নিজস্ব প্রতিনিধি: কিছু দিন আগে মার্চ মাসের ৩১ তারিখ বিকাল বেলায় ঝড়ের ধাক্কায় লন্ডভন্ড হয়ে যায় উত্তরবঙ্গের(North Bengal) জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহার জেলার বিস্তীর্ণ অংশ। এর মধ্যে সব থেকে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয় জলপাইগুড়ি জেলার(Jalpaiguri District) ময়নাগুড়ি(Moynaguri) ব্লকের ৩টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। কেননা সেখানে ঝড় ধেয়ে এসেছিল টর্নেডোর রূপ নিয়ে। তাতেই ওই ৩টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় মারা যান ৪জন। আহত হন শতাধিক মানুষ। সেই ঘটনার জেরে রাতেই কলকাতা থেকে উত্তরবঙ্গে ছুটে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। সারা রাত জেরে তিনি উদ্ধারকার্য পরিচালনা করার পাশাপাশি স্বজনহারা পরিবারগুলির সঙ্গে এবং আহতদের সঙ্গে দেখা করে কথা বলেন। এদিন সেই ময়নাগুড়িতেই ছিল মুখ্যমন্ত্রীর নির্বাচনী জনসভা। সেই সভা থেকেই তিনি ঝড়ে ঘর-বাড়ি হারাদের দিলেন রাজ্যের তরফে আর্থিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি।
উনিশের লোকসভা নির্বাচনে জলপাইগুড়ি আসনে জয়ী হয়েছিল বিজেপি। এবার সেই আসনে তৃণমূল প্রার্থী করেছে জেলারই ধূপগুড়ি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে জয়ী দলের বিধায়ক নির্মলচন্দ্র রায়কে। এদিন তাঁর সমর্থনেই মুখ্যমন্ত্রী সভা করেন ময়নাগুড়ির পশ্চিম শালবাড়ির ফুটবল ময়দানে। সেই সভা থেকেই তিনি জানান, ঝড়ে যাদের বাড়িঘর ভেঙে গিয়েছে তাঁদের বাংলার বাড়ি প্রকল্পে(Banglar Bari Project) সাহায্য করা হবে। তবে সেই সাহায্য করা হবে লোকসভা নির্বাচন মিটলে। এদিন এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি ঝড়ের খবর পেয়েই সেদিন রাতে চলে এসেছিলাম। রাত জেগে সবাইকে উদ্ধার করে চিকিৎসা করানোর ব্যবস্থা করেছিলাম। আগেই ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা হয়ে গিয়েছিল, তাই অনেক কিছু করতে পারিনি। আমরা কমিশনকে বারবার বলেছিলাম যাদের বাড়ি ঘর ভেঙে গিয়েছে তাদের ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা দেওয়া হোক। বাংলার বাড়ি যেন পায়। কমিশন বলল না। যা নিয়ম তাই হবে। এই নিয়মে কী বলা হয়েছে? যার সব ভেঙেছে ২০ হাজার। আর যাদের আংশিক ভেঙেছে তাঁদের ৫ হাজার।’
তবে মুখ্যমন্ত্রী এখানেই থেমে যাননি। তিনি জানিয়ে দেন, ‘যাদের বাড়ি সত্যি সবটা ভেঙেছে তারা ২০ হাজার পাবেন। কিন্তু পরে আরও ২ দফায় আরও টাকা পাবেন। প্রথম দফায় আরও ৪০ হাজার টাকা এবং দ্বিতীয় দফায় আরও ৬০ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে ৩ দফায় আপনারা পাবেন মোট ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। যার যারা ৫ হাজার করে টাকা পেয়েছেন, তাঁরা একদম ভাববেন না। আমরা এই বছরেই ১১ লক্ষ মানুষের বাড়ি করে দেব। যাদের নাম কেন্দ্রের আবাসন প্রকল্পে আছে, কিন্তু কেন্দ্র বাড়ি বানানোর টাকা দেয়নি, তাঁদের বাড়ি আমরাই করে দেব। ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই সেই বাড়ি তৈরির কাজ শুরু হবে। তখন ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থদের বাড়িও করে দেওয়া হবে। ১১ লক্ষ মানুষের বাড়ি এই বছরেই করব। ডিসেম্বরের মধ্যে টাকা রিলিজ করব, কথা দিয়ে যাচ্ছি।’ অস্বীকার করার উপায় নেই, ঝড় বিধ্বস্তদের যেখানে প্রধানমন্ত্রী কয়েকটি শব্দ ব্যাতীত আর কিছুই খরচ করেন না, সেখানে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি বানিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ক্ষতিগ্রস্থদের মনে আশার আলো জাগাবে নতুন করে।