নিজস্ব প্রতিনিধি: বাংলার শাসক দলের তরফে অভিযোগ তোলা হচ্ছে কেন্দ্র সরকার গতবছরের ডিসেম্বর মাস থেকে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের(100 Days Work) টাকা আটকে দিয়েছে। তার জেরে মজুরি পাচ্ছেন না কয়েক লক্ষ গরিব মানুষ। এই বকেয়া টাকা না ছাড়লে দিল্লিতে গিয়ে কেন্দ্রকে ঘেরাও করার কড়া বার্তাও গতকালে একুশের মঞ্চ থেকে দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু তার মধ্যেই এবার সামনে এল এই বাংলার বুকেই ১০০ দিন কাজের প্রকল্পে উধাও হয়ে গিয়েছে কোটি কোটি টাকা। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনা ঘটেছে উত্তরবঙ্গের মালদা(Malda) জেলার চাঁচোল মহকুমার রতুয়া(Ratuya)-২ ব্লকের বিলাইমারি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। এই প্রকল্পে ওই এলাকায় তছরুপ(Corruption) হওয়ার টাকার পরিমাণ ১৩ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা। আর এই ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দা থেকে স্কুলশিক্ষকেরা মায় পঞ্চায়েতের উপপ্রধানও অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে। যদিও এই দুর্নীতির ঘটনা স্বীকারই করতে চাইছেন না পঞ্চায়েত প্রধান।
ঠিক কী হয়েছে? বিলাইমারি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় অভিযোগ উঠেছে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে ৪০০টি ভুয়ো স্কিম পাশ করে ১৩ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা আত্মসাত করা হয়েছে। আর এই দুর্নীতিতে জড়িত এলাকার পঞ্চায়েত প্রধান লুৎফর রহমান। গ্রামবাসীদের পাশাপাশি স্থানীয় স্কুলের শিক্ষকদের দাবি, কোনও কাজ না করেই শুধু বোর্ড বানিয়ে কোনও গোপন জায়গায় নিয়ে গিয়ে ছবি তুলে সেই ছবি প্রশাসনের কাছে জমা দিয়ে ১৩ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে এই গ্রাম পঞ্চায়েতে ৪০০টির বেশি স্কিমে সাড়ে ১৩ কোটি টাকার বেশি অর্থ বরাদ্দ হয়েছিল। কিন্তু কোনও কাজ না করেই সম্পূর্ণ টাকা পঞ্চায়েতের একাংশ তুলে নিয়েছে। যে সব স্কিমের নামে ওই টাকা খরচ করা হয়েছে বলে দেখানো হয়েছে সেই সব স্কিমের কথা কাউকেই জানানো হয়নি বলে এখন গ্রামবাসীরা দাবি করছেন। সম্প্রতি তথ্য জানার অধিকার সংক্রনাত আইনে গ্রাম পঞ্চায়েতে ১০০ দিনের কাজের কথা জানতে চান ওই পঞ্চায়েতের আজিজটোলার বাসিন্দা জেসারত আলি। তার জেরেই বেড়িয়ে এসেছ এই চাঞ্চল্যকর তথ্য।
সব থেকে বড় বিষয় এই দুর্নীতির ঘটনা স্বীকার করে নিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত বিলাইমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সেন্টু আলম। তিনি এই ঘটনায় কাঠগড়ায় তুলেছেন পঞ্চায়েত প্রধানকেই। সেন্টুর দাবি, ‘২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে ১০০ দিনের প্রকল্পে ৪০০টি স্কিমের মধ্যে একটিতেও কাজ হয়নি। এসব স্কিমের কথা আমাকেও জানানো হয়নি। ৪০০টি স্কিমের সাড়ে ১৩ কোটি টাকা পঞ্চায়েতের একাংশ আত্মসাৎ করেছেন। আমার স্ত্রীর নামে হর্টিকালচারের একটি স্কিম মঞ্জুর হয়েছিল। সেই টাকাও ওরা খেয়ে নিয়েছে। গরিব মানুষের জবকার্ড জমা রেখে টাকা তুলে নিচ্ছে। আমি চাই এই ঘটনার তদন্ত হোক, দোষীদের শাস্তি হোক।’ যদিও এই দুর্নীতির কথা অস্বীকার করছেন পঞ্চায়েতের প্রধান লুৎফর রহমান। এই ঘটনায় তিনি জানিয়েছেন, ‘এসব দুনীর্তির অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। মানুষকে ভুল বোঝাতে এরকম অভিযোগ তোলা হয়েছে।’ যদিও এই ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে জেলা প্রশাসন।