নিজস্ব প্রতিনিধি: ৫ বছরের মধ্যে ছবিটাই আমূল বদলে গিয়েছে। উনিশের ভোটে পুরুলিয়ার(Purulia) মাটি থেকে যিনি ২ লক্ষেরই বেশি ভোটের ব্যবধানে জিতেছিলেন, এবার ২৪’র ভোটযুদ্ধে(Loksabha Election 2024) তিনিই চূড়ান্তভাবে একা হয়ে পড়েছেন। পাশে কার্যত কেউ নেই বললেই চলে। দলেরই একটি অংশ তাঁর বিরুদ্ধে চলে গিয়েছে। মুখ ফিরিয়েছে কুড়মিরা। প্রার্থী পরিবর্তন করার আবেদন জানিয়ে জেলা থেকেই চিঠি গিয়েছে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে। প্রচারের সময় কর্মীদের উপস্থিতি সেভাবে চোখেই পড়ছে না। মহিলাদের সংখ্যাও কার্যত হাতেগোণা। আর এবার তো দলেরই জোটসঙ্গী সরে দাঁড়াল পাশ থেকে। আর তাই সব মিলিয়ে পুরুলিয়ার মাটিতে ২৪’র ভোট যুদ্ধে চূড়ান্ত একা হয়ে পড়েছেন উনিশের ভোটে জেতা বিজেপির সাংসদ(BJP MP) এবং এবারেরও প্রার্থী জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো(Jyotirmay Singh Mahato)। বাংলার মাটিতে এত নিঃসঙ্গ বিজেপির কোনও প্রার্থীর ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে না।
উনিশের ভোটে অনেক কিছুই ছিল জ্যোতির্ময়ের পক্ষে। ছিল কুড়মি সমাজের সমর্থন। আদিবাসী সমাজের সমর্থন। দলের জোটসঙ্গী আজসুর সমর্থন। কিন্তু এবার সবার আগে কুড়মি সমাজের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাঁরা বিজেপিকে সমর্থন দেবেন না। বস্তুত কুড়মিদের এই ঘোষণাই পুরুলিয়ার মাটিতে সব ছবি বদলে দিয়েছে। ৫ বছর আগে জ্যোতির্ময়ের প্রচারে কাতারে কাতারে কুড়মিরা অংশ নিয়েছিল হলুদ পতাকা নিয়ে। এবার সেই ছবিটাই অদৃশ্য। ৫ বছর আগে জ্যোতির্ময়ের প্রচারে মহিলাদের ভিড় বেশ চোখে পড়তো। এবারে সেই মহিলাদের উপস্থিতি নিত্যদিনের প্রচারে কার্যত তলানিতে এসে ঠেকেছে। উনিশের ভোটে দলের সবাই ছিল জ্যোতির্ময়ের পাশে। আর এবার দলেরই একতা অংশ তাঁর বিরোধীতা করে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, বিজেপির পুরুলিয়া জেলা কমিটির প্রাক্তন সদস্য মনোজ মাহাত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অমিত শাহ, দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা, রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এবং রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীরর কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন প্রার্থী পরিবর্তন করার আর্জি জানিয়ে। আর এবার তো জ্যোতির্ময়ের পাশ থেকে সরে দাঁড়ালো বিজেপির জোটসঙ্গী আজসুও।
একুশের ভোটে পুরুলিয়ার মাটিতে বিজেপির সঙ্গে জোট হয়েছিল আজসুর। All Jharkhand Students Union বা AJSU দীর্ঘদিন ধরে বিজেপির জোটসঙ্গী। NDA’র শরিক দল। তবে বিজেপির সঙ্গে AJSU’র জোট ঝাড়খণ্ডে। বাংলাতে তাঁদের কোনও জোট কোনও কালেই ছিল না। কিন্তু একুশের বিধানসভা নির্বাচনের সময়ে বিজেপি পুরুলিয়া জেলার বাঘমুন্ডি বিধানসভা কেন্দ্রটি ছেড়েছিল AJSU-কে। সেই আসনে কিন্তু জিতেছিল তৃণমূল। শুধু তাই নয়, জেলার ৯টি আসনের মধ্যে বিজেপি ৬টিতে জয়ী হলেও ৩টিতে জয়ী হয়েছিল তৃণমূল। তার মধ্যে ছিল বাঘমুন্ডি বিধানসভা কেন্দ্রটিও। AJSU’র দাবি ছিল, তাঁদের ইচ্ছাকৃত ভাবে ওই আসনে হারিয়েছেন জ্যোতির্ময়। কেননা তিনি চাননি ঝাড়খণ্ডের রাজনৈতিক দলটি পুরুলিয়ার মাটিতে জমি পেয়ে যাক। সেই বিয়াব্দের ছায়া এবার পড়ছে লোকসভা নির্বাচনে। আজসু সরে দাঁড়িয়েছে প্রচার থেকে। তাঁরা জানিয়েছে, তাঁদের গুরুত্ব দিচ্ছে না বিজেপি। AJSU’র পুরুলিয়া জেলা সভাপতি অতুলচন্দ্র মাহাত সাফ জানিয়েছেন, ‘পুরুলিয়ায় আমাদের দলের ভোটটা বিজেপির দরকার। যদিও বিজেপি প্রার্থী বা জেলা সভাপতির হয়তো আমাদের ভোটের প্রয়োজন নেই। মানসম্মান তো সবারই রয়েছে। পুরুলিয়া জেলায় আমরা সম্পূর্ণ চুপচাপ বসে আছি। আমরা বাড়িতেই বসে থাকব।’
কিন্তু এতটা একা কেবন হয়ে পড়লেন জ্যোতির্ময়? কান পাতলে কিন্তু অনেক কথাই শোনা যাচ্ছে। বলছেন খোদ বিজেপির নীচুতলার নেতারাই। তাঁদের দাবি, রাজ্য সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর থেকেই জ্যোতির্ময় অনেক বদলে গিয়েছেন। দলেরই নেতাদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করে নিয়েছেন। দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে চাকরবাকরের মতো ব্যবহার করছেন। মহিলাদের সঙ্গে ব্যবহার নিয়েও অভিযোগ উঠছে। সব থেকে বড় কথা উনি নিজে কুড়মি সমাজের মানুষ হয়েও কুড়মিদের দাবি দাওয়াকে মান্যতা দেননি। নিজের শিকড়টাই উনি ভুলে গিয়েছেন। যদিও জ্যোতির্ময় এই সব অভিযোগ অস্বীকার করছেন। তাঁর দাবি, জেলার জনতা তাঁর সঙ্গেই আছেন। দলও পুরোপুরি তাঁর সঙ্গেই আছে। আগামিদিনে তাঁর হয়ে অমিত শাহ ও নরেন্দ্র মোদি দুইজনই প্রচারে আসবেন। ভোটের আগে প্রচারের শেষলগ্নে ঝড় তোলা হবে। তখন সব ছবি বদলে যাবে। তিনি আশাবাদী তিনি এবারেও ভোটে জিতবেন আর আগের বারের থেকে এবারেও মার্জিন বাড়বে।