নিজস্ব প্রতিনিধি: নাটকীয় পরিবর্তন। আর সেই পরিবর্তনই স্কুল সার্ভিস কমিশনের চার উপদেষ্টার বিপদ আরও বাড়িয়ে দিল। সোমবার কলকাতা হাইকোর্টে(Calcutta High Court) এসএসসি’র গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি(Group-D), নবম দশমের শিক্ষক দুর্নীতি নিয়ে হওয়া মামলা সহ মোট ১০টি মামলার শুনানি ছিল বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন এবং বিচারপতি রবীন্দ্রনাথ সামন্তর ডিভিশন বেঞ্চে(Division Bench)। কিন্তু এদিন শুনানির শুরুতেই বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন জানিয়ে দেন ব্যক্তিগত কারণে তিনি এই মামলাগুলি থেকে সরে যাচ্ছেন। শুধু তিনিই নয়, গোটা বেঞ্চই এই মামলাগুলি থেকে সরে যাচ্ছেন। এই অবস্থায় এদিন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গেল বেঞ্চ(Single Bench) নির্দেশ দেয় যে এসএসসি’র(SSC) ৪ কর্তাকে এদিনই কলকাতার নিজাম প্যালেসে গিয়ে সিবিআই-য়ের কার্যালয়ে হাজিরা দিতে হবে। সেই হাজিরা দেওয়ার বিষয়টি দেখবেন কলকাতা পুলিশ ও বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের কর্তারা।
স্কুল সার্ভিস কমিশন বা এসএসসি-র নিয়োগ সংক্রান্ত একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠন করেছিল রাজ্য সরকার। সেই কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন শান্তিপ্রসাদ সিনহা। ওই সব মামলায় কলকাতা হাইকোর্টেরই বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এই শান্তিপ্রসাদকেই ঘটনার ‘কিংপিন’ বলে অভিহিত করেছিলেন। সেই জায়গা থেকে দাঁড়িয়েই তিনি ঘটনার সিবিআই তদন্তের যেমন নির্দেশ দিয়েছিলেন তেমনি সিবিআই-কে দ্রুত শান্তিপ্রসাদ সহ এসএসসি’র বাকি চার উপদেষ্টাকেও জেরার করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই নির্দেশের জেরে শান্তিপ্রসাদ কলকাতার নিজেম প্যালেসে গিয়ে সিবিআইয়ের কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হলেও বাকি ৪ সদস্য তা করেননি। তাঁরা কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ওই জেরা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার জন্য। সেই মামলারই শুনানি ছিল এদিন বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন ও বিচারপতি রবীন্দ্র সামন্তের ডিভিশন বেঞ্চে। কিন্তু এখন আর এই মামলার শুনানি হচ্ছে না। আগামিকাল এই মামলার শুনানি হতে পারে বলেই জানা গিয়েছে। সম্ভবত এদিন বিকালের মধ্যেই কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব জানিয়ে দেবেন আগামিকাল বা কবে এই মামলার শুনানি হবে আর তা কোন বেঞ্চে হবে।
এরপরেই এসএসসি’র ৪ কর্তা সুকান্ত আচার্য, প্রবীর কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, অলোককুমার সরকার এবং তাপস পাঁজা এদিন ফের কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হন। তাঁদের আবেদন ছিল, শান্তিপ্রসাদ যদি সিবিআইয়ের জেরা থেকে সাময়িক অব্যাহতে পেতে পারেন তাহলে তাঁরা কেন সেই সুযোগ পাবেন না! আদালত যেন তাঁদেরও সিবিআইয়ের জেরা থেকে অব্যাহতি দেয়। কিন্তু এই আর্জি এদিন শোনামাত্রই খারিজ করে দেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। শুধু খারিজ করাই নয়, তিনি এদিন স্পষ্ট নির্দেশ দেন এদিনই ৪ কর্তাকে কলকাতার নিজাম প্যালেসে সিবিআই-য়ের কার্যালয়ে হাজিরা দিতে হবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। তাঁর নির্দেশে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছেন, সুকান্ত আচার্য এবং প্রবীর কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়কে দুপুর ২টোর মধ্যে নিয়ে যেতে হবে সিবিআই-য়ের কার্যালয়ে। যেহেতু তাঁরা বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের এলাকায় থাকেন তাই ওই কমিশনারেটের কমিশনারকেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে যাতে ওই ২জন যাতে এদিন দুপুর ২টোর মধ্যে সিবিআই কার্যালয়ে হাজিরা দেন। প্রয়োজনে তাঁদের ধরে নিয়ে যেতে হবে পুলিশকে। বাকি দুই সদস্য অলোককুমার সরকার এবং তাপস পাঁজা এদিন দুপুর ৩টের মধ্যে সিবিআই কার্যালয়ে হাজিরা দেবেন। তাঁদের হাজিরার বিষয়টি দেখবেন, পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (সেন্ট্রাল)। এক্ষেত্রেও ওই ২জন নিজে থেকে না এলে পুলিশ দিয়ে তাঁদের পাকড়াও করে সিবিআই কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি।