নিজস্ব প্রতিনিধি: অধিকারীদের গড় হিসাবে পরিচিত পূর্ব মেদিনীপুর(Purba Midnapur) জেলার শিল্পবন্দরনগরী হলদিয়াজুড়ে ছড়িয়ে পড়ল চাঞ্চল্য। শহরের প্রাক্তন পুরপ্রধান শ্যামল আদকের(Syamal Adakh) বিরুদ্ধে হুলিয়া(Hulia) জারি করে দিল হলদিয়া(Haldia) মহকুমা আদালত(Sub Divisional Court)। সেই হুলিয়ার নোটিস পুলিশ(Police) ইতিমধ্যেই টাঙিয়ে দিয়েছে হলদিয়ার আজাদ হিন্দনগরে থাকা শ্যামেলের ফ্ল্যাটে। সেই সঙ্গে হলদিয়া আদালত চত্বর, পুরসভা ভবন, হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদ চত্বর, হলদিয়া-নন্দীগ্রাম ফেরিঘাট, কুকড়াহাটি ফেরিঘাট, হলদিয়ার সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ডেও সাঁটানো হয়েছে এই হুলিয়া জারির নোটিস।
সূত্রের দাবি কলকাতার রিজেন্ট পার্কে থাকা শ্যামলের ফ্ল্যাটেও ওই হুমিয়ার নোটিস সাঁটিয়ে দিয়েছে পুলিশ। উল্লেখ্য, হলদিয়া পুরসভায় চেয়ারম্যান থাকাকালীন শ্যামল আদকের বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ উঠেছিল। এর পাশাপাশি চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে হলদিয়ার আজাদ হিন্দনগরের এক নির্মাণ সংস্থার মালিক অরুণাংশু মুখোপাধ্যায় শ্যামলের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ তুলে স্থানীয় ভবানীপুর থানায় এফআইআর করেন। তার জেরেই ২ অক্টোবর হলদিয়া আদালত শ্যাম্লের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। কিন্তু পরিস্থিতি বুঝেই তার আগে গা-ঢাকা দেন শ্যামল।
অরুণাংশু মুখোপাধ্যায় শ্যামলের বিরুদ্ধে তাঁর সংস্থার নাম এবং তাঁর সই জাল করে শ্যামলের কোম্পানির নামে ৮৬ লক্ষ ২৯ হাজার টাকা মূল্যের ক্রেডেনসিয়াল তৈরি করার অভিযোগ তুলেছেন। সেই ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশের হাতে বহু টেন্ডার দুর্নীতির তথ্য উঠে আসে। সামনে আসে কোটি কোটি টাকার অনিয়মের ঘটনা। ইতিমধ্যে হলদিয়া পুরসভার টেন্ডার সংক্রান্ত দেড় হাজার ফাইল পুলিশ বাজেয়াপ্ত করেছে। সেই ঘটনায় ২ অক্টোবর হলদিয়া আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। কিন্তু তার আগেই গা-ঢাকা দেন শ্যামল। যদিও দিল্লি বিমানবন্দরে নিরাপত্তারক্ষী বেষ্টিত হয়ে হাঁটতে দেখা গিয়েছে শ্যামলকে। সেই মতো হলদিয়া পুলিশের একটি দল দিল্লিতে হানা দেয়। সূত্রের দাবি, দিল্লিতে কোনও এক সাংসদদের বাড়িতে লুকিয়ে রয়েছেন শ্যামল। দিল্লি পুলিশ সহযোগিতা না করার ফলে অভিযুক্তকে ধরা সম্ভব হচ্ছে না। এমনটাই দাবি, পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার অমরনাথ কে’র।
পুলিশ অবশ্য শ্যামলকে গ্রেফতার করতে না পারলেও তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সেই সূত্রেই ইতিমধ্যে শ্যামলের সময়কালীন পুরসভার টেন্ডার কমিটির চেয়ারম্যান সত্যব্রত দাস, কাউন্সিলর নারায়ণচন্দ্র প্রামাণিক এবং অর্থদফতরের দায়িত্বে থাকা বিকাশ জানাকে থানায় তলব করেছে পুলিশ। কিন্তু সত্যব্রত দাস তদন্তে অসহযোগিতা করছেন। সব প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন না বলে পুলিশের অভিযোগ। সেই সঙ্গে পুরসভার ১৬ জন কর্মীকেও পুলিশ জেরা করেছে। এমন পরিস্থিতিতে শ্যামল আদকের বিরুদ্ধে সোমবার হুলিয়া জারি করল হলদিয়া আদালত। যা হলদিয়া পুরসভার ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
এই বিষয়ে হলদিয়ার এসডিপিও রাহুল পাণ্ডে জানিয়েছেন, ‘শ্যামল আদকের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট রয়েছে, উনি জানেন। পুলিশকে এড়িয়ে চলেছেন। তাই এবার হলদিয়া আদালত সরাসরি আদালতে হাজিরা দেওয়ার জন্য হুলিয়া জারি করল। আদালতের নির্দেশ আগামী ২২ নভেম্বরের মধ্যে তাঁকে আদালতে সশরীরে হাজিরা দিতে হবে। আমরা জানি শ্যামলবাবুর পাসপোর্ট নেই। বিদেশে যাওয়া ওঁর পক্ষে মুশকিল। তবুও সে ভাবনা থেকে সমস্ত সীমান্ত এবং বিমানবন্দরে আমাদের নজরদারি রয়েছে।’