নিজস্ব প্রতিনিধি: আম্ফানের ক্ষত এখনও শুকিয়ে যায়নি বঙ্গের বুকে। তারই মধ্যে চোখ রাঙাচ্ছে নতুন এক সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’(Seatrang)। গত মঙ্গলবার ইন্দোনেশিয়ার বান্দা উপকূলে সৃষ্ট নিম্নচাপ ক্রমশ এগিয়ে আসছে বঙ্গোপসাগরের(Bay of Bengal) দিকে। বুধবার সকালের মধ্যে তা নিরক্ষীয় ভারত মহাসাগর পেরিয়ে পা রাখে দক্ষিণ পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে। বৃহস্পতিবার সকালে তার অবস্থান মধ্য বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণাংশে। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের প্রাথমিক অনুমান এই নিম্নচাপ এদিন থেকেই ধীরে ধীরে শক্তি বাড়াতে শুরু করে দেব। সেই সঙ্গে তা এগিয়ে আসতে শুরু করে দেবে পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব দিকে। আগামী রবিবারই সে পরিণত হবে ঘূর্ণিঝড়ে(Cyclone)। তারপরেই সে বাঁক নিয়ে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম উপকূল বা উত্তর মায়ানমার উপকূলে আছড়ে পড়তে পারে। কিন্তু সে যদি বাঁক না নেয় তাহলে কিন্তু তা সোজা হাজির হবে বাংলা(Bengal) ও ওড়িশা(Orrisa) উপকূলে। তাই বাংলা এখনও সম্পূরড়ন ভাবে বিপদমুক্ত নয়। তার থেকেও বড় কথা ‘সিত্রাং’ বাংলায় না এলেও বাংলার পরিমণ্ডল থেকে জলীয় বাষ্প শুষে নেওয়ার কাজ শুরু করে দিয়েছে। আর তার জেরে গরম যেমন বেড়েছে তেমনি বেড়েছে আর্দ্রতা। আর তার জেরেই সাত সকাল থেকেই বাড়ির বাইরে পা রেখলেই ঝরছে ঘাম।
দিল্লির মৌসম ভবন জানিয়েছে, ‘সিত্রাং’ বাংলাদেশ ও মায়ানমার উপকূলে আছড়ে পড়বে ঘন্টায় ১৫০কিমি গতিবেগে। অন্তত এখনও পর্যন্ত এমন সম্ভাবনাই বেশি। কিন্তু এটাই যে হবে তা জোর গলায় বলা যাচ্ছে না। কেননা প্রকৃতির অনেক নিয়মই এখন যথাযথ ভাবে মিলছে না। বিশ্ব উষ্ণায়ন অনেক কিছুই বদলে দিয়েছে। তাই বদলে যাচ্ছে বাতাসের অভিমুখ থেকে বৃষ্টিপাতের পরিমাণও। মরুভূমিতে ঝরছে বরফ আর পাহাড়ে গলছে হিমাবাহ। তাই দক্ষিণ এশিয়া জুড়েই আবহাওয়ায় বিস্তর পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই অবস্থায় ‘সিত্রাং’ যে বাংলাদেশ বা মায়ানমারেই আছড়ে পড়বে তা জোর গলায় বলা যাচ্ছে না। তবে সম্ভাবনা বেশি থাকছে ওই এলাকায় আছড়ে পড়ার। কিন্তু মধ্য বঙ্গোপসাগরে এসে সে কোন দিকে বাঁক নেবে তা নিয়ে একটা খটকা থেকেই যাচ্ছে। এই বাঁকেই কার্যত লুকিয়ে আছে বাংলার ভাগ্য। ‘সিত্রাং’ ডানে বাঁক নিলে তা যাবে বাংলাদেশ ও মায়ানমারের দিকে। আর বাঁয়ে বাঁক নিলে সে পৌঁছে যাবে বাংলা আর ওড়িশার উপকূলে। শনিবার সন্ধ্যায় কার্যত পরিষ্কার হবে এই সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় ঠিক কোথায় ল্যান্ডফল করতে চলেছে।
‘সিত্রাং’ যদি বাংলাদেশ আর মায়ানমারের দিকে না যায় তাহলে দক্ষিণবঙ্গের বেশ কিছু জেলা জুড়ে রীতিমত তাণ্ডব চালাবে। সেক্ষেত্রে দুই ২৪ পরগনা, কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, দুই মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলা সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবে। বাদ যাবে না ওড়িশাও। সেখানকার পুরী, খুরদা, কটক, জগৎসিংহপুর, কেন্দ্রপাড়া, জাজপুর, ভদ্রক ও বালেশ্বর জেলা সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবে। একই সঙ্গে এই দুই রাজ্যের মৎস্যজীবী যারা গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়েছেন তাঁদের শুক্রবার বিকালের মধ্যে মূল ভূখণ্ডে ফিরে আসতে বলা হয়েছে। শনিবার থেকে এই দুই রাজ্যের মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়ার ক্ষেত্রে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারী হতে পারে। তবে ‘সিত্রাং’ বাংলার দিকে আসুক বা না আসুক, এখানে গরম এখন বেড়েই যাবে। সেই সঙ্গে ঝরবে ঘাম। তবে যদি ‘সিত্রাং’ বাংলায় আসে তাহলে দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় প্রবল বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকবে। তার জেরে ২-৩দিনের জন্য পারা কিছুটা হলেও কমবে।