নিজস্ব প্রতিনিধি: বাংলার(Bengal) জনমানসে এবং অর্থনীতিতে জাঁকিয়ে বসেছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) চালু করা লক্ষ্মীর ভান্ডার(Lakhir Bhandar) প্রকল্প। সেই প্রভাব এতটাই বেশি যে, রাজ্যের বিরোধী দলগুলির নেত্রীরা থেকে শুরু করে মহিলা সমর্থকেরা পর্যন্ত সেই প্রকল্পের জন্য আবেদন করেছেন বা আবেদনের দৌলতে সেই সুবিধা পাচ্ছেন। পরিস্থিতি এমনই যে শুধুমাত্র এই প্রকল্পের জন্য মহিলা ভোট হারাবার ভয়ে পাচ্ছে বাংলার তৃণমূল(TMC) বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। যার জন্য মহিলা ভোটারদের ধরে রাখতে নানান সময়ে কোদ রাজ্যের বিরোধী দলনেতা থেকে বিজেপি নেতানেত্রীদের বলতে শোনা যায় যে, বাংলায় বিজেপি ক্ষমতায় এলে লক্ষ্মীর ভান্ডারের প্রাপ্য ৩ হাজার টাকা বা ৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। কেউ কিন্তু এই প্রকল্প বন্ধ করে দেওয়ার কথা বলেননি। কিন্তু এবার সেটাই করে দিয়েছেন বিজেপিরই এক নেত্রী(BJP Woman Leader)। আর তার জেরে এই ভরা ভোটের বাজারে এখন তীব্র অস্বস্তি ছড়িয়ে পড়েছে পদ্মশিবিরে।
ঠিক কী হয়েছে? সোমবার উত্তরবঙ্গের কোচবিহার জেলার দিনহাটার সংহতি ময়দানে সেখানকার বিজেপি প্রার্থী নিশীথ প্রমাণিকের সমর্থনে বিজেপির একটি সভা ছিল। সেখানেই বিজেপির মহিলা নেত্রী দীপা চক্রবর্তী(Deepa Chakrabarty) হুমকি দেন যে, নরেন্দ্র মোদি সরকার দেশের ক্ষমতায় আবারও ফিরলে বাংলার নির্বাচিত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারকে ‘উৎখাত’ করা হবে এবং আগামী ৩ মাসের মধ্যে লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্প বন্ধ করে দেওয়া হবে। দীপার সেই বক্তব্যই পদ্মশিবিরকে তীব্র অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে। যে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার বাংলার কোটি কোটি মহিলার স্বনির্ভরতার পরিসর বাড়িয়েছে, সেই প্রকল্প বন্ধের হুমকি একজন মহিলাই দিচ্ছেন—বিষয়টি নিয়ে শুধু উত্তরবঙ্গে নয়, রাজ্যজুড়ে আলোড়ন শুরু হয়েছে। গতকাল রাত থেকেই দীপার সেই বক্তব্যের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়াতে। আর তাতেই উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে পদ্মশিবিরে। কেননা ভোটার সংখ্যা বিশ্লেষণ করলেই দেখা যাচ্ছে, লোকসভা ভোটে বাংলায় এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি আসনে ‘নির্ণায়ক ফ্যাক্টর’ হতে চলেছেন মহিলা ভোটাররাই। আর সেই মহিলাদেরই লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্প কিনা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন এক বিজেপি নেত্রী।
রাজ্যের ভোটার তালিকা বলছে, গত ৫ বছরে রাজ্যে পুরুষ ভোটারদের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলে মহিলা ভোটারের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। শুধু তাইই নয়, এবার রাজ্যের ৩টি আসনে পুরুষ ভোটারদের ছাপিয়ে গিয়েছেন মহিলারা। ২০১৯ সালে রাজ্যে মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ৭ কোটি ১ হাজার ২৮৪। এবার তা বেড়ে হয়েছে ৭ কোটি ৫৯ লক্ষ ২৫ হাজার ৫৭১ জন। শতাংশের বিচারে বৃদ্ধির হার ৮.৪। এই সামগ্রিক বৃদ্ধির হারে পুরুষদের পিছনে ফেলে ৯.৬ শতাংশ হারে মহিলা ভোটার বৃদ্ধি পেয়েছে রাজ্যে। সেখানে পুরুষ ভোটারের বৃদ্ধির হার ৭.২ শতাংশ। ২০১৯ সালে রাজ্যে মাত্র একটি কেন্দ্র, দমদমে পুরুষ ভোটারের তুলনায় মহিলা ভোটারের সংখ্যা বেশি ছিল। এবার আরও দু’টি কেন্দ্র—যাদবপুর এবং হুগলিতে পুরুষদের ছাপিয়ে গিয়েছেন মহিলা ভোটাররা। শুধু এই তিন কেন্দ্রই নয়। আরও অন্তত ১০টি কেন্দ্রে মহিলা ভোটার এবং পুরুষ ভোটারের কমবেশি পার্থক্য ১ শতাংশেরও কম। বাংলা তথা দেশের সমাজ বিজ্ঞানী এবং রাজনীতিবিদদের একাংশের ধারণা, পশ্চিমবঙ্গে কন্যাশ্রী এবং লক্ষীর ভাণ্ডারের মতো প্রকল্পই মহিলাদের ভোট আগ্রহ বাড়িয়েছে। আর সেখানেই কিনা লক্ষ্মীর ভান্ডার বন্ধ করার হুমকি দিচ্ছেন বিজেপি নেত্রী! মজার কথা দীপা যখন হুমকি দিচ্ছেন তখন তিনি নিজেই জানেন না তাঁর দলের প্রার্থী রেখা পাত্র স্বাস্থ্যসাথী এবং লক্ষ্মীর ভান্ডারের সুবিধাপ্রাপক। লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্প বন্ধ হলে রেখার কী হবে!