নিজস্ব প্রতিনিধি: কোভিডকালে স্ট্রিট ফুড কতটা নিরাপদ, সেই প্রশ্ন অনেক আগেই উঠে গিয়েছিল। যদিও তার উত্তর কেউই দিতে পারেননি। ফার্স্ট ফুড হোক কী মুখরোচক খাবার কিংবা শরবত বা কাটা ফল, সবকিছুই বিক্রি হয় কলকাতা সহ রাজ্যের সব শহরের ফুটপাত ও রাস্তার ধারে। গ্রামবাংলাতেও শহুরে স্ট্রিট ফুডের দেখা মেলা শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু কতখানি নিরাপদ এই খাবার তা নিয়ে না আমজনতার মধ্যে সেভাবে কোনও সচেতনতা দেখা গিয়েছে না তা নির্ধারণে প্রশাসনের স্তর থেকে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে এবার কোভিডের জেরে লকডাউন পরবর্তী কালে রাজ্য সরকারই উদ্যোগী হয়েছে স্ট্রিট ফুড নিয়ে একটু কড়া পদক্ষেপ নিতে। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে স্ট্রিট ফুডের জন্য এবার থেকে রেজিস্ট্রেশন করা বাধ্যতামূলক হবে। স্ট্রিট ফুড বিক্রি করতে গেলে বিক্রেতাকে স্বাস্থ্য দফতরের কাছ থেকে রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট বার করতে হবে। সেই সার্টিফিকেট না থাকলে স্ট্রিট ফুড বিক্রি করা যাবে না।
স্বাস্থ্যভবন সূত্রে খবর, ২০২২ সালের শুরু থেকেই রাজ্যজুড়ে স্ট্রিট ফুডের রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করা হবে। এর জন্য ইতিমধ্যেই রাজ্যের সর্বত্র সব সরকারি হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ফুড সেফটি অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে। তাঁরাই গোটা বিষয়টি মনিটরিং করবেন। বিক্রেতার রেজিস্ট্রেশন না থাকলে কাউকেই স্ট্রিট ফুড বিক্রি করতে দেওয়া হবে না। দেশে ২০১১ সালে ‘ফুড স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড সেফটি অথরিটি অব ইন্ডিয়া’র খাদ্য সুরক্ষা আইন কার্যকর হয়। সেই আইন রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরগুলি কার্যকর করে। ওই আইনে বলা আছে, যে কোনও খাদ্যদ্রব্য বিক্রি করলেই রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক। বাংলায় ফুড রেজিস্ট্রেশন ও লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করতে ২০১৮ সালেই পদক্ষেপ করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। তখনই প্রায় ১৪০ জন ফুড অফিসার নিয়োগ করা হয়। কিন্তু কোভিডের কারনে ও লকডাউনের জেরে এই বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য দফতর সেভাবে মাঠে নামতে পারেনি। এখন পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হতেই ২০২২ সালের শুরু থেকেই তা নিয়ে মাঠে নামতে চলেছে স্বাস্থ্য দফতর।
এই বিষয়ে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের খাদ্য সুরক্ষা শাখার ফুড সেফটি ইনস্পেক্টিং অফিসার বিশ্বজিৎ মান্না জানিয়েছেন, ‘ফুড স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড সেফটি অথরিটি অব ইন্ডিয়া আইনের আওতায় থাকা বেবি ফুড থেকে ফুচকা— সবকিছুই খাদ্য সুরক্ষা শাখার অধীনে। রাজ্যের সর্বত্র এই আইন সম্পর্কে ব্যবসায়ীদের সচেতন করা হচ্ছে। ছোট ব্যবসায়ী, রাস্তার পাশে বসা অস্থায়ী দোকানদার থেকে হকার খাদ্যসামগ্রীর ব্যবসা করলেই এফএসএসএআই রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক। প্রতি বছর ১০০ টাকা দিয়ে এই লাইসেন্স পুনর্নবীকরণ করাও বাধ্যতামূলক। আর বড় অঙ্কের ব্যবসা যাঁরা করেন তাঁদের ক্ষেত্রে লাইসেন্স থাকা তো অবশ্যই বাধ্যতামূলক। ২০২২ সালের শুরু থেকেই রাজ্যের সব শহরে জোর দেওয়া হবে এই রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করার জন্য। মাছ, সবজি বিক্রেতাদেরও রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক হচ্ছে। জেলায় জেলায়ও এই ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তার জন্য অফিসাররা জেলায় গিয়ে ঘুরে দেখবেন। তারপর যাঁরা পথে খাবার বিক্রি করেন তাঁদের লাইসেন্স–রেজিস্ট্রেশন করার বিষয়টি বলা হবে। সচেতন করা হবে। না মানলে অবশ্যই শাস্তি পাবেন তাঁরা। থাকছে জরিমানাও।’