নিজস্ব প্রতিনিধি: ‘বাবা বাংলাদেশ থেকে এসেছে। কিন্তু, তাঁর কাছে তো কোনও নথি নেই। আমার ভোটার কার্ড থাকলেও জন্ম শংসাপত্র নেই। আমি আর ভোট দিতে পারব না। কেন্দ্রীয় সরকার এবার আমাদের তাড়িয়ে দেবে।’ দেশজুড়ে বিতর্কিত CAA বা Citizenship Amendment Act, 2019 লাগু হওয়ার পর থেকেই নিজের ছেলের গলায় এই একটা কথাই শুনে আসছিলেন কলকাতা নেতাজিনগরের বাসিন্দা তপন সেনগুপ্ত। কিন্তু বুঝতে পারেননি, CAA-কে নিয়ে এই ভয়, আর এই উদ্বেগের জেরে তাঁর ৩৩ বছরের ছেলে দেবাশিষ সেনগুপ্ত নিজেকেই শেষ করে দেবে। দেশছাড়া হওয়ার আতঙ্কে গত বুধবার রাতে আত্মঘাতী হয়েছে দেবাশিষ। সেই মৃত্যুর খবর পেয়ে গতকাল রাতেই দেবাশিষদের বাড়িতে ৫ সদস্যের তৃণমূলের(TMC) প্রতিনিধি দলকে পাঠিয়ে দেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়(Abhishek Banerjee)। এদিন তিনি যখন কাটোয়ায় সভা করতে গেলেন তখন সেখানেই তুলে আনলেন দেবাশিষের মৃত্যুর ঘটনা। এক লহমায় কলকাতার টালিগঞ্জের নেতাজিনগরকে মিলিয়ে দিলেন অসমের সঙ্গে।
এদিন অর্থাৎ ২২ মারচ পূর্ব বর্ধমান(Purba Burdwan) জেলার কাটোয়ায়(Katwa) ছিল তৃণমূলের জনগর্জন সভা। সেখানে যোগ দিয়ে অভিষেক নিশানা বানান কেন্দ্রের এই কালা কানুনকে। সেই সূত্রেই তুলের আনেন দেবাশিষের মৃত্যুর প্রসঙ্গ। তুলে আনেন অসমের বুকে ঘটে যাওয়া NRC’র ঘটনা। তিনি বলেন, ‘গতকাল ৯৮ নম্বর ওয়ার্ড টালিগঞ্জে, ৩৩ বছরে একজন তরজাতা তরুণ কাগজ খুঁজে পাচ্ছে না বলে আতঙ্ক ভয়ে আত্মহত্যা করেছে, NRC’র ভয়ে, CAA’র ভয়ে। কী আছে জানেন ৪০ পাতার ওই CAA-তে। ৩৮টা পাতা শুধুই ফর্ম। সেই ফর্ম আপনারা যারা আবেদন করবেন তাঁদের ফিল আপ করতে হবে। আপনাকে জানাতে হবে আপনার সঙ্গে থাকা পাসপোর্ট পাকিস্তান, বাংলাদেশ নাকি আফগানিস্তানের। অসমে NRC’র পরে ১২ লক্ষ হিন্দুকে ডিটেনশান ক্যাম্পে চলে যেতে হয়েছে। কেন জানেন। এই CAA হল সেই NRC’র আগের ধাপ। আবেদন করলেই আপনি আর নাগরিক নন। আপনার কাছে থাকা Voter Card, Aadhar Card, PAN Card, Ration Card সব বাতিল হয়ে যাবে। আপনার কাছে নথি চাইছে, অথচ ওদের কাছে নথি নেই, ওরা বাংলার জন্য শেষ কবে আবাসের টাকা পাঠিয়েছে, ১০০ দিনের কাজের টাকা পাঠিয়েছে।’