নিজস্ব প্রতিনিধি: পরিকল্পনা ছিল শাহের(Amit Shah) শাহি সফরের দিনই গায়ের জোরে জমি আর বাড়ি দুটিই দখল করার। সেই মতো ব্যবস্থাও হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সেই ব্যবস্থায় জল ঢেলে দিল আদালতের নির্দেশ। স্থানীয় থানার ওপর আদালত দায়িত্ব দিল বিতর্কিত জমি ও বাড়ি যেখানে রয়েছে সেখানে শান্তি বজায় রাখতে হবে। আর তার জেরে ধাক্কা খেল বিদ্যুতবাহিনী। নজরে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন(Amartya Sen)। তিনি এখন বিদেশে। তাঁর অনুপস্থিতিতেই বোলপুরের(Bolpur) শান্তিনিকেতনে(Shantiniketan) থাকা তাঁর পৈতৃক বাড়ি ‘প্রতীচী’(Pratichi) দখল করার ছক কষেছিল বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়(Viswa Bharati University) কর্তৃপক্ষ। আরও বলা ভাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর(Vidyut Chakarabarty) তাঁবেদার বাহিনী সেই ছক কষেছিল উপাচার্যেরই নির্দেশে। অন্তত বিশ্বভারতী সূত্রে তেমনতাই জানা গিয়েছে। কিন্তু তার আগেই অমর্ত্যের আইনজীবী বিষয়টি আদালত ও প্রশাসনের নজরে আনায় এদিন নেমে এল আদালতের বিশেষ নির্দেশ।
আরও পড়ুন সুপ্রিমদ্বারে বড় জয় রাজ্যের, নিশীথকাণ্ডে স্থগিত CBI তদন্ত
দীর্ঘ দিন ধরে চলা জমি বিতর্কে বিশ্বভারতী বারবার দাবি করেছে অমর্ত্য সেনের লিজ নেওয়া জমির পরিমাণ ১.৩৮ একর নয়, আসলে ১.২৫ একর। অর্থাৎ তিনি ১৩ শতক জমি জবরদখল করে রেখেছেন, যা বিশ্বভারতীর সম্পত্তি। এই মর্মে অমর্ত্য সেন শান্তিনিকেতনে আসার পর থেকে আইনি নোটিস পাঠিয়ে জমি হস্তান্তরের দাবি করে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। বিতর্কিত জমিতে উচ্ছেদের নোটিস নিয়ে অর্থনীতিবিদকে কিছু দিন আগেই চিঠি দিয়েছিল বিশ্বভারতী। অমর্ত্যের আইনজীবীর তরফে বিশ্বভারতীকে চিঠি দিয়ে তিন মাসের সময় চাওয়া হয়েছিল। তা অগ্রাহ্য করেই আগামী ১০ এপ্রিল পর্যন্ত সময় দিয়ে শুনানিতে হাজির থাকতে অমর্ত্য সেনকে ফের চিঠি দিয়েছিল বিশ্বভারতী। শুনানিতে না থাকলে আর কোনও সুযোগ না-ও দেওয়া হতে পারে বলেও চিঠিতে জানিয়ে দিয়েছে বিশ্বভারতী। এই অবস্থায় আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল অমর্ত্যের অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে তাঁর বাড়ি ও জমি দখল করতে পারে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সূত্রে জানা গিয়েছিল ১৪ এপ্রিল অর্থাৎ আগামিকাল, অমিত শাহ যখন বীরভূমে পা রাখবেন তখন কেন্দ্রীয় বাহিনীর মাধ্যমে অমর্ত্যের জমি ও বাড়ি দখল করবে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন শাহি সভার পাল্টা কর্মসূচি তৃণমূলের, ভিড় নিয়ে চিন্তা বিজেপির
সেই বিষয়টি সামনে আসায় অমর্ত্যের আইনজীবী গোরাচাঁদ চক্রবর্তী ১৪৫ ধারা চেয়ে বুধবার আবেদন জানান প্রশাসন ও আদালতের কাছে। সেই আবেদনেই সাড়া দিল বোলপুর এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। অমর্ত্য সেনের শান্তিনিকেতনের বাড়ি দেখভালের দায়িত্বে থাকা গীতিকণ্ঠ মজুমদার বোলপুর এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৪৫ CRPC অনুযায়ী আবেদন করেন। সেই আবেদনের ভিত্তিতেই বোলপুর এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আদালত এদিন নির্দেশ দিয়েছে শান্তিনিকেতন থানার ওসিকে। তাঁকে বলা হয়েছে অমর্ত্যের জমি বিতর্কের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত প্রতীচী বাড়ির চত্বরে শান্তি বজায় রাখার দায়িত্ব নিতে হবে পুলিশকেই। পাশাপাশি অমর্ত্য সেনের বাড়ির আশেপাশে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার সংক্রান্ত রিপোর্টও দিতে বলা হয়েছে শান্তিনিকেতন থানার ওসিকে। এই পরিস্থিতিতে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ অমর্ত্য সেনের অনুপস্থিতিতে জমির মাপ নিতে পারবেন না বলেই মনে করছেন আইন বিশেষজ্ঞরা।
আরও পড়ুন হাইকোর্টের রায়ের পরেও বাস ভাড়ায় নেই সুরাহা
উল্লেখ্য, অমর্ত্যের জমি বিতর্কের মাঝেই তাঁর বাড়িতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee) একেবারে প্রশাসন, ভূমি দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে হাজির হয়েছিলেন। অমর্ত্যকে মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে নানাভাবে যেমন আশ্বস্ত করেছিলেন তেমনি নোবেলজয়ীর জন্য বিশেষ নিরাপত্তারও ব্যবস্থা করে দেন। কিন্তু অমর্ত্য সেনের জমি নিয়ে নানা জটিলতা তৈরি হয়। তাঁকে কেন জমি থেকে উচ্ছেদ করা হবে না তা নিয়েও প্রতীচীর ঠিকানায় চিঠি পাঠিয়েছিল বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। এর সঙ্গে শুনানিতে হাজির হওয়ার জন্য বলা হয়েছিল। তবে তার মধ্যেই অমর্ত্য সেনের জমির মিউটেশন করে জেলা প্রশাসন। অর্থাৎ যে জমি নিয়ে বিতর্ক সেই জমিই মিউটেশন করা হয়েছে পূর্বেই। বাবার নামে যে জমি ছিল সেটি মাননীয় অমর্ত্য সেনের নামে বদল করা হয়েছে মাত্র। ১.৩৮ একর জমি অমর্ত্য সেনের নামে মিউটেশন করা হয়েছে।