এই মুহূর্তে

WEB Ad Valentine 3

WEB Ad_Valentine

পদ্মযোগেই পতন, মানছে কুড়মি সমাজ, জয় মমতার, মানছেন মোড়লরাও

নিজস্ব প্রতিনিধি: হাওয়াটা বেশ জোরদার ভাবেই উঠেছিল। বস্তুত বেশ ছক কষে সেই হাওয়াটা ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। সবটাই ছিল গেরুয়া ব্লুপ্রিন্ট। থেকে থেকেই অবরোধ বিক্ষোভ। দিনের পর দিন ধরে রাস্তা অবরোধ, ট্রেন অবরোধ। যখন খুশি, যা খুশি। আর সবটাই তৃণমূলের(TMC) বিরুদ্ধে। রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে। এমন একটা হাওয়া তুলে দেওয়া হয়েছিল যেন জঙ্গলমহল(Junglemahal) জুড়ে তীব্র বিক্ষোভ চলছে। মানুষ খেতে পারছে না। পরণের কাপড় জুটছে না। ছেলেমেয়েরা স্কুলে যেতে পারছে না। তরুণ-তরুণীদের হাতে কাজ নেই। কিন্তু এত কিছু করেও শেষরক্ষা আর হল না। জঙ্গলের জনতাই কার্যত তা হতে দিলেন না। অশান্তির বিরুদ্ধে, মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে, অবরোধ বিক্ষোভের নামে হয়রানি আর ভোগান্তি ঠেকাতে তাঁরা বেছে নিলেন বাংলার মেয়েকেই যে কিনা তাঁদের লক্ষ্মীর ভাণ্ডার দিয়েছে, খাদ্যসাথী দিয়েছে, সবুজসাথী দিয়েছে, স্বাস্থ্যসাথী দিয়েছে, কন্যাশ্রী দিয়েছে, রূপশ্রী দিয়েছে, জয় জোহর দিয়েছে। আর তাতেই পঞ্চায়েতে কুপোকাত কুড়মি(Kurmi) সমাজ। 

আরও পড়ুন ভোট মিটতেই কী কর্মী নিয়োগের পথে মমতার সরকার, শুরু জল্পনা

রাজ্যের চারটি জেলা— ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া এবং পুরুলিয়ার ২৩টি ব্লক নিয়েই জঙ্গলমহল। দীর্ঘদিন ধরে সেই এলাকায় একতা হাওয়া তুলে দেওয়া হয়েছিল যে সেখানে কুড়মিদের হাতেই আছে সমাজের যাবতীয় ক্ষমতা। আর তাতে বিশ্বাস করে প্রায় সব রাজনৈতিক দলই কুড়মি জনজাতির নেতাকে প্রার্থী করে গিয়েছেন এ যাবৎকাল পর্যন্ত হয়ে আসা নির্বাচনে। কুড়মি জনজাতি নেতারা তাঁদের রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য প্রতিটি দলের অভ্যন্তরে এতটাই কুড়মি হাওয়া তুলে রেখেছিলেন যে সেই সব দলের রাজ্য নেতৃত্বরা কুড়মি নেতাদের দেখানো পথে পা বাড়ানো ছাড়া কিছু ভাবতেই পারত না। কিন্তু এবারে সেই কুড়মিরাই আলাদা ভাবে ভোটে লড়াইয়ে নেমেছিল। আর সেই ভোটই সব কিছু ওলটপালট করে দিল। জঙ্গলমহলের বুকে কুড়মি রাজের অবসান ঘটিয়ে দিল। অথচ বেশ সুন্দর ভাবেই হাওয়া তোলা হয়েছিল, কুড়মি ভোট বড়সড় ফ্যাক্টর। শাসক দল কুড়মি ভোট না পেলে জঙ্গলমহল থেকে মুছে যাবে। তৃণমূলের ভোট ব্যাঙ্কে ব্যাপক ধস নামবে। বাস্তব ফল সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা বলছে।

আরও পড়ুন প্রাপ্তি ৫২ শতাংশ, তৃণমূলে তাই নয়া শ্লোগান, ’২৪-এ চাই ৪২’

২০১৮ সালের পঞ্চায়েত থেকে লোকসভা ভোটে জঙ্গলমহলের বুকে কুড়মি সমাজের ভোট গিয়েছে গেরুয়ার স্বপক্ষে। তার জেরেই ৫ বছর আগের পঞ্চায়েত ভোটে জঙ্গলমহলের ৪ জেলাতেই ঝড় তোলে বিজেপি(BJP)। লোকসভাতেও উনিশের ভোটে দেখা যায় রাজ্যের ৪ জেলায় ছড়িয়ে থাকা জঙ্গলমহলের ৫টি লোকসভা আসনের সবকটিই গিয়েছে বিজেপির দখলে। কিন্তু একুশ থেকেই শুরু হয় কুড়মিদের পাল্টা মাহাতোদের লড়াই। ঝাড়গ্রামে সেই কারণেই একুশের ভোটে ৪টি বিধানসভা কেন্দ্রতে তো হেরেই ছিল বিজেপি, সেই সঙ্গে জঙ্গলমহলের বাকি সব বিধানসভা কেন্দ্রেই হারের মুখ দেখতে হয়েছিল পদ্মশিবিরকে। সেই পদ্ম শিবিরেরই তৈরি করে দেওয়া ব্লু প্রিন্ট ধরেই কুড়মিরা গত দেড় বছর ধরে থেকে থেকেই শুরু করে দিয়েছিল অবরোধের রাজনীতি। জঙ্গলমহল ও বাংলার মানুষকে চূড়ান্ত হয়রানি ও ভোগান্তির মুখে ফেলে দিয়ে কুড়মিদের রাস্তায় নামিয়ে মজা দেখত বিজেপি। সেটাই এবার ব্যুমেরাং হয়ে গেঁথেছে কুড়মিদের। জঙ্গলমহলে মাত্র ৪টি গ্রাম পঞ্চায়েত গিয়েছে তাঁদের দখলে। জঙ্গলের জনতাই তাঁদের চূড়ান্ত ভাবে প্রত্যাখান করেছে। আর যেহেতু কুড়মিরা নিজেরা প্রার্থী দিয়েছিল নিজেদের মতো করে তাই কুড়মি ভোট না পেয়ে মুখ থুবড়ে পড়েছে বাম, বিজেপি আর কংগ্রেস। কিন্তু কুড়মিদের ওপর নির্ভরশীন না থেকে তৃণমূল সর্বত্রই জয়ের মুখ দেখেছে।

আরও পড়ুন অনন্তে নেই ভরসা! রাজ্যসভায় ডামি প্রার্থী বিজেপির

কুড়মি সমাজের নেতারা এখন মানছেন, তাঁদের ভুল পথে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল। সব থেকে বড় ভুল ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) বিরুদ্ধে কুৎসা ছড়িয়ে বেড়ানো। ভুল ছিল রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। জঙ্গলের জনতা আজ ভালো আছেন মমতার জন্য ও রাজ্য সরকারের জন্য। তাঁরা নতুন করে আর জঙ্গলে আগুন লাগাতে চান না। তাই কুড়নিরা যে আগুন নিয়ে খেলেছেন তা সজোরে প্রত্যাখান করেছেন তাঁরা। পরিসংখ্যান বলছে, পুরুলিয়ায় কুড়মি অধ্যুষিত ১৩০০টি গ্রাম রয়েছে। তার মধ্যে ৪০০ গ্রামে কুড়মি সমর্থিত নির্দল ছিল। তার মধ্যে ২০০ গ্রামে প্রার্থীরা জিতেছে। সম্পূর্ণভাবে ওই ১৩০০ গ্রামে কুড়মি সমর্থিত নির্দল থাকলে ফল আরও অনেক ভালো হতো। যদিও পুরুলিয়ায় ৩৫ শতাংশ কুড়মি ভোটার রয়েছে। ঝাড়গ্রামে আছে ৩৬ শতাংশ কুড়মি ভোট। অথচ কুড়মিদের প্রাপ্তি থেমে গিয়েছে দুই জেলায় মাত্র ২টি করে গ্রাম পঞ্চায়েত দখল করেই।

আরও পড়ুন অধিকারীদের ঝাঁজ কমছে নিজেদের জেলাতেই, খুশ বিক্ষুব্ধরা

জঙ্গলমঙ্গলের রায় যে বিজেপির বিরুদ্ধে যাচ্ছে সেটা কিন্তু একুশের ভোটেই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল। যে ৪ জেলা জুড়ে জঙ্গলমহলে ছড়িয়ে, সেই ৪ জেলার মোট ৪১টি বিধানসভার মধ্যে একুশের ভোটে ২৫টি আসনই গিয়েছিল তৃণমূলের দখলে। বিজেপি পেয়েছিল ১৬টি আসন। কুড়মিদের তখনই বোঝা উচিত ছিল, জঙ্গল চায় না বিজেপিকে। কিন্তু সেই বিজেপির হাত ধরেই আজ জঙ্গলে কোনঠাসা কুড়মিরা। আজ কড়মিদের মোড়লরা স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছেন যে, ‘পদ্মের হাত ধরেই ঘটেছে পতন। মমতাকে দু’হাত তুলে ভোট দিয়েছেন জঙ্গলমহলের মহিলারা।’

Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

‘যত ভোট তত গাছ’, মনোনয়ন দিয়ে ঘাটালবাসীদের প্রতিশ্রুতি দেবের

বন্ধু কাঞ্চনকে সঙ্গে নিয়ে কেশপুরে ভোট প্রচারে দেব

পুরুলিয়ায় তৃণমূলের জেলা পরিষদ সদস্যের অস্বাভাবিক মৃত্যুতে গ্রেফতার ৩

তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে কোথাও পুলিশ লাগালো গাছ, কোথাও আবার ডিউটির ফাঁকে করলেন রক্তদান

তাপপ্রবাহের দুপুরে ঝাড়গ্রামের রেস্তোরাঁতে ভয়ংকর আগুন ,দুটি মোটরসাইকেল ভস্মীভূত

ঘাটালে প্রচারে যেতে কাঞ্চনকে অনুরোধ দেবের

Advertisement
এক ঝলকে
Advertisement

জেলা ভিত্তিক সংবাদ

দার্জিলিং

কালিম্পং

জলপাইগুড়ি

আলিপুরদুয়ার

কোচবিহার

উত্তর দিনাজপুর

দক্ষিণ দিনাজপুর

মালদা

মুর্শিদাবাদ

নদিয়া

পূর্ব বর্ধমান

বীরভূম

পশ্চিম বর্ধমান

বাঁকুড়া

পুরুলিয়া

ঝাড়গ্রাম

পশ্চিম মেদিনীপুর

হুগলি

উত্তর চব্বিশ পরগনা

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা

হাওড়া

পূর্ব মেদিনীপুর