নিজস্ব প্রতিনিধি: গ্রামের ক্ষমতা দখলের লড়াইকে কেন্দ্র করে গত বছর বীরভূম(Birbhum) জেলার রামপুরহাট(Rampurhat)-১ ব্লকের বড়শাল গ্রাম পঞ্চায়েতের(Barshal GP) বকটুই(Baktui) গ্রামে ২১ মার্চ সন্ধ্যায় খুন হয়ে গিয়েছিলেন ওউ গ্রাম পঞ্চায়েতেরই তৃণমূলের উপপ্রধান ভাদু শেখ। তাঁকে খুব কাছ থেকে গুলি ও বোমা মেরে খুন করা হয়। তারই পালটা বকটুই গ্রামে ১০ জনকে পুড়িয়ে খুন করা হয়। সেই ঘটনায় রাজ্যজুড়ে তীব্র অস্বস্তিতে পড়তে হয় শাসক শিবিরকে। কেননা যারা মারা গিয়েছিলেন তাঁরা সবাই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ ছিলেন। আগুনে পুড়ে মৃতদের মধ্যে ছিলেন মহিলা ও শিশুও। সেই ঘটনার CBI তদন্তের নির্দেশও দেয় আদালত। বাংলার সকলে অধীর আগ্রহে তাকিয়ে ছিলেন সেই বকটুইয়ের দিকে, কে সেখানে জেতে তা দেখতে। কেননা স্বজনহারানো পরিবারের একাংশ যোগ দিয়েছিলেন বিজেপিতে। প্রার্থীও হয়েছিলেন তাঁদের কেউ কেউ। কিন্তু এদিন দেখা গেল সেই বকটুইয়ের পাশাপাশি বড়শাল গ্রাম পঞ্চায়েত জুড়ে তৃণমূল(TMC) ঝড়।
আরও পড়ুন ‘No Vote to Mamata’ হয়ে গেল ‘Now Vote for Mamata’, ট্যুইট অভিষেকের
পরিসংখ্যান বলছে, বড়শাল গ্রাম পঞ্চায়েতের ২২টি আসনের মধ্যে ১১টিতে জিতেছে তৃণমূল। বিজেপি(BJP) জিতেছে ৮টি আসনে। বাম-কংগ্রেস প্রার্থীরা জয়ী হয়েছে ৩টি আসনে। সেই হিসাবে দেখতে গেলে ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের ফল ত্রিশঙ্কু। এই ২২টি আসনের মধ্যে বকটুই গ্রামে রয়েছে ৪টি আসন। তার মধ্যে ২টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছিল তৃণমূল। জিতেছিলেন লক্ষ্মী বিবি ও নূরে আলম। মঙ্গলবার ভোটের(Panchayat Election) ফলপ্রকাশের পর দেখা গেল বাকি ২টি আসনে জয়ী হয়েছেন তৃণমূলের দুই প্রার্থী রুবিনা বিবি ও নাজেমুল হক। বকটুইয়ের স্বজনহারাদের সকলেই ছিলেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। তারপরেও সেই স্বজনহারাদের একাংশ যোগ দেন তৃণমূলে। শুধু যোগ দেওয়াই নয়, তাঁদের কেউ কেউ বিজেপির প্রার্থী হয়েও দাঁড়িয়ে পড়েন। বগটুইকাণ্ডে প্রাণ হারিয়েছিলেন ডলি বিবি। তাঁর পুত্রবধূ সীমা খাতুন এ বার বিজেপির টিকিটে পঞ্চায়েত সমিতির আসনে বিজেপির প্রার্থী হয়েছিলেন। যদিও তিনি হেরেছেন। বকটুই ঘটনার অন্যতম সাক্ষী ছিলেন মিহিলাল শেখ। তাঁর স্ত্রী, মা, কন্যা এবং বোন অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে মারা গিয়েছিলেন। সেই মিহিলালের পরিবার থেকে কয়েক জন এ বছর বিজেপির টিকিটে পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থী হয়েছিলেন। মিহিলালের দিদি মেরিনা বিবি বকটুই গ্রামের বিজেপির প্রার্থী হন। তিনিও তৃণমূলের কাছে পরাজিত হয়েছেন।
আরও পড়ুন পুরাতন গড়ে তৃণমূলের দাপটের মধ্যেও ঘুরে দাঁড়াল কংগ্রেস
এদিনের জয়ের পরে রাজ্যের মন্ত্রী তথা স্থানীয় বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী যেভাবে বগটুই গ্রামে এসে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন এটা তার ফল। একইসঙ্গে এটা একটা কুৎসার জবাব। কিন্তু কীভাবে ওই এলাকায় বিজেপির প্রভাব বিস্তার করল সেটাও পর্যালোচনা করতে হবে।’ ঘটনা হচ্ছে, মিহিলাল অভিযোগ করেছিলেন, আশিসের নির্দেশেই অগ্নিকাণ্ড ঘটিয়েছিলেন তৃণমূল নেতা আনারুল হোসেন। পরে রামপুরহাটের প্রাক্তন ব্লক সভাপতি আনারুলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। যদিও মিহিলাল বা অভিযুক্ত আনারুলকে চেনেন না বলে জানান আশিস। মিহিলাল কয়েক মাস আগে জানিয়েছিলেন, তিনি প্রাণভয়ে ভীত। যদিও তারপরেও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন জমা দিতে যেতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। মিহিলালের পরিবারের বিজেপি প্রার্থীরা ভোটে জিততে পারলেন না। কেন পারলেন না?
আরও পড়ুন গীতা হাঁসদা কাণ্ডে মুখ পুড়ল বামেদের, হয়নি অপহরণ
ওয়াকিবহাল মহলের ধারনা, মুখ্যমন্ত্রী এবং তৃণমূল বার বার দাবি করেছেন বকটুই বিজেপির ষড়যন্ত্র। সেই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী স্বজনহারাদের যা দিয়েছেন তার ছিঁটেফোঁটাও বিজেপি তাঁদের দেয়নি। বিজেপি শুধু মিহিলালকে কাছে টেনে নিয়েছিল। গ্রামবাসীদের একাংশের অভিযোগ, মিহিলাল বিজেপির কাছ থেকে ভালো ভেটও পেয়েছেন। সেই জন্যই তাঁর পরিবারের একাধিক সদস্য দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন ভোটে। কিন্তু বিজেপির সঙ্গে এই ঘনিষ্ঠতা ভালো চোখে নেননি গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ। তাঁরা এই নির্বাচনে শুধু মিহিলালকেই ধাক্কা দেননি বিজেপিকেও সজোরে প্রত্যাখান করেছেন।