নিজস্ব প্রতিনিধি: কোনওরকম আগাম সতর্কতা না দিয়ে হঠাৎ করেই অস্থায়ী নিরাপত্তাকর্মীদের ছাঁটাই করার পথে হাঁটা দিয়েছে ইস্টার্ন কোলফিল্ড লিমিটেড বা ইসিএল। পশ্চিম বর্ধমান(Paschim Burdhwan) জেলার আসানসোল(Assansol) মহকুমার সালানপুর(Salanpur) ব্লকে ইসিএলের(ECL) যে কয়লাখনিগুলি রয়েছে সেখানে কর্মরত ১৭৩জন নিরাপত্তাকর্মীর হাতে বৃহস্পতিবার সকালে এই ছাঁটাইয়ের নোটিস ধরানো হয়েছে। আর তার জেরে সকাল থেকেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে সালানপুরের পরিস্থিতি। সেখানে থাকা ইসিলের অধীনস্থ সবকটি কয়লাখনিতে এদিন কিছুক্ষণের জন্য সব কাজ বন্ধ করে দেন কর্মীরা। পরে কাজ চালু রাখা হলেও খনি থেকে কয়লা বার করার কাজ বন্ধ রেখে বিক্ষোভ দেখানো হচ্ছে। ওই সব খনিতে কাজ করা অস্থায়ী কর্মীদের দাবি, ইসিএল এদিন যে ১৭৩জন অস্থায়ী নিরাপত্তারক্ষীকে বরখাস্ত করেছে তাঁদের কাজে ফিরিয়ে না নেওয়া পর্যন্ত তাঁরা খনি এলাকা থেকে এক টুকরো কয়লাও বার করতে দেবেন না। বিষয়টি বিক্ষুব্ধদের তরফে স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়ে রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপও চেয়েছে।
আরও পড়ুন পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগেই একদফা ডিএ সরকারি কর্মচারিদের
জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালে ইসিএলের তরফে ১৭৩জন নিরাপত্তারক্ষীকে কোনওরকম আগাম সতর্কতা না দিয়েই বরখাস্ত করে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের হাতে ধরানো হয়েছে ছাঁটাইয়ের নোটিস। তার জেরেই ইসিএলের সালানপুর এরিয়ার সমস্ত কয়লা খনি বন্ধ করে বিক্ষোভে নামেন সেখানকার সব শ্রমিকেরা। ক্ষোভ বেশি করে ছড়িয়েছে স্থায়ী কর্মীদের মধ্যে। কেননা তাঁদের দাবি, প্রথমে নিরাপত্তাকর্মীদের ছাঁটাইয়ের মাধ্যমে যে কাজ শুরু করেছে ইসিলে তা পরে অনান্য বিভাগের অস্থায়ী কর্মীদের ক্ষেত্রেও করা হবে। তাই অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে নাহলে সমস্ত কয়লাখনি থেকে কয়লা বার করা বন্ধ করে দেওয়া হবে। প্রয়োজনে কয়লাখনিগুলিতে উৎপাদনের কাজও পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে তাঁরা হুঁশিয়ারি দিয়েছে। বিক্ষোভাকারীদের দাবি, যে সব অস্থায়ী নিরাপত্তারক্ষীদের ছাঁটাই করা হয়েছে তাঁদের কেউ ২০ বছর, কেউ ২৫ বছর কেউ বা ৩০ বছর ধরে কাজ করছেন। এতদিন কাজ করলেও এদের এখনও পর্যন্ত স্থায়ী নিরাপত্তারক্ষীর তকমা দেওয়া হয়নি, সেইরকম সুযোগসুবিধাও তাঁদের দেওয়া হয় না। উপরন্তু এখন তাঁদের রাতারাতি কেটে ছেঁটে ফেলা দেওয়া হচ্ছে।এখন এই ১৭৩জনের সংসার কীভাবে চলবে বলেও তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন।
আরও পড়ুন রাজ্যে বন্ধ হতে চলেছে প্রায় ৫০০ বেসরকারি ডিএলএড কলেজ
প্রসঙ্গত, গত জুলাই মাসেও ইসিএলের মোট ১১ টি ইউনিটের অস্থায়ী নিরাপত্তারক্ষীদের ছাঁটাই করা হয়। পরিবর্তে নিজস্ব কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করে ইসিএল। তখনও একাধিক কর্মী ইসিএলের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন। বৃহস্পতিবার সালানপুরের আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, তাঁরা স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেসের ঝান্ডার তলায় এই আন্দোলন করছে। বিধায়ক বিধান উপাধ্যায়, স্থানীয় তৃণমূল নেতা অসিত সিং প্রত্যেকেই তাঁদের সঙ্গে রয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত তাঁদের কাজে পুনর্বহাল না করা হয়, ততক্ষণ তাঁদের আন্দোলন চলবে। যদিও এই বিষয়ে ইসিএল এর পক্ষ থেকে কিছু জানা যায়নি। তবে বিক্ষোভকারীরা জানিয়েছেন, ইসিএল ম্যানেজমেন্ট চুরি করার জন্যই এই সংস্থা লাভের মুখ দেখতে পারছে না। এখন ম্যানেজমেন্টের দাবি, নিরাপত্তারক্ষী রেখেও কয়লাচুরি ঠেকানো যাচ্ছে না। তার জেরেই ১৭৩জন অস্থায়ী নিরাপত্তারক্ষীকে কাজ থেকে ছাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। চুরুর দায় তাঁদের ঘাড়ে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।