নিজস্ব প্রতিনিধি: বাংলার(Bengal) পঞ্চায়েত নির্বাচনে(Panchayat Election) দলের শোচনীয় ফলাফলের নৈতিক দায় নিয়ে রাজ্যের বিরোধী দলনেতার পদ থেকে সরে দাঁড়ান নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী(Suvendu Adhikari)। এবার এমনই দাবি উঠে গেল বিজেপিরই অন্দরে। যারা এই দাবি তুলেছেন তাঁরা দলের আদি কর্মী এবং সঙ্ঘ ঘনিষ্ঠ। তাঁদের দাবি, শুভেন্দুর জন্যই দলে ব্রাত্য হয়ে থেকেছেন দলের আদি কর্মী থেকে নেতারা। বাংলার বুকে দলের ৬০’র ওপর বিধায়ক, ১৭জন সাংসদ, ৪জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থাকার পরেও দল ১টিও জেলা পরিষদ দখল করতে পারেনি। ৯টি জেলা পরিষদে বিজেপি(BJP) খাতাই খুলতে পারেনি। মাত্র ৬টি পঞ্চায়েত সমিতি দখল করতে পেরেছে দল। এই খারাপ ফল হয়েছে শুভেন্দুর বিভেদকামী নীতির জন্য। পদে পদে সংখ্যালঘুদের অপমান, সব সময় দলকে খাটো করে নিজেকে তুলে ধরা এবং থেকে থেকে শুধু পিসি-ভাইপোকে ব্যক্তিগত স্তরে আক্রমণ। দল, দলের আদর্শ, দলের নীতি কোনও কিছুই শোনা যায়না তাঁর মুখে। তাই দলের এহেন খারাপ ফলের জন্য তাঁকে বিরোধী দলনেতার পদ থেকে সরানোর দাবি তুলে বঙ্গ বিজেপির আদি নেতারা অমিত শাহকে চিঠি পাঠাচ্ছেন বলে জানা গিয়েছে।
আরও পড়ুন বাম-কংগ্রেসের বাড়ল, বিজেপির কেন কমলো – প্রশ্নের মুখে সুকান্ত
শুধু তাই নয়, বঙ্গ বিজেপির আদি নেতাকর্মীদের দাবি, শুভেন্দু তাঁর নিজের জেলাতেই(Purba Midnapur) দলকে না জেলা পরিষদে জেতাতে পেরেছেন, না বেশির ভাগ পঞ্চায়েত সমিতিতে জেতাতে পেরেছেন, না বেশির ভাগ গ্রাম পঞ্চায়েতে জেতাতে পেরেছেন। যার অর্থ মেদিনীপুরের মাটিতেই তাঁর আর গ্রহণযোগ্যতা নেই। তিনি রাজ্যের বিরোধী দলনেতার পদে থাকারও তাই যোগ্যতা হারিয়েছেন। তিনি সব সময় তাঁর নিজ অনুগামীদের নানা পদ পাইয়ে দিচ্ছেন। বঞ্চিত হচ্ছেন দলের আদি নেতারা। শুভেন্দু এমন একটা ভাব দেখাচ্ছেন যেন তিনি ছাড়া বাংলার মাটিতে আর কোনও বিজেপি নেতাই নেই। তিনি যেন বাংলায় বিজেপির মুখ ও মুখ্যমন্ত্রীর পদপ্রার্থী। তাঁর কাজকর্মের সঙ্গে দলের অনেক সময় কোনও যোগও থাকে না। দলের সবার সঙ্গে তিনি যোগাযোগ রেখেও চলেন না। শুধুমাত্র তাঁর জন্যই এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে সমস্ত অনুকূল পরিবেশ, পর্যাপ্ত সংখ্যক জনপ্রতিনিধি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়ক থাকা সত্ত্বেও কাঙ্ক্ষিত ফল হয়নি। উল্টে, বিধানসভার নিরিখে ১৬ শতাংশ ভোট হাতছাড়া হয়েছে পঞ্চায়েতে।
আরও পড়ুন RSS’র কথায় কান দিয়ে বঙ্গে বিপর্যয়ের মুখে বিজেপি
যদিও শুভেন্দুর অনুগামীরা এই তথ্য মানতে নারাজ। তাঁদের পাল্টা দাবি, ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ গ্রাম পঞ্চায়েত দখল করেছে দল। বিজেপি ৯ হাজার ৭২২টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে জয়ী হয়েছে। সংখ্যাটি ২০১৮ সালে ছিল প্রায় সাড়ে ৫ হাজার। কিন্তু আদিদের পাল্টা যুক্তি, ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে গ্রাম পঞ্চায়েত পর্যায়ে মোট আসন সংখ্যা ছিল ৪৮ হাজার। সেটা এবার ১৫ হাজার বেড়ে ৬৩ হাজার হয়েছে। ২০১৮ সালে প্রায় ৩৪ শতাংশ আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয় শাসক দল। এবার সেটা কমে হয়েছে ১২ শতাংশ। অর্থাৎ অনেক বেশি আসনে লড়াই হয়েছে। একই সঙ্গে মনোনয়নপত্র পেশের সংখ্যাও এবার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। তারপরেও এই ফল। সেই সময় দলের কাছে ছিলেন মাত্র ৩জন বিধায়ক আর ২জন সাংসদ। তারপরেও সাড়ে ৫ হাজার আসনে জয়ী হয়েছিল দল। এবার ১৭জন সাংসদ আর ৬০’র ওপর বিধায়ক থেকেও কিনা জেতা আসনের সংখ্যা ডবল হতে ব্যর্থ।
আরও পড়ুন নন্দীগ্রাম আর শুভেন্দুর নয়, লিড তৃণমূলের
দলের এই সব আদি নেতারা এখন দলের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর নেতাদের তীব্র কটাক্ষ হেনে বলছেন, ‘এখন বিজেপি বনাম বিজেপির লড়াই চলছে। এই সব নেতারা সারাদিন সোশ্যাল মিডিয়াতেই লড়াই চালান। মাঠেঘাটে তাঁদের দেখা মেলে না। এঁদের লজ্জা নেই! বাস্তবটা স্বীকার না-করে নিজেদের পিঠ নিজেরাই চাপড়াতে ব্যস্ত! কেন্দ্রীয় নেতাদের খুশি করতে জেলাওয়াড়ি ‘অবাস্তব’ রিপোর্টও পাঠানো হ্যেছে ভুরি ভুরি। দলের সাংসদ ও বিধায়কেরাও নিজেদের এলাকায় না কাজ করেছেন না সংগঠন নিয়ে মাথা ঘামিয়েছেন। যদি সেটাও হত তাহলে অন্তত ২০ হাজার গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে বিজেপি জিতে যেত।’