নিজস্ব প্রতিনিধি: উনিশের ভোটে তৃণমূল(TMC) থেকে মুখ ফিরিয়েছিল উত্তরবঙ্গ(North Bengal)। সেখানকার ৮টি আসনের মধ্যে সবকটিতেই হেরেছিল তৃণমূল। তার মধ্যে ৭টি আসন একাই পেয়েছিল বিজেপি(BJP)। ১টি আসনে জয়ী হয় কংগ্রেস। সেই হিসাবে একুশের ভোটে উত্তরবঙ্গের ৫৪টি আসনের মধ্যে বিজেপির একারই ৫০টি আসন পাওয়া উচিত ছিল। কিন্তু তা হয়নি। সেই নির্বাচনে কিছুটা হলেও জমি ফিরে পেয়েছিল তৃণমূল। পেয়েছিল ২৩টি আসন। বিজেপি পেয়েছিল ৩০টি আসন। ১টি আসন গিয়েছিল নির্দলের দখলে। কিন্তু সেই নির্বাচনের পরে ৩জন বিজেপি বিধায়ক যেমন তৃণমূলে ভিড়ে গিয়েছেন তেমনি বিজেপির হাতে থাকা ধূপগুড়ি বিধানসভা কেন্দ্র উপনির্বাচনে জিতে নিয়েছে তৃণমূল। সামগ্রিক ভাবে তাই বেশ বোঝাই যাচ্ছে উত্তরে জমি হারাচ্ছে পদ্মশিবির। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়েই এবার উত্তরের ৮টি লোকসভা কেন্দ্রই ২৪’র ভোটে নিজেদের ঝুলিতে তুলতে চাইছে জোড়াফুল শিবির। আর সেই লক্ষ্যেই তাঁদের হাতে অস্ত্র হয়ে উঠতে চলেছে উত্তরবঙ্গের ৫টি জেলার জন্য প্রায় ৫০০ কোটি টাকার দুটি বন্যা নিয়ন্ত্রণের প্রকল্প।
প্রতি বছর বর্ষায় ভুটান থেকে জল নেমে এসে আলিপুরদুয়ার এবং কোচবিহারে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়। আবার পাহাড়ে বেশি বৃষ্টি হলে ভেসে যায় উত্তর দিনাজপুর এবং মালদা জেলাও। একইসঙ্গে ডুয়ার্সে বা বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাংশে বেশি বৃষ্টি হলে বানভাসি হতে হয় দক্ষিণ দিনাজপুরকেও। কার্যত প্রতি বছর এই কারণেই উত্তরবঙ্গের এই ৫টি জেলার কয়েক লক্ষ মানুষ শুধু যে বন্যার প্রকোপের মুখে পড়েন তাই নয়, তাঁদের আর্থিক ভাবেও ক্ষতিগ্রস্থ হতে হয়। এবার এই ছবিটাই বদলে দিতে চাইছেন তৃণমূল কংগ্রেস। তাঁদের পরিচালনাধীন ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকার এই ৫টি জেলার বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রায় ৫০০ কোটি টাকার দুটি বন্যা নিয়ন্ত্রণের প্রকল্প বা Flood Management Scheme হাতে নিচ্ছে। দুটি প্রকল্পের মোট খরচ ধরা হয়েছে ৪৯৬ কোটি টাকা। একটি প্রকল্প গড়ে উঠবে মালদা ও দুই দিনাজপুর জেলাকে নিয়ে এবং অপর প্রকল্পটি গড়ে উঠবে আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহার জেলাকে নিয়ে। মূলত এই দুটি প্রকল্পের মাধ্যমে নদীর পাড় বাঁধানোর কাজ করা হবে।
তবে এই প্রকল্পতে কেন্দ্র সরকারকেও যুক্ত করতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই কারণেই এই দুটি প্রকল্পের যে DPR তৈরি হয়েছে তার একটি রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রের জলশক্তি মন্ত্রকের কাছে। গতকাল দিল্লিতে জলশক্তি মন্ত্রকের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এই প্রকল্প নিয়ে রাজ্যের আধিকারিকদের একটি বৈঠকও হয়েছে। সেই বৈঠকে এই প্রকল্প নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় তাঁদের মধ্যে। সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে কেন্দ্র ছাড়পত্র দিলে এই প্রকল্পটিও বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য প্রকল্পের সঙ্গেই তালিকাবদ্ধ হবে। অর্থাৎ, এই প্রকল্পের মোট খরচের আংশিক দায়িত্ব কেন্দ্রও নিতে রাজি হবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে মহানন্দা, কুলহার এবং চিরামতীর মতো বেশ কয়েকটি নদীর ভাঙন রোধের কাজ শুরু হবে। তোর্সা ও জলঢাকার মতো নদীর পাড়ও বাঁধানো হবে।