নিজস্ব প্রতিনিধি: নিজের ফেসবুকে তিনি পোস্ট করেছেন। দলকে উদ্দেশ্য করেই পোস্ট করেছেন। আর সেই পোস্টকে ঘিরে এখন বঙ্গ বিজেপিতে কার্যত কুরুক্ষেত্র শুরু হওয়ার দশা। রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূলে প্রত্যাবর্তনের পরে পরেই বঙ্গ বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ তাঁর ফেসবুক পেজে পোস্ট করেছেন যে, ‘দলে অনেক দালাল আছে৷ এইসব দালালরা নির্বাচনের আগে আমাদের দলে ঢুকে গিয়েছিলেন৷ কিছুজন গিয়েছেন, কিছু এখনও রয়েছেন৷ তাঁরা উৎপাত করছেন৷ তাঁদের ছাঁটাই করব৷’ সেই পোস্ট ঘিরেই এখন কুরুক্ষেত্র দশা বঙ্গ বিজেপির অন্দরে। কেননা দিলীপবাবু পোস্টে কারও নাম নেননি। আর সেই কারনেই বঙ্গ বিজেপিতে থাকা দিলীপের বিরোধী শিবিরের নেতারা মনে করছেন দিলীপ তাঁদের উদ্দেশ্য করেই কথাটি বলেছেন। বস্তুত তাঁদের এটাও দাবি, সুকান্ত মজুমদার কার্যত বঙ্গ বিজেপির নাম কা ওয়াস্তে সভাপতি। দিলীপই এখনও দল চালাচ্ছেন, প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, আর যারা তাঁর সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করছেন তাঁদের বিরুদ্ধে কুকথার বান ছোটানো ছাড়াও পুলিশ দিয়ে পেটানোর হুমকি দিচ্ছেন। এখন তো দল থেকেই তাঁদের তাড়ানোর হুমকি দিয়ে বসলেন।
একুশের ভোটের বহু আগে থেকেই বিজেপিতে বিভিন্ন দল থেকে লোক আসা ও যোগদান করার ঘটনা ঘটে চলেছিল। তবে একুশের ভোটের ঠিক আগে তা কার্যত জোয়ারে পরিণত হয়েছিল। ভিন্ন দল থেকে আসা নেতা, কর্মী, মন্ত্রী, বিধায়ক, সাংসদদের মধ্যে সিংহভাগই ছিল তৃণমূল থেকে আসা পাবলিক। তাঁদেরই একটা অংশ আবার ভোট মিটতেই তৃণমূলে ফিরে যেতে শুরু করেছেন। রাজীবও ফিরেছেন। তার পরে পরেই দিলীপের এই পোস্ট কার্যত একদিকে যেমন ভিন দল থেকে আসা নেতাদের বিদ্ধ করেছে তেমনি দলের অন্দরে থাকা দিলীপ বিরোধীদেরও বিদ্ধ করেছে। আর তাই বঙ্গ বিজেপিতে এখন কুরুক্ষেত্রে বাঁধার আশঙ্কা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। বস্তুত দলের একটা বড় অংশই এখন দাবি তুলেছেন, ‘দালাল’ বলতে দিলীপ ঠিক কাদের বোঝাতে চেয়েছেন তা তিনি পরিষ্কার করুন। কেননা রাজীব তৃণমূলে ফিরে গেলেও এখনও বিজেপিতে রয়েছেন অর্জুন সিং, লকেট চট্টোপাধ্যায়, সৌমিত্র খাঁ, অনুপম হাজরা, রুদ্রনীল ঘোষ ও শুভেন্দু অধিকারীর মতো নেতারা। দিলীপ কী এদেরও ‘দালাল’ বলে দেগে দিলেন, সেই প্রশ্ন কিন্তু উঠে গিয়েছে।
দিলীপ অনুগামীদের অবশ্য বক্তব্য, দলের সবাইকে ‘দালাল’ বলে দেগে দেননি দিলীপ ঘোষ। দলে এমন অনেক নেতা আছেন যারা এসেছেন ভিন্ন দল থেকে। কিন্তু একুশের বিধানসভা নির্বাচনের সময় বা তার পর থেকে তাঁরা একদমই নিষ্ক্রিয় হয়ে রয়েছেন। এদের দলীয় কর্মসূচিতে দেখা যায় না। এমনকী মিটিং মিছিলেও থাকেন না তাঁরা। সংগঠনকে মজবুত করার পক্ষে এ ধরনের ঘটনা যে অন্তরায় তা অস্বীকার করার কোনও জায়গা নেই। তাঁরা ভিতরে ভিতরে দলের ক্ষতি করছেন। এবার সেই সব নেতাদের তাড়ানোর সময় এসেছে। দিলীপ এদেরকেই দালাল বলে চিহ্নিত করেছেন। যদিও এত সহজ সরল ব্যাখায় মন ভরছে না বঙ্গ বিজেপিতে থাকা বিক্ষুব্ধদের।