নিজস্ব প্রতিনিধি: উনিশের লোকসভা ভোট আর একুশের বিধানসভা নির্বাচন, এই দুই পর্বেই কাউকে দেওয়া হয়েছিল পৃথক গোর্খাল্যান্ড গঠনের আশ্বাস, কাউকে দেওয়া হয়েছিল পৃথক কামতাপুর রাজ্য গঠনের আশ্বাস, কাউকে বা দেওয়া হয়েছিল পৃথক উত্তরবঙ্গ রাজ্য গঠনের প্রতিশ্রুতি। সেই সবই আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল বিজেপির তরফে। নিট রেজাল্ট ছিল, উনিশের লোকসভা নির্বাচনে উত্তরবঙ্গের ৮টি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে ৭টিই গিয়েছিল বিজেপির দখলে। একুশের ভোটেও উত্তরবঙ্গের ৫৪টি আসনের মধ্যে ৩০টি আসনই গিয়েছিল বিজেপির দখলে। কিন্তু যে সব প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল তার একটিও বাস্তবের মাটিতে পা রাখেনি। সেই সব প্রতিশ্রুতিই এখন ব্যুমেরাং হচ্ছে পদ্ম শিবিরে উত্তরবঙ্গের বুকে। বাংলা ভাগের নেশায় মেতে ওঠা পদ্মশিবির নিজেরাই এখন উত্তরবঙ্গে(North Bengal) নিজ দলের অন্দরেই বিদ্রোহে বিদ্রোহে জেরবার, আর সেটাও ২৪’র ভোটের(Loksabha Election 2024) মুখে। যা অবস্থা জেতা আসনও বিজেপি(BJP) ধরে রাখতে পারবে কিনা সন্দেহ।
দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রে রাজু বিস্তাকে আবারও প্রার্থী করেছে বিজেপি। আর তার জেরে কার্শিয়াংয়ের বিজেপি বিধায়ক বিষ্ণপ্রসাদ শর্মা এবার নির্দক প্রার্থী হিসাবে লড়তে নামছেন মাঠে। আলিপুরদুয়ারে বিজেপি প্রার্থী করেছে মনোজ টিগ্গাকে। আর তার জেরে সেখানকার বর্তমান সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী জন বার্লার হাতে থাকা বিজেপির নিজস্ব চা-শ্রমিকদের সংগঠন মনোজের হয়ে প্রচারেই নামছে না, তাঁকে সমর্থনও করছে না। রাজবংশী মুখ নিশীথ প্রামাণিক কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। তিনি এবারও কোচবিহার থেকে বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন। অথচ রাজবংশীদের অন্যতম মাথা তথা বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ অনন্ত মহারাজ এখনও তাঁকে সমর্থন দেওয়ার কথা ঘোষণা করেননি। তাঁর অনুগামীরাও কেউ বিজেপির হয়ে কোনও প্রচার করছে না। জলপাইগুড়ি কেন্দ্রে বিজেপি এবারেও প্রার্থী করেছে চিকিৎসক জয়ন্ত রায়কে। কিন্তু উনিশের ভোটে তাঁর পাশে থাকা কামতাপুর পিপলস পার্টি এবার সরাসরি তাঁর বিরোধীতায় নেমে পড়েছে। এ তো গেল পাহাড় আর তরাই-ডুয়ার্সের গপ্পো। উত্তরবঙ্গের বাকি ৩ জেলাতেও তীব্র অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছে বিজেপি।
রায়গঞ্জে বিজেপি মুখ করেছে কার্তিক পালকে। তিনি জেলার কালিয়াগঞ্জ পুরসভার কংগ্রেসি বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। তৃণমূলের হাত ধরে হয়েছিলেন শহরের পুরপ্রধান। একুশের ভোটের পরে সেই তৃণমূল ছেড়ে চলে আসেন বিজেপিতে। হয়ে ওঠেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ঘনিষ্ঠ। এবার ২৪’র ভোটের টিকিটও পেয়ে গেলেন। কিন্তু এহেন দলবদলু প্রার্থীর হয়ে ভোট প্রচারে নামতেই চাইছে না বিজেপির আদি নেতাকর্মীরা। বালুরঘাটে দাঁড়িয়েছেন বঙ্গ বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তিনি তাঁকে হারাতে উঠেপড়ে লেগেছে নব্য বিজেপির একাংশ। সুকান্তের হারের মধ্যে দিয়ে তাঁরা শুভেন্দুর জয় খুঁজছেন। বাকি মালদা দুই কেন্দ্রের দুই প্রার্থীকে নিয়ে তীব্র অসন্তোষ পদ্মের নীচুতলায়। তাই উত্তর মালদায় না খগেন মুর্মু প্রচারে বেড়িয়ে ঝড় তুলতে পারছেন, না দক্ষিণ মালদায় শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী কোনও ভেলকি দেখাতে পারছেন। কার্যত উনিশের ভোটে উত্তরের জেতা ৭টি আসন ধরে রাখার লড়াইয়ে প্রতি মুহুর্তে পা পিছলে পড়ছে পদ্মের নেতা থেকে কর্মীরা।