নিজস্ব প্রতিনিধি: বাংলার(Bengal) বুকে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির তরফে বার বার অভিযোগ তোলা হচ্ছে বেশ কিছু ব্লকের বিডিও(BDO)’রা যাবতীয় নিয়ম ও আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে কাজ করে চলেছেন শুধুমাত্র শাসক দলের নেতাদের অঙ্গুলিহেলনে। একই রকম অভিযোগ শাসক দলের নেতারাও মাঝেমধ্যে তুলছেন বেশ কিছু বিডিও’র বিরুদ্ধে। সেক্ষেত্রে অভিযোগ থাকে বিডিও’রা কাজ করছেন বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের কথা শুনে। তার জেরে প্রশ্ন উঠেছে বাংলার এই আমলারা কী রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের শিকার হচ্ছেন? নাকি আমলাতন্ত্র রাজনীতির মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে? সেই প্রশ্নকেই আরও জোরদার করে দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের(Calcutta High Court) একটি রায়। মাস দুই আগেই কলকাতা হাইকোর্টে একটি রায়ে রাজ্যের এক বিডিও’কে ১ কোটি টাকা জরিমানা ধার্য করেচ। সেই টাকা নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরেও জমা দিতে পারেননি ওই আমলা। আর তার জেরেই এবার তাঁর বিরুদ্ধে নতুন করে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের হয়েছে। কিন্তু প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে? বাংলার বিডিও’রা কী রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের শিকার হচ্ছেন?
আরও পড়ুন বাংলায় নেই কোনও Sure Seat, মাথায় হাত বঙ্গ বিজেপির
ঠিক কী হয়েছে? ২০২০ সালে এমজিএনআরইজিএ প্রকল্প বা ১০০দিনের কাজের প্রকল্পের আওতায় পশ্চিম মেদিনীপুরের(Paschim Midnapur) দাসপুর(Daspur)-১ ব্লকের নন্দনপুর-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের রবিদাসপুর নদীবাঁধ থেকে তিওরবেড়িয়া হাইস্কুল পর্যন্ত পাকা রাস্তা তৈরি হয়। সেই কাজ নিয়েই সরব হন ওই এলাকারই বাসিন্দা কার্তিকচন্দ্র কাপাস। তাঁর অভিযোগ, তাঁকে না জানিয়ে জমি অধিগ্রহণের কোনও বিজ্ঞপ্তি জারি না করেই তাঁর ৪৬ শতক জমি জবরদখল করে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। রীতিমতো পুলিশি প্রহরায় রাতের বেলা ৫০টি হ্যাজাক জ্বালিয়ে ২০০ কর্মী নামিয়ে রাতারাতি রাস্তা তৈরি হয়। তিনি সেই ঘটনার প্রতিবাদ করলেও কোনও লাভ হয়নি। কেউ তাঁর কোনও কথা শোনেনি। তিনি বিষয়টি স্থানীয় পঞ্চায়েত থেকে শুরু করে জেলা প্রশাসনের শীর্ষস্তর অবধি জানিয়েও কিছু করতে পারেননি। কারোর দিক থেকেই এই অন্যায়ের প্রতিবিধানের কোনও ব্যবস্থা করা হয়নি। তার জেরেই তিনি বিষয়টি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন।
আরও পড়ুন শ্রমিকদের প্রভিডেন্ট ফান্ড নিয়ে বড় সিদ্ধান্ত মমতার সরকারের
সব পক্ষের বক্তব্য শুনে গত ফেব্রুয়ারি মাসে বিচারপতি শুভ্রা ঘোষ নন্দনপুর ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতকে বর্তমান বাজার মূল্যে জমির ক্ষতিপূরণ বাবদ অর্থ মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু সিঙ্গল বেঞ্চের ওই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হন নন্দনপুর ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান কল্যাণী দলুই। তার জেরে সেই মামলার শুনানি শুরু হয়ে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিচারপতি রাই চট্টোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে। পঞ্চায়েত প্রধানের আইনজীবী শুনানিতে দাবি করেন, রাস্তাটি নন্দনপুর ২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় তৈরি হলেও সেটি পঞ্চায়েত সমিতির। তাই গ্রাম পঞ্চায়েতকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ যুক্তিযুক্ত নয়। পঞ্চায়েত সমিতির সভাধিপতি এবং দাসপুর-১ ব্লকের এগজিকিউটিভ অফিসার হিসেবে বিডিও ওই রাস্তা তৈরির অনুমোদন দিয়েছিলেন। এক্ষেত্রে তাঁদেরই ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
আরও পড়ুন টালায় আবারও নয়া সেতু, উপকৃত হবেন কলকাতাবাসী
সমস্ত বক্তব্য শুনে ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ ছিল, দাসপুর-১ নম্বর ব্লকের এগজিকিউটিভ অফিসার হিসেবে বিডিও ওই রাস্তা তৈরির অনুমোদন দিয়েছিলেন। তাই ক্ষতিপূরণের অর্থ দু’মাসের মধ্যে তাঁকেই মেটাতে হবে। যদিও কার্তিকবাবুর আইনজীবী মৃণালকান্তি ঘোষ জানিয়েছেন, ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশের মেয়াদ পেরিয়ে গেলেও ক্ষতিপূরণ বাবদ এক পয়সা মেলেনি। তার জেরে গত বুধবার ওই বিডিওর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করা হয়েছে। জানুয়ারির প্রথম দিকে সেই মামলার শুনানির সম্ভাবনা। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে একজন বিডিও কীভাবে ২ মাসের মধ্যে ১ কোটি টাকা মেটাবেন? আর সময় পেলেও কী একজন বিডিও’র পক্ষে কী এই বিপুল পরিমাণ অর্থ মেটানো কোনও ভাবে সম্ভব? সব থেকে বড় কথা, যদি ধরে নেওয়াও যায় বিডিও শাসক দলের অঙ্গুলিহেলনে বা কোনও নেতার নির্দেশে এইভাবে জমিদখল করিয়েছিলেন তারপরেও কী প্রশ্ন থাকে না যে ওই বিডিও রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের শিকার হয়েছেন!