নিজস্ব প্রতিনিধি: দুর্ঘটনার আবহেই সৌজন্যের ছবি ধরা পড়ল বাংলার বুকে। বৃহস্পতিবার বিকালে উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়ি ব্লকের দোমহণী এলাকায় লাইনচ্যুত হয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনার মুখে পড়ে গুয়াহাটিগামী বিকানের এক্সপ্রেস। সেই দুর্ঘটনা কেড়ে নিয়েছে ৯জনের জীবন। আহতের সংখ্যা ৩৬। এর বাইরেও অবশ্য অনেকে আহত হয়েছেন বলে যেমন দাবি উঠেছে তেমনি অনেকেই এই দুর্ঘটনার পর থেকে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছেন বলে তাঁদের পরিবারের তরফে দাবি করা হচ্ছে। যদিও রেলের তরফে জানানো হয়েছে, ৯জনের বেশি কারও দেহে সন্ধান মেলেনি দুর্ঘটনাগ্রস্থ ট্রেনটি থেকে। এই চাপানউতোর যখন তুঙ্গে উঠেছে তখনই স্থানীয় এক মসজিদের সহযোগীতায় এক আহত যুবককে খুঁজে পেল তাঁর পরিবার।
জানা গিয়েছে, অসমের ধওলা জেলার বাসিন্দা সফিকুল আলি বৃহস্পতিবারের ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত হয়ে জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। কিন্তু তাঁর সঙ্গে কোনও ফোন না থাকায় তিনি বাড়িতে কোনও খবর পাঠাতে পারেননি। শুক্রবার দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসেছিলেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তিনি জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালেও গিয়েছিলেন আহতদের দেখতে। সেই সময়েই তাঁর সফিকুলের বিষয়টি নজরে আসে। সফিকুল তাঁকে জানিয়েছিল, তাঁর কাছে মোবাইল না থাকায় তিনি বাড়িতে কোনও খবর দিতে পারেননি। এই কথা শুনে রেলমন্ত্রী নিজে উদ্যোগী হয়ে ডাক বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করে পিওন মারফত তার বাড়িতে খবর দেবার চেষ্টা করেন। কিন্তু সেই চেষ্টা বিফল যেতে স্থানীয় মসজিদ কমিটির পক্ষ থেকে মাইকের মাধ্যমে সফিকুকের বিষয়টি বার বার ঘোষণা করতে শুরু করে দেওয়া হয়। তার জেরেই সফিকুলের পরিবার তাঁর সন্ধান পায় ও এদিন জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে এসে তাঁর সঙ্গে দেখাও করে। গোটা বিষয়টি রেলের তরফে টুইট করে তুলে ধরা হয়েছে।
এদিকে ট্রেন দুর্ঘটনায় যারা মারা গিয়েছেন তাঁদের সকলের দেহ তাঁদের পরিজনদের হাতে তুলে দিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৩ জন ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের উপস্থিতিতে নিহতদের মৃতদেহগুলি জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্তের পর তাঁদের পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তারপর রাজ্য পুলিশের তরফে মৃতদেহগুলি অ্যাম্বুলেন্সে চাপিয়ে তা এসকর্ট করে কোচবিহার, আসানসোল, অসম ও উত্তরপ্রদেশে মৃতদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এখনও পর্যন্ত যে ৯জন মারা গিয়েছেন এই দুর্ঘটনায় তাঁদের মধ্যে ৫জন কোচবিহার জেলার ও ১জন করে বাসিন্দা রয়েছেন আসানসোল, অসম ও উত্তরপ্রদেশের।