো। দূর দূরান্ত থেকে মায়ের কাছে ব্যাকুল হয়ে ছুটে আসেন মানুষ। অচিরেই লোবা গ্রামের কালীপুজো হয়ে ওঠে মানুষের মিলন মেলা। এই ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায় মন্দিরে পুজোর সূচনা করেছিলেন রামেশ্বর দণ্ডী। আজ থেকে কয়েকশো বছর আগে হিংলো নদীর তীরে তিনি তাঁর আরাধ্যা লোবা মায়ের প্রতিষ্ঠা করেন। পরে তিনি গ্রাম ছাড়েন। তবে চলে যাওয়ার আগে শ্যামা পুজোর দায়িত্ব দিয়ে যান স্থানীয় ঘোষ পরিবারকে। সেবায়েত নিযুক্ত হন গ্রামের চক্রবর্তী পরিবার। সেই শুরু। তারপর থেকে এখনও পর্যন্ত এই দুই পরিবারের সদস্যরা নিজ কর্তব্য থেকে বিচ্যূত হননি। অবিচ্ছিন্নভাবে আজও মহা সমারোহে হয়ে চলেছে দীপান্বিতা অমাবস্যায় লোবা মায়ের পুজো। ঘোষ পরিবারের কাছে মায়ের পুজো মেয়ের বিয়ের সমান। মেয়ের বিয়ে তো একরাতের উৎসব। এক রাতকেই চিরস্মরণীয় করে রাখার জন্য নিজের শেষটুকু খরচ করেন কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা। লোবা মায়ের ক্ষেত্রেও ঠিক তাই হয়। মা যেমন ঝুলি শূন্য করান, তেমন পূর্ণও করে দেন। 

লোবা মায়ের পুজোতে বহু দূর দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন মানুষ। এমনও অনেকে আছেন যারা হয়তো মুঠো ফোনের স্ক্রিনে মায়ের ছবি দেখে সুস্থতার মানত করেছিলেন। তারপর সুস্থ হয়ে মাতৃদর্শনে কালীপুজোয় সশরীরে হাজির হন লোবা গ্রামে। এমন উদাহরণ ভুড়ি ভুড়ি রয়েছে। লোবা মা অত্যন্ত জাগ্রত বলে বিশ্বাস সকলের। মায়ের কাছে আসলে নাকি কেউ নিরাশ হয়ে ফেরেন না। বীরভূমের দুবরাজপুর ব্লকে পূজিত লোবা মায়ের অন্যতম বিশেষত্ব হল তিনটি কালি প্রতিমার একসঙ্গে বিসর্জন। দীপান্বিতা অমাবস্যার রাতে কালীপুজো শেষ হলে পরদিন স্থানীয় কালীভাসা পুকুরে নিরঞ্জন হয় তিন প্রতিমার। মনে করা হয়, এই তিন দেবী হলেন তিন বোন। বড় বোন হলেন লোবা মা, মেজ বোন হলেন বাবুপুরের মা এবং বরারির মা হলেন ছোট বোন। হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে সকল সম্প্রদায়ের মানুষ এই পুজোয় অংশ নেন। তাই কালীপুজোর দিন লোবা গ্রাম পরিণত হয় সর্বধর্মের মিলনমেলায়। তিন শতাব্দী পেরিয়েও লোবা মায়ের পরিচিতি, বিশ্বাস বিন্দুমাত্রও আঘাতপ্রাপ্ত হয়নি। বছরের পর বছর ধরে ধর্মের সঙ্গে ভক্তি ও মনুষ্যত্বের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে চলেছেন বীরভূমের দুবরাজপুরের লোবা মা।

Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

‘বিবেকবোধহীন, অপরিকল্পিত SIR বন্ধ করুন’, BLO-র মৃত্যুতে কমিশনকে আক্রমণ মমতার

মামলাকারীদের ১০ নম্বর দেওয়া হবে না কেন? এসএসসি’র অবস্থান তলব বিচারপতি অমৃতা সিনহার

স্ত্রী পুত্রের নথিতে গোলমাল, দেশছাড়া হতে হবে, SIR আতঙ্কে আত্মঘাতী প্রৌঢ়

BLO দের সহায়তার জন্য দেওয়া হচ্ছে সহকারী, ফর্ম ডিজিটাইজেশন নিয়ে ক্ষুব্ধ নির্বাচন কমিশন

কথা দিয়েও বেহালা পশ্চিমের জনতা দরবারে গেলেন না, জেলমুক্তির এক সপ্তাহ পরেও গৃহবন্দি পার্থ

শিবপুরে শুট আউট, আবাসনে ঢুকে মহিলাকে গুলি

Advertisement
এক ঝলকে
Advertisement

জেলা ভিত্তিক সংবাদ