নিজস্ব প্রতিনিধি: আমরা ছোটবেলা থেকেই দেখে এসেছি কালী মানেই ঘোর কৃষ্ণবর্ণা উগ্রচণ্ডা রূপ। গলায় নরমুণ্ডের মালা, কোমরবন্ধে কাটা হাত, নগ্ন রূপে এক ভয়ঙ্করী মূর্তি। এই রূপেই পূজিতা হন মা কালী। কিন্তু কালীর রূপ যদি হয় সম্পূর্ণ শ্বেতশুভ্র, পরণে শাড়ি, ঠিক যেন ঘরের মেয়ে। হ্যাঁ, পশ্চিম বর্ধমানের কুলটির এই সাদা কালী রূপেই পুজো পান মা কালী। যা এক কথায় নজিরবিহীন। গোটা বাংলায় সাদা কালীর কোনও নজির আছে বলে জানা নেই।
মা কালীর বিভিন্ন রূপের হদিশ পাওয়া যায়। এরমধ্যে অন্যতম শ্মশানকালী ও শ্যামাকালী। ঘোর কৃষ্ণবর্ণের উগ্রচণ্ডা রূপে শ্মশানকালী এবং নীল বর্ণের শ্যামাকালী। তবে সকলের থেকে আলাদা এই সাদাকালী। কুলটির লালবাজারের একেবারে কেন্দ্রে অবস্থিত ফলহারিণী কালী মন্দির। মন্দিরের প্রধান সেবাইত মধুময় ঘোষ জানালেন, ১৫ বছর আগে তিনি স্বপ্নাদেশ পেয়ে বাঁকুড়া থেকে নিয়ে এসেছিলেন এই সাদা কালী মূর্তিটি। এরপর থেকে ওই মূর্তিকেই পুজো করে আসছেন তিনি। পরবর্তী সময়ে এলাকাবাসী এখানে একটি মন্দির তৈরি করেন নিজেদের উদ্যোগে।
মা এখানে নগ্ন নয়, সাদা পাথরের প্রতিমাকে শাড়ি পরিয়ে রাখা হয়। এখানে মায়ের রূপও উগ্র নয়, সৌম্য। ফলহারিণী কালী রূপেই পূজিতা হন কুলটির লালবাজারের দেবী। মন্দিরের প্রধান সেবাইত মধুময়বাবু বলেন, ২০০৫ সালে মা আমাকে স্বপ্নাদেশ দেন। তারপর মায়ের নির্দেশ মতোই আমি বাঁকুড়ার শুশুনিয়া পাহাড় থেকে এই পাথরের মূর্তি নিয়ে আসি। তখন থেকেই সাদা বর্ণের ফলহারিনী কালীপুজো করে আসছি। মন্দিরের পুরোহিত স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘প্রতিদিন নিত্যপুজো হয় এই কালীমন্দিরে।
প্রতি অমাবস্যায় বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয়। তবে এই ফলহারিনী কালীর প্রধান পুজো হয় জ্যৈষ্ঠ মাসে। যদিও কালীপুজোর দিন হয় বিশেষ পুজো। এলাকাবাসীর বিশ্বাস, এখানে মায়ের কাছে কেউ যদি কায়মনোবাক্যে কিছু প্রার্থনা করলে সেটি সফল হয়। ফলে দূর-দূরান্ত থেকে বহু মানুষ মনোবাঞ্ছা পূরণের আশায় কুলটির লালবাজারের এই সাদা কালী ফলহারিণী মন্দিরে আসেন। তবে সবচেয়ে বেশি ভিড় হয় জ্যৈষ্ঠ মাসের ফলহারিণী কালীপুজোয় এবং কালীপুজোর দিন।