নিজস্ব প্রতিনিধি: বাংলার(Bengal) সংখ্যালঘু অধ্যুষিত জেলাগুলির মধ্যে সর্বাগ্রে উঠে আসে যে জেলাটির নাম তা হল মুর্শিদাবাদ(Murshidabad)। একসময় এই জেলাই ছিল কংগ্রেসের গড়। এমনকি কংগ্রেস(INC) ভেঙে তৃণমূলের(TMC) জন্মের পরেও এই জেলায় হাতের বিকল্প কোনও দলই হয়ে উঠতে পারেনি দীর্ঘদিন যাবৎ। কিন্তু সেই ছবিতে বদল আসা শুরু হয়ে উনিশের লোকসভা নির্বাচনের সময় থেকেই। জেলার ৩টি আসনের মধ্যে ২টিতে ফুটেছিল ঘাসফুল। কংগ্রেস বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্র ধরে রাখলেও তৃণমূল জঙ্গিপুর ও মুর্শিদাবাদ কেন্দ্র দুটিতে জয়ের মুখ দেখেছিল। এবার ২৪’র ভোটে(General Election 2024) বাংলার মাটিতে জোট হচ্ছে না কংগ্রেস ও তৃণমূলের মধ্যে। তাই দুই দলই জেলার ৩টি আসনেই প্রার্থী দেবে। শুধু তাই নয় এই জেলাতে ভারত জোড়ো যাত্রায় আসছেন রাহুল গান্ধিও(Rahul Gandhi)। কিন্তু তারপরও জেলার কংগ্রেস নেতাদের কপালে পড়েছে ভাঁজ। কেননা এবার জেলায় বেড়েছে মাধ্যমিকের ছাত্রীদের সংখ্যা, যার নেপথ্যে রয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, ঐক্যশ্রী, মেধাশ্রীর মতো প্রকল্পগুলি। এগুলিকে উপেক্ষা করে কে ভোট দেবে কংগ্রেসকে, সেটাই ভাবাচ্ছে অধীর রঞ্জন চৌধুরীর দলের নেতাদের। ভাবাচ্ছে লক্ষ্মীর ভান্ডার, কৃষকবন্ধু, বাংলা শস্য বিমা যোজনা, বিধবা ভাতা, বার্ধক্য ভাতা, ইমাম ভাতাও।
মুর্শিদাবাদের মতো সংখ্যালঘু অধ্যুষিত জেলায় এবার ২০২৪ সালের মাধ্যমিকে উল্লেখযোগ্যভাবে ছাত্রীদের সংখ্যা বেশ বেড়েছে। অন্তত পরীক্ষার্থীদের সংখ্যা সেটাই বলছে। এবার জেলায় ছাত্রদের তুলনায় অনেকটাই বেশি সংখ্যায় ছাত্রীরা পরীক্ষায় বসতে চলেছেন। তবে এটা প্রথমবার নয়। এর আগেও গত তিন বছর ধরে এই প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। জেলায় ক্রমশই বাড়ছে মাধ্যমিকের ছাত্রীর সংখ্যা। এবার জেলায় ৭৮ হাজার ৩১৯ জন পরীক্ষার্থী এবার পরীক্ষায় বসবে। তার মধ্যে ছাত্রদের সংখ্যা ৩০ হাজার ৫৮৯ ও ছাত্রীদের সংখ্যা ৪৭ হাজার ৭৩০। ছাত্রদের তুলনায় ১৭ হাজার বেশি ছাত্রী এবার জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষায় বসতে চলেছে। গতবছর জেলায় মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৫৮ হাজার ৮৫৯। সেখানে ছাত্র ছিল ২৩ হাজার ৪৯৮ জন ও ছাত্রী ছিল ৩৫ হাজার ৩৬১ জন। এমনকি এমন তথ্যও উঠে আসছে, মেয়েদের মধ্যে যারা এবছর মাধ্যমিক দিচ্ছে তাঁদের মধ্যে প্রায় ২০ হাজার মেয়ে তাঁদের পরিবারের প্রথম মেয়ে হিসাবে মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসতে চলেছে। আর এই নিঃশব্দ বিপ্লব সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য।
জেলার শিক্ষাক্ষেত্রের সঙ্গে জড়িতরা তো বটেই, সরকারি আধিকারিকেরাও জেলায় মেয়েদের মধ্যে পড়াশোনা করার আগ্রহ বাড়ার প্রবণতার ঘটনাকে মমতার কৃতিত্ব বলেই চিহ্নিত করেছেন। তাঁরা এক বাক্যে স্বীকার করছেন, মমতা শুধু প্রকল্প গড়ে টাকা দিচ্ছেন তাই নয়, মমতা বাংলার প্রত্যেক কন্যাশ্রী, মেধাশ্রী, ঐক্যশ্রী, রূপশ্রীর মেয়েদের সঙ্গে আত্মীক সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। তাঁর সভায় নিয়মিত ভাবে এই সব প্রকল্পের সুবিধা পাওয়া মেয়েরা হাজির হয় তখন তাঁদের উদ্দেশ্য করেই মমতা বলেন, ‘কই গো আমার কন্যাশ্রীরা, কই গো আমার রূপশ্রীরা, কই গো আমার মেধাশ্রীরা, কই গো আবার রূপশ্রীরা’, তাঁর এই ডাকই মেয়েদের মনে তাঁকে গেঁথে দিয়েছে। বাংলার আর কোনও রাজনীতিবিদ এভাবে বাংলার মেয়েদেরকে আপন করে নেয়নি। এত আদর করে কেউ ডাকেনি। এত স্বপ্ন দুইচোখে কেউ বুনে দেয়নি। মমতা পেরেছেন, যা কয়েক শতক ধরে আর কেউ পারেননি। সংখ্যালঘু সমাজের মেয়েদের বাড়ির বাইরে বের করে এনে তাঁদের স্কুল হয়ে মাধ্যমিকের পরীক্ষার হলে অবধি তিনি পৌঁছে দিয়েছেন। এদের বাবা-মারা কী তৃণমূলের বাইরে আর কেউকে ভোট দেবেন? জেলার যে সব মহিলারা লক্ষ্মীর ভান্ডার পাচ্ছেন, যে সব কৃষকেরা কৃষকবন্ধু পাচ্ছেন, যারা বিধবা ভাতা, বার্ধক্য ভাতা, ইমাম ভাতা পাচ্ছেন, তাঁরা কী আর কংগ্রেসকে ভোট দেবেন? মমতা জাদুতে মজেছে মুর্শিদাবাদ। তাই কংগ্রেসের নেতাদের কপালে পড়েছে ভাঁজ।