নিজস্ব প্রতিনিধি: প্রায় এক দশক বাদে দার্জিলিং(Darjeeling) ও কালিম্পং(Kalimpong) জেলায় গত রবিবার অনুষ্ঠিত হল গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিন্সট্রেশন বা জিটিএ’র নির্বাচন(Election)। আগামিকাল অর্থাৎ বুধবার সেই নির্বাচনের ভোটগণনা ও ফলপ্রকাশ করা হবে। মোট ৪৫টি আসনের এই সরকারি সংস্থায় ক্ষমতায় কারা আসবে তা দেখতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন পাহাড়ের আমজনতার পাশাপাশি সমতলের মানুষও। কেননা পাহাড়ের এই নির্বাচন উত্তরবঙ্গের রাজনীতিতে বড়সড় বদল ঘটাতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন। কিন্তু এই নির্বাচন বয়কট করে এখন বিপাকে পড়েছে বিজেপি(BJP), মোর্চা(GJMM) ও জিএনএলএফ(GNLF)। কেননা পাহাড়ের ৬০ শতাংশেরও বেশি মানুষ এই জিটিএ(GTA) নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন।
রবিবার পাহাড়ে নির্বিঘ্নেই মিটেছে জিটিএ নির্বাচন। কোনও অভাব-অভিযোগ বা হিংসাত্মক ঘটনা ছাড়াই সেই নির্বাচন সাঙ্গ হয়েছে। সব থেকে বড় কথা পাহাড়ের মানুষ দীর্ঘদিন বাদে এবারে তাঁদের নিজের ইচ্ছামত ভোট দিতে পেরেছেন। কেননা এবারের নির্বাচনে কোনও নেতা বা দল নির্দিষ্ট কোনও ব্যক্তি বিশেষকে বা কোনও বিশেষ দলকে ভোট দেওয়ার জন্য কোনও হুইপ জারি করেননি। সম্পূর্ণ খোলামেলা গণতান্ত্রিক পরিবেশে ভোট হয়েছে সেখানে। আর তার জেরেই রবিবার ৬০ শতাংশেরও বেশি মানুষ পাহাড়ে নির্ভয়ে ও নির্বিঘ্নে ভোট দিয়েছেন, তাঁদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করেছেন। আর তা দেখেই অনেকেই এখন মনে করছেন জিটিএ নির্বাচন বয়কট করা ৩ দলের মিলিত ভোট পাহাড়ে এখন কোনওমতেই ৪০ শতাংশের বেশি নয়। এই অবস্থায় যদি জিটিএ-তে অজয় এডওয়ার্ডের হামরো পার্টি বা অনীত থাপার ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা ক্ষমতায় চলে আসে তাহলে আগামিদিনে এই ৩ দলের ভবিষ্যৎ কার্যত অন্ধকারে ঢাকা পড়ে যেতে পারে। সেই সঙ্গে ধাক্কা খাবে এই দলের পৃথক গোর্খাল্যান্ড রাজ্য গঠনের দাবিও। কেননা পাহাড়ের মানুষ বুঝিয়ে দিয়েছে তাঁরা আর বনধ ও হিংসাত্মক আন্দোলন চান না। তাঁরা চান উন্নয়ন ও শান্তি।
এই অবস্থায় অনেকেই মনে করছেন এবারে জিটিএ নির্বাচনের ফলাফল ত্রিশঙ্কু হতে চলেছে। কয়েক মাস আগেই দার্জিলিং পুরসভার নির্বাচন হয়েছিল। সেখানে বাজিমাত করেছিল অজয় এডওয়ার্ডের হামরো পার্টি। জিটিএ নির্বাচনে তাঁরা একক ভাবেই লড়াই করেছে। কারর সঙ্গে জোট না গড়ে তাঁরা ৪৫টি আসনেই প্রার্থী দিয়েছে। কিন্তু অনীত থাপার ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা অঘোষিত ভাবে তৃণমূলের সঙ্গে জোট গড়ে এবারে ভোটে লড়াই করেছে। ৩৫টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে অনীত থাপার দল। ১০টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে তৃণমূল। বিজেপি, মোর্চা ও জিএনএলএফ এই নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় এবারে মূলত লড়াই হচ্ছে হামরো পার্টির সঙ্গে ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা ও তৃণমূল জোটের। কিন্তু তারপরেও অনেকেই মনে করছেন এবারে নির্দিষ্ট কোনও দল জিটিএ’র ক্ষমতায় একক ভাবে আসতে পারবে না। কেননা এবারে বেশ কিছু নির্দল প্রার্থি যেমন ভোতে লড়াই করেছেন তেমনি সিপিএম ১২টি ও কংগ্রেস ৫টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। এরা ভোট কেটে হামরো পার্টি, ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা ও তৃণমূলের বেশ কিছু প্রার্থীদের বিপাকে ফেলে দিতে পারেন। এমনও হতে পারে বেশ কিছু আসনে এই নির্দল প্রার্থীরাই হয়তো জিতে গেলেন। তখন তাঁরাই কিন্তু পাহাড়ের নয়া কিংমেকার হয়ে উঠতে পারেন।
আর এখানেই বিপাকে পড়েছে বিজেপি, মোর্চা ও জিএনএলএফ। এই ৩ দলেরই কোনও নেতাই ভাবতে পারেননি পাহাড়ের এত সংখ্যক মানুষ বাড়ি থেকে বার হয়ে এসে ভোট দেবেন। কার্যত পাহাড়ের মানুষই এই ৩ দলের যাবতীয় হিসাবনিকেষ গুলিয়ে দিয়েছেন। আগামী দিনে জিটিএ’তে যে বা যারাই ক্ষমতাই আসুন না কেন তাঁর ওপর এই ৩ দলের কোনও নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। তাই যখন তখন এই ৩ দল আর বনধ ডেকে পাহাড়ের জনজীবনও স্তব্ধ করে দিতে পারবেন না। কেননা বিমল গুরুংয়ের কী পরিণতি হয়েছে সেটা এখন সবাই দেখতে পাচ্ছেন। তাই তাঁর দেখানো পথে এখন পাহাড়ের কোনও নেতাই হাঁটতে চাইবেন না। যিনিই হাঁটবেন তিনিই রাজনৈতিক ভাবে শেষ হয়ে যাবেন, যেমনটি হয়েছেন বিমল গুরুং।