নিজস্ব প্রতিনিধি: মুর্শিদাবাদ(Murshidabad), রাজ্যের সব থেকে বেশি সংখ্যালঘু অধ্যুষিত জেলা(Minority Populated District)। দেশের মধ্যেও অন্যতম সংখ্যালঘু অধ্যুষিত জেলা। একসময়কার কংগ্রেসী(INC) দুর্গ। জেলায় প্রভাব ছিল বামেদেরও(Left)। কিন্তু বাংলার মাটিতে বিজেপির(BJP) উত্থান সেই জেলাতেই পথে বসিয়েছে বাম আর কংগ্রেস দুই দলকেই। পরিবর্তে জেলার সংখ্যালঘুরা হাত ধরেছে তৃণমূলের(TMC)। আর তার জেরেই উনিশের লোকসভা ভোটে জেলার ৩টি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে ২টিতেই জয়ের মুখ দেখে জোড়াফুল। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে জেলার ২২টি আসনের মধ্যে ২০টিই গিয়েছে তৃণমূলের দখলে। মাত্র ২টি পেয়েছে বিজেপি। ঝুলি খালি হয়ে গিয়েছে বাম-কংগ্রেসের। সেই জেলাতেই এদিন সভা করতে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। জেলার সদর শহর বহরমপুরের(Baharampur) মাটিতে দাঁড়িয়ে তিনি এদিন জেলার জনতাকে সরকারি পরিষেবা প্রদান করার পাশাপাশি প্রায় ১০০০ কোটি টাকার নানা প্রকল্পের উদ্বোধন এবং শিলান্যাস সাধন করবেন।
সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এই জেলায় একুশের ভোটের পরবর্তীকালে সাগরদিঘী বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে জয়ী হয়েছিল কংগ্রেস। সেই জয়ের পিছনে প্রত্যক্ষ ভাবে বাম-কংগ্রেস জোট যেমন অন্যতম কারণ হয়ে উঠেছিল তেমনি বিজেপির প্রচ্ছন্ন মদতও সেখানে কাজ করেছিল। একই সঙ্গে এই জেলা প্রদেশ কংগ্রস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরীর নিজের জেলা। বহরমপুর তাঁর নিজের শহর। অথচ তিনি নিজে বহরমপুরের সাংসদ থাকা সত্ত্বেও একুশের ভোটে বহরমপুর বিধানসভা কেন্দ্রে জয়ী হয়েছিল বিজেপি। এখন সেই অধীরবাবুই খুল্লামখুল্লা বিজেপির এজেন্টের মতো কাজ করেছেন, আচরণ করে চলেছেন। বার বার নিশানা বানাচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূল কংগ্রেসকে। বিজেপিকে সুবিধা পাইয়ে দিতে যা যা করার তার সব কিছুই তিনি করছেন। সেই অধীরগড়ে আজ পা রাখছেন মমতা। সেখান থেকে ২৪’র ভোটে জেলার ৩টি আসনই জেতার লক্ষ্যে তিনি কী বার্তা দেন সেইদিকে তাকিয়ে থাকবে সকলে।
মুর্শিদাবাদ জেলা সফরে এসে মুখ্যমন্ত্রী এদিন যেসব প্রকল্প ও পরিষেবার উদ্বোধন এবং শিলান্যাস করবেন তার মধ্যে থাকছে ৭৫০ কোটি টাকার নতুন প্রকল্পের শিলান্যাস ও ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে শুরু হতে চলা বিভিন্ন কাজের উদ্বোধন। এছাড়াও গঙ্গা ভাঙন রোধে মোটা টাকা ব্যয়ে কাজ শুরুর সূচনা করতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। জেলার কুলি থেকে মোড়গ্রাম রাস্তার মেরামতের জন্য ১১০কোটি টাকার কাজের এদিন উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী। এছাড়া ড্রেন, পানীয় জল, পথবাতি নিয়ে একাধিক নতুন প্রকল্পের ঘোষণা থাকতে পারে। মুখ্যমন্ত্রীর এই সফরে জেলার প্রায় ৩৫ হাজার উপভোক্তাদের হাতে নতুন সরকারি প্রকল্পের পরিষেবা তুলে দেওয়া হবে। মুখ্যমন্ত্রী নিজের হাতে বেশ কয়েকজনকে প্রকল্পের সুবিধা প্রদান করবেন। মুখ্যমন্ত্রী মূল মঞ্চ থেকে ৫০ জনের হাতে সরাসরি পরিষেবা তুলে দেবেন। বাকিদের ব্লক থেকে দেওয়া হবে।
সীমান্তবর্তী জেলায় এসে পরিযায়ী শ্রমিক ও সীমান্ত সমস্যা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী কী বলবেন, সেদিকেও তাকিয়ে আছেন জেলবাসী। ভাঙন রোধের কাজ নিয়েও মুখ্যমন্ত্রী কিছু বলতে পারেন বলে অনেকে মনে করছেন। বিড়ি শ্রমিকদের মজুরি সমস্যা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী চিন্তিত। গতবছর সাগরদিঘি ও সামশেরগঞ্জে ২টি পৃথক সভায় এসে তাঁর কণ্ঠে বিড়ি শ্রমিকদের জন্য উদ্বেগের কথা শোনা গিয়েছিল। এবার তাদের জন্য নতুন কোনও ঘোষণা থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এদিন আবার জেলায় বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকায় বাড়তি তৎপরতা দেখা যাচ্ছে জেলা প্রশাসনের অন্দরে। বহরমপুর স্টেডিয়ামে সভা হওয়ার কারণে গোটা ময়দানে হ্যাঙার লাগিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে যাতে খারাপ আবহাওয়ায় সভা করতে কোনও সমস্যা না হয়। হেলিপ্যাড থেকে মুখ্যমন্ত্রীর সভাস্থলে যাওয়ার রাস্তা নতুন করে পিচ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।