নিজস্ব প্রতিনিধি: প্রায় ১ সপ্তাহ জুড়ে চলা তাপপ্রবাহ ও দুই মাসের হাঁসফাঁস করা গরমের হাত থেকে দক্ষিণবঙ্গবাসীর রেহাই মিলেছে শনি সন্ধ্যায়। কালবৈশাখী(Kalbaishakhi) ঝড়ের দাপটের সঙ্গে বৃষ্টি বাংলার বুকে স্বস্তি নিয়ে এসেছে অনেকটাই। সেই সঙ্গে অবশ্য বেশ কয়েকজনের জীবনও কেড়েছে সে। রবিবার সকাল পর্যন্ত পাওয়া খবরের ভিত্তিতে জানা গিয়েছে, শনি সন্ধ্যার কালবৈশাখী ঝড়ের দাপটে ৫ জনের জীবনহানী(Death) ঘটেছে। নবান্ন সূত্রে খবর এদের রাজ্য সরকারের তরফে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। একই সঙ্গে এদিন আলিপুর আবহাওয়া দফতর থেকে জানানো হয়েছে আগামী ৫ মে পর্যন্ত রাজ্যে ঝড়বৃষ্টি চলবে। আর এই ঝড়বৃষ্টির হাত ধরেই বাংলায় কমবে পারা।
শনিবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ কলকাতার(Kolkata) ওপর দিয়ে মরশুমের প্রথম কালবৈশাখী ঝড় বয়ে যায় ঘন্টায় ৬৪ কিমি বেগে। সঙ্গে ছিল মুষলধারে বৃষ্টি(Rain)। যদিও শহরে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ রেকর্ড হয়েছে মাত্র ১৩.৭ মিলি.৷ সেই ঝড়বৃষ্টি যে শুধু কলকাতার বুকে ঘটেছে তেমন নয়। গতকাল দুপুর থেকেই রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে শুরু হয় ঝড়বৃষ্টি। এরপর সময় যতই এগিয়েছে সেই দুর্যোগ ধেয়ে এসেছে কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গের(South Bengal) জেলাগুলিতে। সেই ঝড়বৃষ্টির জেরে পারা নেমে স্বস্তি দিয়েছে আমজনতাকে, কিন্তু জীবনও কেড়েছে। বাঁকুড়া জেলায় গাছ উপড়ে পড়ে মারা গিয়েছেন সুনীল বাউড়ি(৫০) নামে এক ব্যক্তি। পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়গপুরে লোহার তোরণ ভেঙে পড়ে তাতে চাপা পড়েন এক বাইকারোহী। ঘটনার বেশ কিছুক্ষন পরে পুলিশ গিয়ে অনুপ হুই(২৮) নামে ওই যুবককে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানেই তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। একই সঙ্গে পূর্ব মেদিনীপুরভ জেলা থেকে ৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। জেলার নন্দীগ্রামে বজ্রাঘাতে মৃত্যু হয়েছে মা ও ছেলের। তাঁদের নাম ইন্দিরা দুয়ারি(৫০) ও মিলাল দুয়ারি(৩০)। এছাড়া ময়নায় গাছ পড়ে অমিত সামন্ত নামে এক ১১ বছরের কিশোরের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর পাওয়া গিয়েছে।
মৃত্যুর ঘটনা ছাড়াও আমজনতার দুর্ভোগের ঘটনাও সামনে এসেছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার কাকদ্বীপে মুড়িগঙ্গা নদীতে ঝড়ের দাপটে মাঝনদীতে একটি সরকারি লঞ্চ ডুবে যায়। যদিও পুলিশের তৎপরতায় ওই লঞ্চে থাকা চালক ও দুই কর্মী দ্রুত উদ্ধার হন। ঝড়ের দাপতে গাছ ভেঙে পূর্ব রেলের শিয়ালদা ডিভিশনের দক্ষিণ শাখায় ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়। একইরকম ভাবে ব্যাহত হয় তারকেশ্বর ও আরামবাগের মধ্যে ট্রেন চলাচল। এইসব কিছুর মধ্যে এদিন আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, আগামী আরও পাঁচ দিন ঝড়বৃষ্টি হবে রাজ্যে। একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখা উত্তরপ্রদেশ থেকে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। ওই অক্ষরেখাটিই জলীয় বাষ্প আকর্ষণ করছে। যার জেরে বাতাসে আর্দ্রতা বা়ড়ছে। কমছে শুষ্ক গরম। কমছে তাপমাত্রাও। সেই নিম্নচাপ অক্ষরেখাই দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির ঝরাবে আজ থেকে আগামী ৪দিন। একই সঙ্গে আগামিকাল থেকে কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গের বুকে বৃষ্টির পরিমাণ বাড়বে। কালবৈশাখীর সৌজন্যে রবিবার সকাল থেকেই সূর্যের সেই গনগনে তেজ উধাও৷ বইছে ঠান্ডা হাওয়া৷ শনিবার কলকাতার ওপর দিয়ে বয়ে যায় মরসুমের প্রথম কালবৈশাখী৷ কলকাতার পাশাপাশি ঝড়-বৃষ্টি হয়েছে হাওড়া, হুগলি, দুই ২৪ পরগনা, নদিয়াতেও৷ রবিবারও বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গের বেশিরভাগ জেলায়। সেই সঙ্গে শিলাবৃষ্টিরও সতর্কতা রয়েছে।