নিজস্ব প্রতিনিধি: বাংলার মানুষকে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে নিখরচায় চিকিৎসা পরিষেবা দিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee) চালু করেন স্বাস্থ্যসাথী কার্ড(Sasthasathi Card)। সেই কার্ডের দৌলতেই বাংলার বহু গরীব পরিবার নিখরচায় শুধু যে উন্নত মানের চিকিৎসা পরিষেবাই পেয়েছে তাই নয়, অনেকেরই কিন্তু জীবনও রক্ষা হয়েছে এই কার্ডের মাধ্যমে চিকিৎসা পরিষেবা পেয়ে। বিজেপি সহ বিরোধীরা এই কার্ড নিয়ে গুচ্ছের অভিযোগ তুললেও বাংলার মানুষ যে এই কার্ডের মাধ্যমে উপকৃত তা অস্বীকার করার উপায় নেই। এবার পূর্ব মেদিনীপুর(Purba Midnapur) জেলার অন্যতম শিল্পাঞ্চল তথা রাজ্যের শিল্পবন্দরনগরী হলদিয়ার(Haldia) এক রিক্সাওয়ালা কার্যত নতুন জীবন ফিরে পেলেন এই কার্ডের দৌলতে। তাঁর হিপ জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট সুসম্পন্ন হয়েছে এই স্বাস্থ্যসাথী কার্ডথাকার জন্যই।
জানা গিয়েছে, হলদিয়ার পীতাম্বরচকের বাসিন্দা পেশায় রিক্সাওয়ালা বছর ৬৫’র বাগাম্বর মাইতি সপ্তাহ দুই আগে ষাঁড়ের গুঁতোর মুখে পড়েন। সেই ধাক্কায় তাঁর কোমর ভেঙেছিল। এই বয়সে সেই কোমর জোড়া লাগবে না বলেই অনেকে ধরে নিয়েছিলেন। বাগাম্বর নিজেও ধরে নিয়েছিলেন এবার বিছানায় শুয়েই তাঁর জীবন কাটবে। কিন্তু ভেলকি দেখাল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বাস্থ্যসাথী কার্ড। দুর্ঘটনার পরে বাগাম্বরকে নিয়ে তাঁর বাড়ির লোকজন তাঁকে গ্রামীণ চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন প্রথমে। সেখানেই এক্সরে করে দেখা যায় কোমরের জয়েন্ট ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছে ষাঁড়ের গুঁতোয়। ইঞ্জেকশন দেওয়ার পরও তীব্র যন্ত্রণায় ছটফট করছিলেন বাগাম্বরবাবু। স্থানীয়দের পরামর্শে সেদিনই তাঁকে হলদিয়ার বি সি রায় হাসপাতালে(B C Roy Hospital) ভর্তি করে। ওই হাসপাতালের চিকিৎসক সৌম্য ঘোষ জানিয়েছেন, ‘ষাঁড়ের গুঁতোয় বাগাম্বরের কোমরের বাঁ দিকের অংশ ভয়ঙ্করভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। হিপ জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট করা ছাড়া দ্বিতীয় কোনও উপায় ছিল না ওনাকে ফের নিজের পায়ে দাঁড় করাবার জন্য। বেসরকারি হাসপাতালে এই ধরনের চিকিৎসায় ৩০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত খরচ পড়ে। স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকায় বি সি রায় হাসপাতালেই মাত্র ২ লক্ষ টাকায় সম্পন্ন হয়েছে। সেই খরচও রাজ্য সরকার বহণ করছে।’
হাসপাতালের সুপার বিধান রায় জানিয়েছেন, ‘হলদিয়া বি সি রায় হাসপাতালে এই প্রথম হিপ জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্টের মতো জটিল অপারেশন হল। চিকিৎসার পরিভাষায় এর নাম লং স্টেম বাইপোলার আনসিমেন্টেড হেমি অর্থোপ্লাস্টি। চিকিৎসক, নার্সদের ১২ জনের একটি দলের মিলিত প্রচেষ্টায় আমাদের এই কাজ সম্ভব হয়েছে। তিন-চারদিনের মধ্যে বাগাম্বরবাবুকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হবে। মাসখানেকের মধ্যে উনি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন। নিজের পেশায় ফিরতে ওঁর কোনও সমস্যা হবে না। হলদিয়ার মানুষের কাছে এটি সুখবর। কারণ, বাড়ির পাশেই স্বাস্থ্যসাথী কার্ড ব্যবহার করে জটিল অপারেশন সম্ভব। কারখানায় দুর্ঘটনা বা পথ দুর্ঘটনায় জখমদের ট্রমা অপারেশনগুলি নিয়মিত করছেন চিকিৎসকরা।’ বাগাম্বরের বড় ছেলে খোকন মাইতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছেন, ‘বাবা আবার হাঁটতে পারবেন এর থেকে ভাল খবর আর কিছু হতে পারে না। ভ্যানরিকশ চালিয়েই আমাদের সংসার চলে। স্বাস্থ্যসাথী কার্ড না থাকলে আমাদের মতো গরিব মানুষের পক্ষে এই অপারেশন করা সম্ভব হত না। বাড়ির পাশে এতবড় অপারেশন হতে পারে ভাবতেই পারছি না। এজন্য মুখ্যমন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা জানাই।’