নিজস্ব প্রতিনিধি: সিএএ আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত প্রাক্তন বাম ছাত্র নেতা আনিস খানের খুনের ঘটনায় রবিবার সকাল থেকেই উত্তাল হয়ে উঠেছে রাজ্য রাজনীতি। বাম ছাত্র সংগঠনগুলি এদিন সকাল থেকেই একযোগে আনিস মৃত্যুর প্রতিবাদে রাজ্যজুড়ে আন্দোলনে নেমেছে। তাঁরা বিক্ষোভ দেখানোর পাশাপাশি এই খুনের ঘটনায় উচ্চপর্যায়ের তদন্তের দাবিও তুলেছে। বেশ কিছু ক্ষেত্রে তাঁরা রাস্তা অবরোধের ঘটনাও ঘটাচ্ছে। ঠিক এই রকম অবস্থায় আনিস খানের মৃত্যু নিয়ে টুইট করে প্রশ্ন তুলে দিলেন রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। এদিন তিনি টুইট করে জানিয়েছেন, ‘আনিসের হত্যাকারীদের শাস্তি চাই। পুলিশের পোশাক পরে তারাই খুন করে যারা পুলিশ আর সরকারকে ভিলেন বানিয়ে নিজেরা আড়ালে থাকতে চায়। পুলিশের পোশাক পরিকল্পিত ছদ্মবেশ নয় তো? ক্ষোভের অভিমুখ ঘুরিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য। ছেলেটির জন্য কার কার কী কী গাত্রদাহ হচ্ছিল, যথাযথ তদন্ত হোক।’
ঘটনাচক্রে মূল ঘটনার ৩৬ ঘন্টার পরেও পুলিশি তদন্ত সেভাবে শুরুই না হওয়ায় এদিন প্রশ্নের মুখে পড়ে গিয়েছে পুলিশের ভূমিকা। রবিবার সকালে আনিসের গ্রামের বাড়িতে তদন্তে গিয়ে কার্যত মারমুখী ক্ষুব্ধ মানুষের বিক্ষোভের মুখে পড়েন আমতা থানার এক পুলিশ আধিকারিক ও দুই সিভিক ভলেন্টিয়ার। কার্যত গ্রামবাসীদের সেই বিক্ষোভের মুখে পড়ে তাঁরা বাধ্য হন গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে। পরে ফরেন্সিক আধিকারিকদের সঙ্গে তাঁরা আবারও গ্রামে ফেরেন। এরপরে পরেই হাওড়া গ্রামীণ পুলিশ জেলার সুপার সৌম্য রায়কে রাজ্য পুলিশের সদর দফতর ভবানীভবনে তলব করা হয়। সূত্রে জানা গিয়েছে, পুলিশকে আনিসের মৃত্যুর বিষয়টি জানানো হলেও তাঁরা সেদিন কেন ঘটনাস্থলে যাননি? দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানোর একদিন পর কেন ঘটনাস্থলে গেল পুলিশ? এরকম একটা স্পর্শকাতর ঘটনার পর দেড়দিন পেরিয়ে গেলেও ঘটনাস্থল থেকে কেন নমুনা সংগ্রহ করা হয়নি? এহেন একাধিক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে পুলিশ সুপারকে। শোনা যাচ্ছে, আনিস মৃত্যুর তদন্তভার হাতে নিতে পারে সিআইডি। যদিও রাজ্য পুলিশের ডিজি জানিয়েছেন, একজন ডিএসপি পদমর্যাদার পুলিশ আধিকারিকের নেতৃত্বে এই ঘটনার তদন্ত হবে। যদিও আনিসের পরিবার এখন যেমন সরাসরি সিবিআই তদন্তের দাবি তুলেছে তেমনি বাম সাংসদ তথা আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, তাঁরা গোটা বিষয়টি নিয়ে দ্রুত আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছেন ও এই ঘটনার নিরপেক্ষ উচ্চপর্যায়ের তদন্তের দাবি জানাবেন।
এদিকে এদিনই সামনে এসেছে আনিসের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট। তাতে আনিসের মাথায় চোট ছিল বলে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি, পেটে অ্যালকোহলের গন্ধ পাওয়া গিয়েছে বলেও খবর। পেটে অ্যালকোহল ছিল কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। নমুনা ভিসেরা টেস্টের জন্য পাঠানো হয়েছে বলে খবর। তবে পরিবারের দাবি, এই ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ভুয়ো। পুলিশ সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, আনিসের বিরুদ্ধে দু’টি মামলা রয়েছে। একটি মামলায় আদালত থেকে ছাত্রনেতার বিরুদ্ধে সমনও জারি হয়। পুলিশ খতিয়ে দেখছে, কারও সঙ্গে আনিসের ব্যক্তিগত শত্রুতা ছিল কি না।
এদিকে এদিন আনিসের পরিবারের তরফে বেশ কিছু প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়েছে। তাদের প্রশ্ন, শুক্রবার রাতে পুলিশের পোশাক পরে যাঁরা তাঁদের বাড়িতে এসেছিলেন, তাঁরা কারা? যাঁরা এসেছিলেন, তাঁদের একজন পুলিশের পোশাকে থাকলেও বাকি তিন জন ছিলেন সিভিক ভলান্টিয়ারের পোশাকে? যাঁরা এলেছিলেন তাঁরা কি সত্যিই প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত? পুলিশ এবং সিভিক ভলান্টিয়ারের পোশাকে কেন আসার প্রয়োজন হল? তাঁরা জানতে চান, ওই আততায়ীদের প্রকৃত পরিচায়ই বা কী? তাঁরা কোথা থেকে এবং কার নির্দেশে এসেছিলেন? আনিসের বাবাকে যিনি বন্দুক ধরে আটকে রেখেছিলেন, তিনি আসলে কে? পরিবারের দাবি, ঘটনার পর থেকে আনিসের একটি ফোন মিলছে না। ফোনটি কোথায় গেল? যদিও এইসব প্রশ্নের উত্তর এখন পুলিশের কাছেও নেই।