নিজস্ব প্রতিনিধি: দল পাশে নেই। কার্যত দল তাঁর থেকে দূরত্ব বাড়াচ্ছে প্রকাশ্যেই। প্রশাসনও যে পাশে আছে এমন সুস্পষ্ট ইঙ্গিত মেলেনি। নিজে থেকেই শারীরিক অসুস্থতা দেখিয়ে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বিধি বাম। ষড়যন্ত্রে সামিল হতে রাজি হননি চিকিৎসকেরা। তাই ভর্তির সুযোগও মেলেনি। কার্যত খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে এসএসকেএম হাসপাতাল থেকে। কিন্তু আর চিনার পার্কের ফ্ল্যাটে ফেরত যাননি তিনি, বরঞ্চ ফিরে গিয়েছেন নিজ গড় বীরভূমের বোলপুরে(Bolpur)। যদিও রেহাই আর মিলছে না সিবিআই-য়ের হাত থেকে। রাতেই ই-মেল করেছে সিবিআই(CBI)। আর পরেরদিন সকালেই চিনার পার্কের বাড়িতে পৌঁছে গেল সিবিআই-য়ের নোটিস। আবার দিতে হবে হাজিরা। বুধ সকাল ১১টার মধ্যে কলকাতায় নিজাম প্যালেসে(Nijam Palace) সিবিআই কার্যালয়ে। যদিও সেই হাজিরাও তিনি দেবেন কিনা সন্দেহ। কেননা তীব্র আশঙ্কা আছে তাঁর গ্রেফতারির ক্ষেত্রে। এমনকি হাজিরা এড়ালেও যে ছাড় পেয়ে যাবেন তেমনও নয়। সেক্ষেত্রে বাড়িতে হানা দিয়ে পাকড়াও করতে পারে সিবিআই। তিনি ‘কেষ্ট’ থুড়ি বূরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল(Anubrata Mondol)।
গরুপাচার(Cattle Smuggling) কাণ্ডে আদালতের নির্দেশেই তদন্ত করছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই। আর সেই সূত্রে তাঁরা তদন্তে নেমে জানতে পেরেছেন, কয়লাপাচারের টাকার একটা বড় অংশই ঢুকেছে ‘কেষ্ট’ ঘনিষ্ঠদের পকেটে। যার মধ্যে অন্যতম হল ‘কেষ্ট’র ব্যক্তিগত দেহরক্ষী সায়গল হোসেন। যার কাছ থেকে নগদ, সোনা, সম্পত্তি মিলিয়ে প্রায় ১০০ কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছে। কিন্তু সিবিআই আধিকারিকদের ধারনা এই টাকা হিমশৈলের চূড়া মাত্র। তাই ‘কেষ্ট’র দিকেই তাঁদের সরাসরি নজর পড়েছে। কেননা সিবিআই আধিকারিকদের সায়গল এমন বেশ কিছু তথ্য দিয়েছেন যা দেখে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার আধিকারিকদের ধারনা অনুব্রত এই গরুপাচার ও তা থেকে টাকাপয়সার বখরা সম্পর্কে কার্যত সবতাই জানতেন। এমনকি সেই টাকা কোথায় আছে, কার কাছে আছে সেই সবও তিনি জানেন। আর সেই কারণেই অনুব্রত মণ্ডলকে জেরা করতে চাইছেন সিবিআই আধিকারিকেরা। সেই সূত্রেই বুধবার আবারও তাঁকে ডেকে পাঠানো হয়েছে নিজাম প্যালেসে। এর জন্য সোমবার রাতে ইমেলে চিঠি পাঠিয়ে দিয়েছে সিবিআই। এদিন অর্থাৎ মঙ্গলবার সিবিআই আধিকারিকেরা কলকাতার পাশে থাকা রাজারহাটের চিনার পার্কে অনুব্রত মণ্ডলের ফ্ল্যাটে গিয়ে নোটিস দিয়ে এসেছেন।
যদিও এত কিছুর পরে অনুব্রত মণ্ডল আগামিকাল আদৌ নিজাম প্যালেসে হাজিরা দেবেন কিনা তা নিয়ে খটকা আছে। তবে সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, হাজিরা এড়ালে সিবিআই আধিকারিকেরা কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে ‘কেষ্ট’র বোলপুরের বাড়িতে হানা দিতে পারেন। সেখানে তদন্তে অসহযোগিতা করলেই গ্রেফতারির পথে হাঁটতে পারেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনীর আধিকারিকেরা। কেননা কোনও আদালতই তাঁকে কোনওরকমের রক্ষাকবচ দেয়নি, বরঞ্চ সিবিআইয়ের সঙ্গে তদন্তে সহযোগিতা করার নির্দেশই দিয়েছে। সেই জায়গায় অনুব্রত মণ্ডল সহযোগিতা না করলে আগামিকালই বা কয়েক দিনের মধ্যেই গ্রেফতার হতে পারেন অনুব্রত। যদি তিনি হাজিরা না দেওয়ার কারন হিসাবে শারীরিক অসুস্থতাকেও তুলে ধরেন তাহলেও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনীর আধিকারিকেরা ঠিক করে রেখেছেন যে প্রয়োজনে দিল্লিতে বা ভুবনেশ্বরের এইমসে নিয়ে গিয়ে তাঁর চিকিৎসা করানো হবে। দেখা হবে যে সব শারীরিক সমস্যার কথা তিনি বলছেন জেরা এড়ানোর জন্য তা কতখানি সঠিক বা বেঠিক। এরই পাশাপাশি তৃণমূল সূত্রে এটাও জানা গিয়েছে, দল চাইছে সিবিআইয়ের কাছে হাজিরা দিন অনুব্রত। যদিও তাতে সায় নেই স্বয়ং ‘কেষ্ট’র।