নিজস্ব প্রতিনিধি: দেশের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে(Draupadi Murmu) উদ্দেশ্য করে রাজ্যের মন্ত্রী তথা বাংলার শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের(TMC) নেতা অখিল গিরি(Akhil Giri) যে মন্তব্য করেছেন তা জোড়া ঘাসফুলের দলীয় নেতৃত্ব সমর্থন করেনি। শুধু তৃণমূলেরই নয়, কার্যত কোনও রাজনৈতিক দলের কোনও নেতাই সেই মন্তব্যকে সমর্থন করেননি। সবাই একবাক্যে বিরোধিতা করেছেন। নিন্দায় সরব হয়েছেন বুদ্ধিজীবীদের পাশাপাশি নানান মহলও। তবে বিষয়টিকে রাজনৈতিক ভাবে হাতিয়ার বানিয়ে মাঠে রে রে করে নেমে পড়েছে গেরুয়া ব্রিগেড। কিন্তু গেরুয়া ব্রিগেডকেই এবার পাল্টা চাপে ফেলতে মাঠে নামছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে আগামী মঙ্গলবার ঝাড়গ্রাম(Jhargram) জেলার বেলপাহাড়ী(Belpahari) থেকে অখিলকাণ্ডে বার্তা দিতে পারেন তিনি।
আরও পড়ুন ডিএ নিয়ে বড় সিদ্ধান্ত রাজ্য সরকারের
সামনেই বাংলার পঞ্চায়েত নির্বাচন(Panchayat Election)। আর সেই নির্বাচনে আদিবাসী ভোট ব্যাঙ্ককে নিজেদের দিকে টানতে মরিয়া গেরুয়া ব্রিগেড। দক্ষিণবঙ্গে জঙ্গলমহলের ৪টি জেলা ছাড়াও দুই ২৪ পরগনা, নদিয়া, হুগলি, বীরভূম, মালদা, দুই দিনাজপুরের বেশ কিছু এলাকায় রয়েছে আদিবাসীদের ভোটব্যাঙ্ক। আদিবাসীরা বড় সংখ্যায় রয়েছেন দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার জেলাতেও। সেই ভোট ব্যাঙ্ককেই এখন কাছে টানতে গিরির বিরুদ্ধে রে রে করে মাঠে নেমে পড়েছে বিজেপি(BJP)। আর গেরুয়া শিবিরের এই রণকৌশলকে ঠাণ্ডা ঘরে পাঠিয়ে দিতেই এবার মাঠে নামছেন বাংলার অগ্নিকন্যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। ৪ বছর বাদে বেলপাহাড়ীতে পা রাখতে চলেছেন মমতা। ওইদিন বীরসা মুণ্ডার জন্মদিন। শেষবার ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মুখ্যমন্ত্রী বেলপাহাড়ী হাইস্কুলের মাঠে প্রশাসনিক সভায় এসেছিলেন। সেই সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করেছিলেন। তবে ফের চার বছর পর মুখ্যমন্ত্রী বেলপাহাড়ীতে আসছেন। এবছরও তিনি একগুচ্ছ প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করবেন বলে জানা গিয়েছে। বীরসা মুণ্ডার মূর্তির উন্মোচন করারও কথা রয়েছে। কিন্তু এখন সেই সভা ও সফরের দিকে সবাই তাকিয়ে থাকবেন অখিলকাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রী কী বার্তা দেন আদিবাসী জনসমাজকে সেটা দেখার জন্যই।
আরও পড়ুন বাংলার রাজ্যপালকে তোপ শুভেন্দু অধিকারীর
ঝাড়গ্রাম জেলার জনসংখ্যার একটা বড় অংশের মানুষই আদিবাসী সম্প্রদায়ভুক্ত। জেলার ৮টি ব্লকেই তাঁদের বসবাস। তবে, বেলপাহাড়ী, গোপীবল্লভপুর, বেলিয়াবেড়া ব্লকে মুণ্ডাদের জনবসতি বেশি। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটের আগে বিভিন্ন আদিবাসী সমাজের জনগোষ্ঠী একসঙ্গে ‘আদিবাসী সমন্বয় মঞ্চ’ তৈরি করেছিল। ভোটে একত্রিত হয়ে তাঁরা ভোটের ময়দানে নেমেছিলেন। ভোটে অংশ নিয়ে সাফল্যও পেয়েছিল সমন্বয় মঞ্চ। তারা বাঁশপাহাড়ি ও শিমূলপাল গ্রাম পঞ্চায়েত নিজেদের দখলে রেখেছিল। একইসঙ্গে ভুলভেদা গ্রাম পঞ্চায়েতে বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও সমন্বয় মঞ্চ বোর্ড গঠন করে। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোতেই ঝাড়গ্রাম জেলার আদিবাসী ভোট গিয়েছিল বিজেপির দখলে। কিন্তু একুশের ভোটে সেখানে আর কল্কে খুঁজে পায়নি গেরুয়া শিবিরে। এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনেও যাতে বিজেপি শিকড় গাড়তে না পারে তার জন্য এখন থেকেই পদক্ষেপ নিচ্ছে তৃণমূল। কিন্তু অখিল গিরির মন্তব্যের জেরে আদিবাসী সমাজে যে কিছুটা হলেও ক্ষোভ ছড়িয়েছে তা বুঝতে পারেই সম্ভবত বেলপাহাড়ী থেকে এই ঘটনায় বার্তা দিতে পারেন মমতা, অন্তত এমনটাই মনে করছেন তৃণমূলের নেতানেত্রীরা। এই বিষয়ে ভারত মুণ্ডা সমাজের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য শাখার সম্পাদক নবীনচন্দ্র সিং জানিয়েছেনন, ‘বীরসা মুণ্ডার জন্মদিনটিতে সরকারি ছুটি ঘোষণা করায় খুশি। আমাদের আরও কিছু দাবি রয়েছে। আমাদের আশা, মুখ্যমন্ত্রী এসে আমাদের পাশে দাঁড়াবেন। মুখ্যমন্ত্রী আসবেন, তাই শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে। সকল সম্প্রদায়ের মানুষ মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা শোনার অপেক্ষায় রয়েছেন।’
আরও পড়ুন রাত ১১টার পর খোলা রাখা যাবে না দোকান, নির্দেশ নিউটাউন থানার
এদিকে গিরির মন্তব্যকে কেন্দ্র করে রাজ্য বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনে রামনগরের বিধায়কের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব আনতে চান বিজেপির আদিবাসী বিধায়করা। শনিবার তেমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন বিজেপি তফসিলি মোর্চার সভাপতি তথা হবিবপুরের বিধায়ক জুয়েল মুর্মু। বিধানসভায় বিজেপির ৭০ জন বিধায়কের মধ্যে আট জন আদিবাসী সম্প্রদায়ের। তাঁদের মধ্যে এ বিষয়ে আলোচনাও হয়েছে। জুয়েল জানিয়েছেন, ‘আমরা আদিবাসী সম্প্রদায়ের। আমরা পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের হলেও, আমাদের সম্মান রয়েছে। সেই আদিবাসী সম্প্রদায়ের রমণী রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে যেভাবে আক্রমণ করা হয়েছে তার নিন্দা জানানোর ভাষা নেই। আমরা বিরোধী দলনেতার কাছে আবেদন জানাব, যাতে আগামী বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনে অখিল গিরির বিরুদ্ধে বিধানসভায় বিজেপি পরিষদীয় দলের তরফে নিন্দা প্রস্তাব আনা হয়।’ এই বিষয়ে বিজেপির পরিষদীয় দলের মুখ্য সচেতক মনোজ টিগ্গা জানিয়েছেন, ‘অখিলবাবু যে ভাষায় রাষ্ট্রপতিকে অপমান করেছেন, তাতে দেশ তাঁর বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছে। তাঁর কুশপুত্তলিকা দাহ হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে অবশ্যই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুদার সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেব।’