নিজস্ব প্রতিনিধি: উনিশের লোকসভা নির্বাচনে বাংলা থেকে ১৮টি আসন পেয়ে দুই চোখে সোনালী স্বপ্ন দেখতে শুরু করে দিয়েছিলেন বঙ্গ বিজেপির(Bengal BJP) নেতারা। কার্যত সেই জয় ছিল বাংলার বুকে বিজেপির এক ঐতিহাসিক ও সর্বোচ্চ সাফল্য। কার্যত সেই সাফল্যের ভিতের ওপর দাঁড়িয়েই পদ্মশিবির বাংলা দখলের ছক কষতে শুরু করে। এমনকি বঙ্গ বিজেপির নেতাদের কথার ওপর অগাধ আস্থা রেখে একুশের বিধানসভা নির্বাচনে অমিত শাহ(Amit Shah) বাংলায় এসে শ্লোগান তুলেছিলেন ‘আবকে বার ২০০ পার’। বাস্তবে সেই দৌড় থেকে যায় লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকেরও নীচে। মাত্র ৭৭টি আসন পেয়ে বাংলায় থেমে গিয়েছিল বিজেপির দৌড়। সেই যে দৌড় থামল তারপর থেকে আর কোথাও বিজেপিকে সেভাবে দাগ কাটতেই দেখা যাচ্ছে না বাংলার বুকে। তাঁদের লড়াইটা এসি রুম আর হাইকোর্টের মধ্যেই সীমাব্দধ হয়ে গিয়েছে। ঠিক এই রকম অবস্থায় বঙ্গ বিজেপিকে কিছুটা হলেও অক্সিজেন দিলেন খোদ তৃণমূলের(TMC) সর্বভারতীয় সাধারন সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়(Abhishek Banerjee)।
আরও পড়ুন গ্রামোন্নয়ন প্রকল্পের ৯৭৯ কোটি টাকা বাংলাকে দিল মোদি সরকার
বাংলায় বিজেপির অবস্থা রীতিমত শোচনীয়। সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচনে। যা পরিস্থিতি তাতে ৩টি স্তর মিলেয়েও ২৫ শতাংশ আসনেও বিজেপি হয়তো প্রার্থী দিতে পারবে না। কেননা তাঁদের হয়ে ভোটে কেউই দাঁড়াতে চাইছে না। এই অবস্থায় অনেকেরই মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল, লোকসভায় তাহলে তৃণমূল কী রাজ্যের ৪২টি আসনের মধ্যে সবকটিতেই কী জয়ের মুখ দেখবে? সেই জায়গাতেই অভিষেক কিছুটা হলেও অক্সিজেন দিয়েছেন বিজেপি সহ বিরোধী শিবিরকে। তিনি জানিয়েছেন, ‘নিখুঁত পূর্বাভাস এত আগে করা যায় না। ভোটের মুখে ছবিটা আরও স্পষ্ট হবে। পশ্চিমবঙ্গে মোট ৪২টি লোকসভা আসনের মধ্যে ২২টিতে লড়াই হবে। বাকি ২০টিতে তৃণমূলের জয় নিশ্চিত। ওই ২২টির মধ্যে অন্তত ৫০ শতাংশ আমরা পাবই। ফল যদি খুব খারাপও হয়, ৩২টি আসন আমরা পাবই।’ অভিষেক অবশ্য এটা বলেননি বাকি আসন ঠিক কোন দল পাবে। তবে বাংলার রাজনৈতিক সমীকরণ এখন যা তাতে বাম(Left) বা কংগ্রেসের(INC) পক্ষে লোকসভায় ১টি আসন জেতাও সম্ভব নয়, তা সে যত জোটই হোক না কেন। তাই ধরে নেওয়াই হচ্ছে তৃণমূল ভিন্ন বাংলা থেকে যদি কেউ আসন বার করতে পারে তাঁরা হল বিজেপি। সেক্ষেত্রে বিজেপির প্রাপ্ত আসন অভিষেকের হিসাবে হতে পারে ১০ থেকে ১১টি।
আরও পড়ুন বাংলা শস্য বিমা প্রকল্পে ১৫ লক্ষ ২৪ হাজার কৃষক পেলেন ক্ষতিপূরণ
যদিও নানা সমীক্ষার রিপোর্ট বলছে, তৃণমূলের ফলাফল ২০২৪ এর নির্বাচনে আরও ভাল হতে পারে। কেননা গতবারে অর্থাৎ ২০১৯ সালে বিজেপির জেতা বহু আসনেই তাঁরা আর লড়াই করার মত জায়গাতেই নেই। এর মধ্যে যেমন রায়গঞ্জ, বালুরঘাট, ঝাড়গ্রাম, হুগলি, মেদিনীপুর রয়েছে তেমনি আছে আসনসোল, বর্ধমান-দূর্গাপুর, দার্জিলিং, বিষ্ণুপুর ও ব্যারাকপুর। লড়াই কিছুটা হলেও হবে বনগাঁ, রানাঘাট, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার মাটিতে। এর বাইরে লড়াই হতে পারে আরামবাগ, কাঁথি, তমলুক, উত্তর মালদা আসনে। অর্থাৎ বাংলার মাটিতে তৃণমূল বিজেপি সন্মুখ সমর হতে পারে মাত্র ১০টি আসনে। সেখান থেকে মেরেকেটে ৫টি আসনও বিজেপি বার করতে পারবে কিনা সেটাও একটা বড় প্রশ্ন। অনেক সমীক্ষক কার্যত এটা মেনে নিয়েছেন ২০২৪’র লড়াইয়ে ৪২’র মধ্যে তৃণমূল যদি ৪২টি আসনেই জিতে যায় তাহলেও অবাক হওয়ার মতো কিছু নেই। এমনকি সাগরদিঘীর ফলাফলের পরেও, বাংলায় তৃণমূলকে টক্কর দেওয়ার মত অবস্থা রাজ্যের সব লোকসভা কেন্দ্রে নেই।