নিজস্ব প্রতিনিধি: সম্মেলনের শুরুর দিন নিজ ভাষণের শেষে তিনি অনুরোধ করেছিলেন রাজ্যপালকে। সেই অনুরোধ ছিল এ রাজ্যে বিনিয়োগ করার জন্য শিল্পপতিদের যাতে কেন্দ্রীয় এজেন্সির তদন্তের মুখে পড়তে না হয় সেটা য্বেন তিনি দেখেন। আর সম্মেলনের শেষ দিন তিনি বার্তা দিলেন সরাসরি দেশের শাসক দল সহ সামগ্রিক ভাবে গেরুয়া শিবিরকে, ‘বাংলা বুলডোজারে নয়, ঐক্যে বিশ্বাস রাখে। আমরা বুলডোজ চাই না। মানুষে মানুষে বিভেদ চাই না। আমি চাই সবাই একসঙ্গে থাকুক। একতাই আমাদের আসল শক্তি।’ তিনি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। ষষ্ঠ বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের(bengal Global Business Summit) শেষ দিনে বিদায় ভাষণ দিতে মঞ্চে দাঁড়িয়ে দৃপ্তকন্ঠে মুখ্যমন্ত্রী একরকম তীব্র প্রতিবাদ জানেলেন কেন্দ্রের শাসক দলের বুলডোজার নীতি নিয়ে।
মোদি জমানায় দেশের নানা প্রান্তে বিশেষ করে বিজেপি(BJP) শাসিত রাজ্যগুলিতে দেখা যাচ্ছে কথায় কথায় বুলডোজার চালিয়ে ভেঙে দেওয়া হচ্ছে সাধারন মানুষের ঘরবাড়ি, দোকান, রেস্টুরেন্ট মায় চায়ের দোকানও। ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে গুমটি দোকানও। এই বুলডোজার নীতির সব থেকে বেশি শিকার হচ্ছেন দেশের সংখ্যালঘু সমাজের মানুষেরা। কার্যত বেশ কিছু ক্ষেত্রে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে সংখ্যালঘু সমাজকে আর্থসামাজিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করতে, তাঁদের বেঁচে থাকা দূরহ করে তোলার লক্ষ্য নিয়েই বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে বুল্ডোজার চালানো হচ্ছে। দিল্লির জাহাঙ্গিরপুরা সেই বুলডোজার নীতির সর্বশেষ নিদর্শন যেখানে সুপ্রিম কোর্ট হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হয়েছে। এবার মোদি সরকার ও গেরুয়া শিবিরের সামগ্রিক বুলডোজার নীতি নিয়ে সরব হলেন মমতা। আর তার জন্য তিনি বেছে নিলেন বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের মঞ্চকেই। কোনও দলের, কোনও নেতার, কোনও মন্ত্রীর নাম না নিয়েই তিনি বুলডোজার নীতি নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানালেন। সঙ্গে দিলেন সম্প্রীতির বার্তা। বুঝিয়ে দিলেন শিল্পবাণিজ্যের উন্নয়নে এই সম্প্রীতি কতখানি প্রয়োজন।
এদিন মমতা বলেন, ‘বাংলার লক্ষ্য শিল্প। তাই শিল্প আনতে সবরকম সাহায্য করতে প্রস্তুত রাজ্য সরকার। আমি রাজ্যকে এমন এক জায়গায় নিয়ে যেতে চাই, যেখানে অন্য রাজ্যগুলি বাংলাকে ছুঁতেও পারবে না। আপনারা নিশ্চিন্তে এ রাজ্যে শিল্প স্থাপন করতে আসুন। কেউ কোনও বাধা সৃষ্টি করবে না। বাংলার মাটি দেশের মধ্যে সব থেকে নিশ্চিন্ত-নিরাপদ। এ রাজ্যে কোনও বনধ নেই। হরতাল নেই। কর্ম দিবস নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা নেই। কোনও কোনও রাজনৈতিক দল অকারণে বাংলাকে বদনাম করার চেষ্টা করছে। এটা ঘৃণ্য রাজনীতি। বাংলা বুলডোজারে নয়, ঐক্যে বিশ্বাস রাখে। আমরা বুলডোজ চাই না। মানুষে মানুষে বিভেদ চাই না। আমি চাই সবাই একসঙ্গে থাকুক। একতাই আমাদের আসল শক্তি। ঐক্যবদ্ধ থাকলে সংস্কৃতিও শক্তিশালী হয়। কিন্তু বিভেদ থাকলে সেটা হয় না। বিনিয়োগের আদর্শ ঠিকানা বাংলাই। ব্যবসা এবং লগ্নি করার ক্ষেত্রে অন্যান্য সব রাজ্যের থেকে এগিয়ে বাংলা। আপনারা নিশ্চয়ই স্থিতিশীলতা নিয়ে ভাবছেন? হ্যাঁ, বাংলা স্থিতিশীল। বাংলা সুরক্ষিত জায়গা।’
অর্থনীতিবিদ থেকে শিল্পপতি(Industrialists) সবাই মমতার এই বার্তা দেখে মনে করছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী কার্যত নাম না করেই প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, বিজেপি ও সংঘকে বার্তা দিলেন। সেই সঙ্গে বার্তা দিলেন দেশের সামগ্রিক সংখ্যালঘু সমাজকেও। কেননা গেরুয়া দাপটে তাঁরাই সব থেকে বিপন্ন। বুলডোজার নীতিতে তা৬রাই সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ। একই সঙ্গে কোনও রাজ্যে বিনিয়োগের আগে সেই রাজ্যের সামাজিক এবং রাজনৈতিক পরিবেশ কেমন, তা খতিয়ে দেখেন শিল্পপতিরা। আসলে, কোনওরকম রাজনৈতিক পরিবেশ অশান্ত হলে, সেই রাজ্যে বিনিয়োগ(Investment) ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। এদিন মমতা কার্যত বুঝিয়ে দিলেন বাংলা এখানেও বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির থেকে একদম আলাদা। তাই এখানে বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ নয়, বরঞ্চ তা অনেকটাই নিরাপদ।