নিজস্ব প্রতিনিধি: জাওয়াদের ধাক্কায় কার্যত দ্বিধাবিভক্ত আবহাওয়াবিদরা। একইসঙ্গে নজীরবিহীনও। কেননা সাম্প্রতিক কালে একটি ঘূর্ণিঝড়কে ঘিরে আবহাওয়াবিদদের মধ্যে দুই ধারায় বিভক্ত হয়ে যেতে দেখা যায়নি। এখানেও যেন সেই কেন্দ্র রাজ্য বিবাদের ছায়া। দিল্লির মৌসম ভবনের দাবি, শনিবার ভোরে ঘন্টায় ১২০কিমি বেগে জাওয়াদ আছড়ে পড়তে চলেছে অন্ধ্রপ্রদেশের কলিঙ্গপত্তনম ও ওড়িশার গোপালপুরের মধ্যবর্তী এলাকায়। ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রস্থল স্থলভূমি স্পর্শকালে ঘন্টায় ১৫০কিমি বেগে ঝড় বইবে কয়েক মিনিটের জন্য। তারপর এই ঘূর্ণিঝড় উত্তর-পূর্বে বাঁক নিয়ে ওড়িশা, ছত্তিশগড় হয়ে মধ্যপ্রদেশে ঢুকে যাবে। কিন্তু বাংলা, ওড়িশা ও অন্ধ্রপ্রদেশের স্থানীয় আবহাওয়াবিদদের অভিমত ঝড় কাল ভোরে ভূমি স্পর্শ করবে না। বরঞ্চ তা সাগরে থাকাকালীন সময়েই উত্তর-পূর্বে বাঁক নিয়ে ওড়িশা উপকূল ধরে বাংলার দিকে এগোবে। তবে সেক্ষেত্রে তার শক্তি বাড়তেও পারে বা কমতেও পারে। ঘূর্ণিঝড় থেকে তা তখন অতি গভীর নিম্নচাপ হয়ে ওড়িশা-বাংলায় পা রাখতে পারে বা অতি শক্তিশালী ঘূর্নিঝড় হয়ে বাংলায় আছড়ে পড়বে।
মৌসম ভবনের দাবি অনুযায়ী জাওয়াদ আগামিকাল অর্থাৎ শনিবার ভোরে অন্ধ্র-ওড়িশা উপকূলে পা রাখবে। তারপর তা বাঁক নিয়ে ওড়িশা, ছত্তিশগড় হয়ে মধ্যপ্রদেশের দিকে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে বাংলায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয় মত এই ঘূর্ণিঝড় ভূমিস্পর্শ করবে না শনিবার ভোরে। বরঞ্চ তা সাগরের বুকেই বাঁক নিয়ে মধ্য ও উত্তর ওড়িশা উপকূলের দিকে এগিয়ে আসবে। রবিবার বিকালের মধ্যেই তা পুরীর কাছাকাছি চলে আসবে। অনুমান সোমবার ভোরে তার ভূমিস্পর্শ ঘটবে বাংলা ওড়িশা উপকূলে। যদিও সেক্ষেত্রে তা আর ঘূর্ণিঝড় থাকবে কিনা তা নিয়ে খটকা থাকছে। কেননা দীর্ঘ সাগর পাড়ি দেওয়ার জেরে সাগরের বুকেই তার শক্তিক্ষয় হতে শুরু করে দেবে। তার জেরে ভূমিস্পর্শ কালে তা অতি গভীর নিম্নচাপের চেহারা নেবে। আর তার জেরে ওড়িশা ও বাংলার বুকে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকছে। আবার এটাও হতে পারে ওড়িশা উপকূল ধরে এগোবার সময় সাগর থেকে আরও শক্তি সঞ্চয় করবে সে। আর তারপরেই সে এগিয়ে আসবে বাংলার দিকে।
শুক্রবার বিকালে আলিপুর আবহাওয়া দফতর এক সাংবাদিক বৈঠকে জানিয়েছে, এই ঘূর্ণিঝড় আদৌ ভূমিস্পর্শ করবে কিনা তা নিয়েই খটকা আছে। তবে সাগরের বুকেই সে বাঁক নিয়ে ওড়িশার উপকূল ধরে বাংলার দিকে এগিয়ে আসবে। তার জন্য এদিন থেকেই বাংলায় বৃষ্টি শুরু হয়ে যাবে। বিশেষ করে দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুর জেলায়। শনিবার এই দুই জেলায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকছে। সঙ্গে উত্তর ২৪ পরগনা, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, কলকাতা, হাওড়া ও হুগলি জেলায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হবে। রবিবার কিন্তু দুই মেদিনীপুর, দুই ২৪ পরগনা, কলকাতা, হাওড়া, হুগলি ও ঝাড়গ্রাম জেলায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হবে। দক্ষিণবঙ্গের বাকি জেলায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হবে। সঙ্গে বইবে ঝোড়ো হাওয়া। দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় জলোচ্ছ্বাসেরও সম্ভাবনা থাকছে সেক্ষেত্রে। তবে ওড়িশা উপকূল ধরে এগোনোর সময়েই জাওয়াদের শক্তিক্ষয় ঘটতে পারে। তাই বঙ্গে ঝড়ের তাণ্ডব সেভাবে নাও থাকতে পারে। কিন্তু যদি তার বিপরীত হয়, তাহলে বাংলার কপালে দুর্ভোগ থাকবে।