নিজস্ব প্রতিনিধি: বলিউডের আনাচে-কানাচে অনেক রহস্য, যা আজও আমাদের কাছে অজানা। লীনা চন্দভারকর। সত্তর দশকের অন্যতম সুন্দরী এবং শীর্ষ অভিনেত্রীদের মধ্যে একজন। কর্ণাটকের ধারওয়াড়ে একটি কোঙ্কনি মারাঠি পরিবারে জন্ম নিয়েছিলেন লীনা। অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে মায়ানগরী মুম্বইতে পাড়ি দিয়েছিলেন তিনি। ১৯৬৮ সালে ‘মন কা মিট’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে অভিনয় জীবন শুরু লীনার। ছবিটা বক্সঅফিসে সুপারহিট হওয়ায় রাতারাতি বলিউডে প্রতিষ্ঠিত তারকা হয়ে যান লীনা। তবে পেশাগত জীবনে তিনি সফল হলেও বাস্তবে তাঁর মতো দুঃখী বোধহয় আর কেউ ছিলনা। মাত্র ২৬ বছর বয়সেই বিধবা হয়ে গিয়েছিলেন লীনা চন্দভারকর। লীনা যখন কেরিয়ারের শীর্ষে, তখনই তিনি শিল্পপতি সিদ্ধার্থ বন্দোদকরের সঙ্গে বাগদান সারেন। সিদ্ধার্থের আরেকটি পরিচয় তিনি গোয়ার প্রথম মুখ্যমন্ত্রী দয়ানন্দ বন্দোদকরের একমাত্র ছেলে।
এরপর ১৯৭৫ সালে, লীনা এবং সিদ্ধার্থ পানাজিতে জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিয়ে হয়। বিয়ের মাত্র ১১ দিন পর, লীনার স্বামী সিদ্ধার্থ রিভলবার পরিষ্কার করতে গিয়ে নিজেকেই গুলি করে দেন। ১১ মাস চিকিৎসার পর ১৯৭৬ সালে সিদ্ধার্থ মারা যান এবং লীনা ২৬ বছর বয়সে বিধবা হয়ে যান। সিদ্ধার্থের মৃত্যুর পর লীনা চন্দভারকর স্বাভাবিকভাবেই ডিপ্রেশনে চলে গিয়েছিলেন। এর পর তাঁর বাবা-মা তাঁকে ধারওয়াড়ে নিয়ে আসেন। সেই সময় সমাজের কু দৃষ্টি থেকে রেহাই টাননি অভিনেত্রী। লোকেরা তাঁকে মাঙ্গলিক বলে ডাকতে শুরু করে। এরপর লীনা কিছু সময় বিরতি নিয়ে তাঁর অসমাপ্ত ছবি শেষ করতে মুম্বই ফিরে আসেন। ১৯৭৬ সালে, লীনা কিশোর কুমার পরিচালিত ‘পেয়ার আজনবি হ্যায়’ ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হন। এই সময় স্বনামধন্য গায়ক কিশোর কুমার ও লীনা একে অপরের প্রেমে পড়ে যান। তবে কিশোর কুমার তাঁকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করে দেন।
একবার কিশোর কুমারের প্রথম স্ত্রী রুমা গুহ ঠাকুরতার ছেলে অমিত কুমার সংবাদকে বলেছিলেন, “লীনা চন্দভারকরের সঙ্গে তাঁর বাবা সুখ পেয়েছিলেন।বাবা তাঁকে ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন। কিশোরের ছবি গ্রহণ করার পর হতাশা থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন লীনা। তাই দ্বিতীয়বার যাতে কষ্ট না পেতে হয় সেজন্য তিনি কিশোরকে প্রত্যাখ্যান করে দেন।” এরপর অনেক অনুনয় বিনয়ের পর লীনা কিশোর কুমারকে বিয়ে করতে রাজি হন। যদিও লীনার বাবা তাঁদের বিপক্ষে ছিলেন। কারণ কিশোর তিনবার বিয়ে করেছিলেন। এই কারণে শ্বশুরমশাইকে রাজি করাতে কিশোর লীনার ধারওয়াড়ে বাড়িতে যান এবং সেখানে গিয়ে লীনার বাবাকে তাঁর রচিত একটি গান গেয়ে লীনার বাবার হৃদয় গলিয়ে ফেলেন।
কথিত আছে, কিশোর কুমার ১৯৮০ সালে লীনা চন্দভারকরকে বিয়ে করেন। কিন্তু লীনা যখন কিশোরের সঙ্গে সাতপাকে বাঁধা পড়েন, তখন তিনি গর্ভবতী ছিলেন।
লীনা ও কিশোরের দুটি বিয়ে হয়েছিল, একটি ছিল নিবন্ধিত বিয়ে এবং অন্যটি হিন্দু রীতি অনুযায়ী। ১৯৭৭সালে একটি থ্রোব্যাক সাক্ষাৎকারে, লীনা প্রকাশ করেছিলেন যে, কিশোরের সঙ্গে তাঁর হিন্দু রীতিতে বিয়ের সময় লীনা সাত মাসের গর্ভবতী ছিলেন। কিশোর কুমার ১৯৮৭ সালে মারা যান।লীনা ৩৬ বছর বয়সে আবার বিধবা হন।