নিজস্ব প্রতিনিধি: জেলার একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়টি কেন্দ্র সরকারের। সেখানে সর্বভারতীয় স্তরের পড়ুয়ারা আসে। আশেপাশের দেশ থেকেও পড়ুয়ারা আসে। তাই জেলার পড়ুয়াদের সেখানে জায়গা হতো না বললেই চলে। স্বাধীনতার পর থেকে টানা এতকাল পর্যন্ত বীরভূম(Birbhum) জেলার পড়ুয়াদের উচ্চশিক্ষার জন্য তাকিয়ে থাকতে হতো বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে। পরবর্তীকালে সেই তালিকায় যোগ হয়েছে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়, গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় ও বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু জেলায় ছিল না কোন রাজ্য সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। পরিবর্তনের প্রায় ১৩ বছরের মাথায় এবার সেই বীরভূম জেলা পেয়ে গেল রাজ্য সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। সেটাও আবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) হাত ধরে যার জন্ম হয়েছিল সেই বীরভূমের মাটিতেই। এদিন তাঁর হাত ধরেই উদ্বোধন হল বোলপুরের কাছেই গড়ে ওঠা বিশ্বমানের বিশ্ববাংলা বিশ্ববিদ্যালয়ের(Biswa Bangla University)।
২০১৬ সালে বীরভূম জেলা সফরে এসে বিশ্বভারতীর আদলে একটি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার কথা জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। দীর্ঘ সময় পর সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণ সম্পূর্ণ হয়েছে। গড়ে তোলা হয়েছে সমস্ত রকম আধুনিক সুবিধা ও বিশ্বমানের পরিকাঠামো যুক্ত ক্যাম্পাস। মুখ্যমন্ত্রীর হাতে উদ্বোধন হতেই এদিন উচ্ছ্বসিত সেই বিশ্ববাংলা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বোলপুরের রায়পুর-সুপুর অঞ্চলের শিবপুর মৌজায় ৩১ একর জায়গাজুড়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস গড়ে উঠেছে। ২০১৬ সালে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরে HIDCO’র তত্ত্বাবধানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণকার্য শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে আসবাব সরবরাহ করেছে West Bengal Small Industries Development Corporation LTD। নির্মাণকার্য চলাকালীনই ২০২০ সালে কোভিডের আবহেই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠনপাঠন শুরু হয়েছিল। বর্তমানে বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস ও অঙ্ক এই ৪টি বিষয়ে স্নাতকোত্তর স্তরে পড়ানো হয়। এই ৪ বিভাগে মোট ৩০ জন শিক্ষক রয়েছেন। পড়ুয়ার সংখ্যা কমবেশি ৪০০ জন। তবে এদিন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসের উদ্বোধন হল মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে।
বিশ্বমানের পরিকাঠামো তৈরি করে নজর কেড়েছে বিশ্ববাংলা কর্তৃপক্ষ। ছাত্রছাত্রীদের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে বিশ্বমানের ও অত্যাধুনিক সব রকমের সুযোগ সুবিধা। মূল ২০ একরের পাশাপাশি এই বিশ্ববিদ্যালয়কে ক্যাম্পাস লাগোয়া আরও ১১ একর জমি দেয় জেলা প্রশাসন। সেখানে UGC’র অনুমোদনক্রমে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ানোর ব্যবস্থা করা হবে বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ক্লাসের জন্য ১২টি ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিটি ভবনেই লিফট রয়েছে। প্রতিটি ক্লাসকে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত করার পাশাপাশি সুন্দরভাবে সাজানো হয়েছে। প্রতিটি ক্লাসঘরে প্রজেক্টর সহ স্মার্ট ক্লাসরুমের সুবিধা রাখা হয়েছে। ৪০ থেকে ৬০টি অত্যাধুনিক বেঞ্চ রাখা হয়েছে। ক্যাম্পাসে রয়েছে বিশাল লেক। এছাড়া খেলার মাঠও প্রস্তুত করা হয়েছে। যেখানে পড়ুয়ারা ফুটবল, ক্রিকেট, ভলিবল খেলতে পারবে। পাশাপাশি বিলিয়ার্ড, টেবিল টেনিসের মতো ইনডোর গেম খেলার ব্যবস্থাও রয়েছে। শরীরচর্চার জন্য রয়েছে জিম। সবমিলিয়ে ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার উপযুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলা হয়েছে। এদিন মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি তমলুক, আরামবাগ ও বারাসতে ৩টি নতুন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালও চালু হয়েছে। তবে এদিন সব থেকে বেশি লাভবান হয়েছে বীরভূমের পড়ুয়ারা, যারা এবার এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই উচ্চশিক্ষার সুযোগ নিতে পারবে। ভিন জেলার দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে না।