নিজস্ব প্রতিনিধি: স্বামী লিপ্ত পরকীয়ায়। অসহ্য জীবনযন্ত্রণা। শেষে আর সহ্য করতে না পেরে দুই সন্তান নিয়ে আগুনে পুড়ে আত্মঘাতী হলেন এক গৃহবধূ। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনা ঘটেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ক্যানিং মহকুমার কুলতলির মইপিটে। ঘটনায় ওই গৃহবধূ সহ তাঁর দুই সন্তানেরও মৃত্যু হয়েছে। মৃতরা হল বুল্টি মণ্ডল(২৮), তাঁর মেয়ে মণিকা মণ্ডল(৮) ও তাঁর ছেলে মানস মণ্ডল(৬)। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। স্ত্রী ও সন্তানদের মৃত্যুর খবর পেয়েই গা ঢাকা দিয়েছে স্বামী দীপক মণ্ডল। পুলিশ তার খোঁজ শুরু করেছে। যদিও প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, পারিবারিক অশান্তির কারণেই এই আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে।
জানা গিয়েছে, প্রায় বছর দশেক আগে কুলতলির ভুবনেশ্বরী গ্রামের মেয়ে বুল্টির বিয়ে হয় মইপিট থানার বিনোদপুর গ্রামের দীপকের সঙ্গে। দীপক পেশায় দিনমজুর, তাই সংসারে অভাব লেগেই থাকত বিয়ের পর থেকে। আর তা নিয়ে চলছিল স্বামী-স্ত্রীর সংসার। কিন্তু লকডাউনের সময় থেকে দীপক প্রতিবেশী এক মহিলার সঙ্গে বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক গড়ে তোলে। আর তা জানাজানি হতেই শুরু হয় দীপক ও বুল্টির মধ্যে অশান্তি। এই নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে বেশ কয়েকবার আপোষ মীমাংসা করে মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা হয়। গত বৃহস্পতিবার দীপককে ওই মহিলার সঙ্গে ঘণিষ্ঠ অবস্থায় দেখে ফেলে বুল্টি। আর তা ঘিরেই নতুন করে তাঁদের মধ্যে গণ্ডগোল শুরু হয়। শুক্রবার বুলটির বাপের বাড়ির লোকজন গিয়ে বিষয়টি মিটিয়ে আসেন।
অভিযোগ, সেদিন রাতেই বুল্টিকে মারধর করে দীপক। তারপর শনিবার বুল্টি মেয়ে মনিকা ও ছেলে মানসকে নিয়ে বাপের বাড়িতে চলে যায়। সেখানে তাঁর বাবা মহাদেব হালদার একাই থাকতেন। দীর্ঘদিন আগেই বাবাকে ছেড়ে চলে গিয়েছেন বুল্টির মা। ফলে বাপের বাড়িতে এসে বাবাকে পুকুরে মাছ ধরতে পাঠায় বুল্টি। বাবা জাল নিয়ে পুকুরে মাছ ধরতে গেলে সেই সময় দুই ছেলে মেয়েকে লেপের সঙ্গে বেঁধে দেয় বুল্টি। এরপর কেরোসিন তেল ঢেলে আগুন লাগিয়ে তিনজন একসঙ্গে আত্মঘাতী হয়। ঘর থেকে চিৎকার আর ধোঁয়া বের হতে দেখে ছুটে আসে প্রতিবেশীরা। ঘরের দরজা ভেঙে তাঁরা দেখেন, অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে তিনজন। গ্রামবাসীরা পুকুর থেকে জল দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। যদিও ঘরের আগুন নিভিয়ে ফেললেও বাঁচানো যায়নি তিনজনকে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তিনজনকে পাঠানো হয় কুলতলির জামতলা হাসপাতালে। সেখানে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা বুল্টি ও তাঁর দুই সন্তানকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে মইপিট কোস্টাল থানার পুলিশ।