নিজস্ব প্রতিনিধি,হাড়োয়া: সুন্দরবনকে বন্যা থেকে বাঁচাতে শুরু হওয়া অরণ্য কালীর মন্দিরে শ্যামাপুজোর রাতে আগমন ঘটতো দক্ষিণ রায়ের ।সুন্দরবনের বুকে আড়াইশো বছরের বেশি পুরোনো প্রাচীন কালীপূজা আজও চলে আসছে রীতিনীতি মেনে। হাড়োয়া(Haroa) মানেই ইতিহাসের নানান অধ্যায়ের নানান কাহিনী। ইতিহাসের কেন্দ্রবিন্দু হাড়োয়ার বুক চিরে বয়ে গিয়েছে বিদ্যাধরী নদী। আর সেই নদীর অনতিদূরে খলিসাদি গ্রামে অবস্থিত সুন্দরবনের প্রাচীন অরণ্য কালী মন্দির। বসিরহাটের সুন্দরবনের হাড়োয়া ব্লকের শালিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের খলিসাদি গ্রামে অবস্থিত এই অরণ্য কালী।
কথিত আছে, আড়াইশো বছর আগে বিদ্যাধরীর জলস্ফীতি হয়ে বন্যায় ভেসেছিল সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকা। সেই সময় সুন্দরবনের(Sundarban) জঙ্গলে বিদ্যাধরী নদীর পাশে এক সাধু বাবা জঙ্গলের মঙ্গলের জন্য তথা সুন্দরবনকে বাঁচাতে এই অরণ্য কালীর যজ্ঞ শুরু করেছিলেন। তারপর একটু একটু করে ধাপে ধাপে তৈরি হয়েছে একটি মন্দির। যা বর্তমানে অরণ্য কালিবাড়ি নামে পরিচিত। পরবর্তীতে এই পুজোর দায়িত্ব গ্রামেরই ভট্টাচার্য্য পরিবারের হাতে হস্তান্তর করে গ্রামবাসীরা। তখন থেকেই ভট্টাচার্য্য পরিবার এই পূজার দেখাশোনা করে আসছে। গ্রামবাসীরা জানাচ্ছেন এখানকার মা কালী খুবই জাগ্রত, এক মনে যা চাওয়া হয় তাই পাওয়া যায়। আর তার জন্যই শক্তির আরাধনায় মেতে ওঠা। কথিত আছে একসময় শ্যামা পুজার রাতে এই মন্দিরে আসত বাঘ।
তাই যথা শীঘ্র মায়ের আরাধনা করেই যে যার বাড়ি ফিরে যেত বাঘের আতঙ্কে। আরো একটি রীতি রয়েছে এই পুজোর সঙ্গে। শ্যামা পুজার(Kali Puja) দিন যে মূর্তি স্থাপিত হয় তার পুজো সারা বছর হয়। আবার ঠিক শ্যামা পূজার এক সপ্তাহ আগে বিসর্জন দেওয়া হয় সেই পুরনো প্রতিমার। এই এক সপ্তাহ ধরে চলে তামার ঘটে পুজো। তারপর আবার প্রতিষ্ঠিত হন নতুন কালি। আরাধনা শুরু হয় তার। শ্যামা পুজোর দিন প্রতিবছর পূজা উপলক্ষে প্রচুর পাঠা বলি দেওয়া হয়। পাশাপাশি ফলও বলি দেওয়া হয়। খিচুড়ি ভোগ তৈরি হয়। পুজো উপলক্ষে এই কালী মায়ের কাছে প্রার্থনা করতে বহু দূর দূরান্ত থেকে পূণ্যার্থীদের আগমন ঘটে সুন্দরবনের এই খলিসাদি গ্রামে।