নিজস্ব প্রতিনিধি: ভরা বসন্তের সকালে এতদিন ধরে মিলছিল শীত আমেজ। সোম সকালে তার জায়গা দখল করল ঘন কুয়াশা। শুধু কলকাতা বা শহরতলি এলেকাই নয়, কার্যত গোটা বাংলাজুড়েই এদিন ভোর রাত থেকে ঘন কুয়াশা দাপট দেখাচ্ছে। আর সেই ঘন কুয়াশার জেরেই ধাক্কা খেল স্বাভাবিক জনজীবন। ধাক্কা খেল পরিবহণও। এদিন ভোর থেকেই দৃশ্যমানতা ৫০মিটারে নেমে যাওয়ায় কলকাতা বিমানবন্দর থেকে বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। গতি কমে লোকাল ট্রেন থেকে দূরপাল্লা ট্রেনেরও। রাস্তায় আলো জ্বালিয়ে গাড়ি চলাচল করতে যেমন দেখা গিয়েছে, তেমনি দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় ফেরি চলাচলও ব্যাহত হয়েছে। যদিও আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কুয়াশার দাপট কমবে।
সোমবার ভোর থেকেই ঘন কুয়াশার কারনে বাংলাজুড়েই দৃশ্যমানতা কমে কোথাও ৫০ মিটার কোথাও বা ১০০ মিটারের নীচে নেমে যায়। এর জেরে সব থেকে বেশি প্রভাব পড়ে বিমান চলাচলে। কলকাতা বিমানবন্দরে দৃশ্যমানতা ৫০ মিটারে নেমে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় বিমান চলাচল। ভোর ৪টে থেকে নেতাজী সুভাষ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কোনও বিমান ওঠানামা করতে পারেনি। ফলে কলকাতামুখী বিমানগুলিকে যেমন মাঝপথ থেকেই অন্য জায়গায় পাঠিয়ে দেওয়া হয় তেমনি কলকাতা বিমানবন্দর থেকে অন্য শহরগামী বিমান ধরার যাত্রীদের ভিড় উপচে পড়ে বিমানবন্দরের লাউঞ্চে। সকাল ৯টা পর্যন্ত কলকাতা থেকে সব রকমের বিমান চলাচল বন্ধ ছিল। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, টানা ৫ ঘন্টা বিমান চলাচল বন্ধ থাকার পরে সকাল ৯টা থেকে ফের বিমান চলাচল শুরু হলেও এর প্রভাব সারা দিনের বিমান চলাচলে পড়বে।
ঘন কুয়াশার জেরে ট্রেনের গতিও কমেছে। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের খড়গপুর-শালিমার, পাঁশকুড়া-হলদিয়া ও খড়গপুর-ভদ্রক শাখায় সকালের দিকে ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়। হাওড়াগামী বেশ কিছু দূরপাল্লার ট্রেন নির্ধারিত সময়ের থেকে বেশ কিছুটা দেরিতে ঢোকে। দুর্ঘটনা এড়াতে লোকাল ট্রেনের গতিও কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। পূর্ব রেলের হাওড়া শাখাতেও লোকাল ট্রেন চলাচলে প্রভাব পড়ে। তবে কোনও ট্রেনই এদিন বাতিল করা হয়নি। কুয়াশার জেরে ব্যাহত হয়েছে ফেরি চলাচলও। হাওড়া, হুগলি, পূর্ব মেদিনীপুর ও দুই ২৪ পরগনা জেলায় সকালের দিকে ফেরি চলাচল কার্যত বন্ধ রাখা হয়। সকাল ৯টা থেকে সেই ফেরি চলাচল শুরু হয়। সড়ক পথেও দৃশ্যমানতা কমায় কমেছে গাড়ির গতি। কার্যত সব জায়গায় আলো জ্বালিয়ে গাড়ি চলাচল করতে দেখা যাচ্ছে। আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, পশ্চিমী ঝঞ্ঝার হাত ধরে রাজ্যে যেমন মেঘ ঢুকেছে তেমনি ঘূর্ণাবর্তের হাত ধরে সাগরের প্রচুর জলীয় বাষ্প বাংলার পরিমণ্ডলে ঢুকে পড়েছে। তার জেরেই বাতাসে আপেক্ষিক আর্দ্রতা খুব বেড়ে গিয়েছে। সেই কারণেই সোম সকালে এহেন ঘন কুয়াশার দাপট। তবে এই কুয়াশার জন্যই কিন্তু এদিন দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টির সম্ভাবনা কমে গিয়েছে। তবে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে এদিন হালকা বৃষ্টি হতে পারে। আগামিকাল থেকে কিন্তু না মিলবে শীতের আমেজ, না মিলবে ঘন কুয়াশা। বরঞ্চ চড়বে পারদ। সোম সকালে ঘন কুয়াশার মধ্যেই কিন্তু শহর কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিকের থেকে ১ ডিগ্রি কম।