নিজস্ব প্রতিনিধি: বোলপুরের(Bolpur) বুকে রবীন্দ্র ঐতিহ্যবাহী পৌষমেলার(Poush Mela) আয়োজনে আরও একধাপ এগিয়ে যাওয়ার রাস্তা পেয়ে গেল বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়(Viswabharati University)। কেননা, এবার বিশ্বভারতীকে মেলা আয়োজনের জন্য খোদ অনুরোধ জানিয়েছেন রাজ্যের স্বনামধন্য পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত(Subhash Dutta)। তিনি শান্তিনিকেতনের(Shantiniketan) মেলার মাঠেই ফের পৌষমেলা আয়োজন করার অনুরোধ জানিয়ে বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত বর্তমান উপাচার্যকে চিঠি দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, পৌষমেলা করার জন্য শান্তিনিকেতন ট্রাস্টকে ১০ হাজার টাকা আর্থিক অনুদানও দিয়েছেন সুভাষবাবু। একইসঙ্গে এই ঐতিহ্যবাহী ও বোলপুরের অর্থনীতির অন্যতম স্তম্ভরূপী মেলা বন্ধ করে দেওয়ার জন্য তিনি কাঠগড়ায় তুলেছেন বিশ্বভারতীর প্রাক্তন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীকে। সুভাষের দাবি, পৌষমেলা পরিবেশ আদালত বন্ধ করেনি। বরং মানুষের দৃষ্টি ঘোরানোর জন্য প্রাক্তন উপাচার্য ‘এক তরফা’ ভাবে মেলা বন্ধ করেছিলেন।
বিদ্যুৎ চক্রবর্তী বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য থাকাকালীন শেষবার পৌষমেলা হয়েছিল ২০১৯ সালে। এর পরের বছর কোভিড এবং তার পরের দু’বছর পরিবেশ আদালতের নির্দেশ সহ একাধিক যুক্তি দেখিয়ে পৌষমেলার আয়োজন করেনি বিশ্বভারতী, থুড়ি বিদ্যুৎ। যা নিয়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে বিশ্বভারতীকে। যদিও সেই সব সমালোচনা গায়ে মাখেননি বিদ্যুৎ। বরঞ্চ তিনি মনোনিবেশ করেছিলেন শান্তিনিকেতন এবং বিশ্বভারতীতে রবীন্দ্র ঐতিহ্য ধ্বংস করে সেখানে গেরুয়াকরণ চালানোর অভিযানে। যদিও বিশ্বভারতী পৌষ মেলার আয়োজন না-করলেও ২০২১ ও ’২২ সালে বোলপুরের ডাকবাংলো মাঠে বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চের তরফে এবং জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় বিকল্প পৌষমেলার আয়োজন করা হয়ে। গত বছর মেলায় ভিড়ও হয়েছিল চোখে পড়ার মতো। তবে, বিশ্বভারতীই ফের পৌষমেলা আয়োজন করুক, এই দাবি গত কয়েক বছরে বারবার উঠেছে।
এই অবস্থায় গত সপ্তাহে বিদ্যুতের কার্যকালের মেয়াদ শেষ হতেই ফের পৌষমেলা নিয়ে আশা দেখতে শুরু করেছেন শান্তিনিকেতনের মানুষ। শুধু তাই নয় বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য সঞ্জয় কুমার মল্লিক(Sanjay Kumar Mallik) দায়িত্ব নিয়ে নিজেই ইঙ্গিত দিয়েছেন পৌষ মেলা ফেরানোর। সেই সঙ্গে শান্তিনিকেতনের বসন্ত উৎসবের দরজা সবার জন্য ফের খুলে দিতে। এ বছর বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ পৌষমেলা করবে কি না, সে ব্যাপারে তিনি সরাসরি কিছু না-বললেও বিভিন্ন সূত্রে জানা যাচ্ছে, মেলা করার বিষয়ে ইতিবাচক সাড়াই দিয়েছেন নতুন উপাচার্য। উল্লেখ্য, এর আগেও বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর একাধিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন সুভাষ।
বিদ্যুৎকে কটাক্ষ করে তিনি জানিয়েছেন, ‘বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় আজ রাহুমুক্ত। পূর্ণাঙ্গ সূর্যগ্রহণ আর নেই। বিশ্বভারতীতে নতুন সূর্য উঠেছে। আমি বর্তমান অস্থায়ী উপাচার্যকে অনুরোধ করছি, এ বছরে পৌষমেলা যেন শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট আয়োজন করে। অসংখ্য মানুষ এই মেলার দিকে তাকিয়ে থাকেন। এটি একটি ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান। এই মেলা প্রাক্তন উপাচার্য বন্ধ করে দিয়ে দোষ দিয়েছিলেন পরিবেশ আদালতকে। পরোক্ষে আমাকে অনেক গালমন্দ করেছিলেন। বিশ্বভারতী আজ রাহুমুক্ত হয়েছে, তাই আমিও কলঙ্কমুক্ত হতে এসেছি। আমি পৌষমেলার বিরোধী নই। কয়েকটি পরিবেশ বিধি না-মানার জন্য আমি আদালতে গিয়েছিলাম। আমি চাই পরিবেশ বিধি মেনে পৌষমেলা হোক মেলা প্রাঙ্গণেই।’