নিজস্ব প্রতিনিধি: ভোট ঠেকাতে হাইকোর্টে দৌড় দিয়েও বিশেষ লাভ হল না বঙ্গ বিজেপির। তাই তাঁদের দৌড় এবার শুরু হল দেশের শীর্ষ আদালতের দিকে। যদি সেখানে মামলা ঠুকে কলকাতা পুরনিগমের ভোট আটকানো যায়। সপ্তাহ দুয়েক আগে কলকাতা হাই কোর্টে পুরভোট নিয়ে একটি জনস্বার্থ মামলা করেন বিজেপি নেতা প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়। মামলার বিষয় ছিল, কেন রাজ্যের সব ক’টি পুরসভায় বকেয়া ভোট এক সঙ্গে করানো হচ্ছে না? কেন শুধু কলকাতা ও হাওড়ার ভোট করানো হচ্ছে। মামলাকারীর তরফে আর্জিও রাখা হয়েছিল যাতে ফেব্রুয়ারি মাসে রাজ্যের সব পুরসভার নির্বাচন করানো যায় এবং তা যেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তার ঘেরাটোপে করানো হয়। সেই মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই এদিন রাজ্য নির্বাচন কমিশন কলকাতা পুরনিগমের নির্বাচনে ঘোষণা করে দেয়। বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করে দেয়। তার জেরে বঙ্গ বিজেপি নেতারা কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির দ্বারস্থ হয় ও এই নির্বাচনী বিজ্ঞপ্তির ওপর স্থগিতাদেশ জারি করতে বলেন। কিন্তু তা না হওয়ায় বিজেপি এখন সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করতে চলেছে।
গত মঙ্গলবার প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দায়ের করা মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এবং বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্য নির্বাচন কমিশনের আইনজীবীকে প্রশ্ন করেছিলেন ‘কেন সব পুরসভায় একসঙ্গে ভোট করানো হচ্ছে না?’ তার জবাবে কমিশনের আইনজীবী জানিয়েছিলেন তাঁরা হলফনামা দিয়েই যা জানাবার জানাবেন। সেই মতন গতকালই তাঁরা হলফনামা দিয়ে জানান, আগামী ১৯ ডিসেম্বর কলকাতা ও হাওড়া পুরনিগমে ভোট করাতে চাইছেন তাঁরা। তাতে সন্মতি রয়েছে রাজ্য সরকারেরও। সেই কথা শোনার পরেই আদালত মামলার শুনানি আগামী সোমবার পর্যন্ত স্থগিত করে দেয়। কিন্তু এদিনই কলকাতা পুরনিগম নিয়ে কমিশন বিজ্ঞপ্তি বের করে দেওয়ায় বিজেপি কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রশ্ন তোলে, জনস্বার্থ মামলার শুনানি যত দিন চলবে, তত দিন পুরভোট সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে না বলে জানিয়েছিল কমিশন। তারপরেও কেন এদিন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হল। সেই বিষয়ে এদিন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি বিজেপিকে দুপুর ১টার সময় তাঁর এজলাসে আসতে বলেন।
সেখানেই বিজেপির তরফে ভোট বিজ্ঞপ্তির ওপর স্থগিতাদেশ জানাবার আবেদন জানানো হয়। প্রশ্ন তোলা হয় বিচারধীন মামলায় কীভাবে কমিশন একতরফা ভাবে বিজ্ঞপ্তি জারি করে। যদিও এদিন প্রধান বিচারপতি কোনও স্থগিতাদেশ দেননি। খালি বিজেপির তরফে থেকে ভোটের স্থগিতাদেশ চেয়ে আরও একটি আবেদন জানাতে বলেছেন। সেই সঙ্গে আগামী সোমবার ফের এই মামলার শুনানির দিন ধার্য করেছেন। বস্তুত রাজ্যের তরফে এদিন অ্যাডভোকেট জেনারেল সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় সাফ জানিয়ে দেন, গতকালের হলফনামাতেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল ১৯ ডিসেম্বর কলকাতা ও হাওড়া পুরনিগমে নির্বাচন করাতে চায় রাজ্য নির্বাচন কমিশন ও রাজ্য সরকার। সেই মোতাবেকই বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে। হাওড়ায় কিছু আইনি জটিলতায় এখনই নির্বাচনী বিজ্ঞপ্তি জারি করা যাচ্ছে না। তবে কলকাতার ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা না থাকায় বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে। গতকাল কেউ ভোটের ওপর স্থগিতাদেশ চায়নি, আদালতও দেয়নি। তাই বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে। আগামী এপ্রিল মাসের মধ্যে রাজ্যের সব পুরসভায় ধাপে ধাপে ভোট করিয়ে নেওয়া হবে। কলকাতায় চিকিৎসা পরিষেবা সব থেকে ভালো পাওয়া যায়। তাই কলকাতাতেই প্রথম ভোট ঘোষণা করা হয়েছে।
বস্তুত কলকাতা হাইকোর্টে দৌড়াদৌড়ি করেও এদিন সেখান থেকে বিজেপিকে কার্যত খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে। কেননা বিজেপি যে স্থগিতাদেশ চেয়েছিল সেই স্থগিতাদেশ এদিন মঞ্জুর করেননি কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। তার জেরেই রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য এদিন জানিয়েছেন যে কলকাতা পুরভোটের ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে তাঁরা এবার সুপ্রিম কোর্টেও মামলা দায়ের করতে চলেছেন। যদিও রাজ্যের আইনজীবী মহলের দাবি, নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক নিরপেক্ষ সংস্থা। তাই বিজেপি তাঁদের নির্বাচনী বিজ্ঞপ্তির বিরুদ্ধে আদালতে গেলেও বিশেষ সুবিধা করে উঠতে পারবে না। কেননা বেনিয়মের কোনও ঘটনা ঘটে না থাকলে সুপ্রিম কোর্টও কোনও হস্তক্ষেপ করবে না এই ধরনের কোনও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের সিদ্ধান্তের ওপরে। তাছাড়া কলকাতা হাইকোর্টে যখন মূল মামলা এখনও বিচারাধীন রয়েছে সেখানে সুপ্রিম কোর্টও দ্রুত শুনানির পথে হাঁটবে না। তাই বিজেপির দৌড়াদৌড়িই সার হবে। নির্বাচনের স্থগিতাদেশ তাঁরা পাবে না।